পিতা হবার অনুভূতি
পিতা হবার অনুভূতি একেকজনের কাছে একেকরকম। হয়তো কারো কাছে তা আকাশের তারাকে হাতের মুঠোয় পাওয়া , হয়তোবা প্রচন্ড গরমে শীতল হাওয়ার মিস্টি মধুর প্রশান্তি। সম্ভবত পৃথিবীর কেউই এ স্বর্গীয় অনুভূতিকে লেখার ভাষায় প্রকাশ করতে পারে নি। আমার কাছে এ যেনো জীবনের আরেক অধ্যায়ের শুরু, হঠাতই বড় হয়ে যাওয়া।
বেশ ক মাস আগের কথা। টুকটাক বাজার – সদাইয়ে ব্যস্ত কাছের সুপার মার্কেটে। হঠাৎ বউয়ের ফোন " জলদি বাসা আসো "। পড়ি মরি করে বাসা আসতেই রহস্যময় হাসি, বউ বলে " বলতো কি ব্যপার ? " ।
এদিকে আমি টেনশনে অস্থির। "কোনো সমস্যা !"
"তুমি বাবা – আর আমি মা হতে যাচ্ছি।
আমি তব্দা মেরে গেলাম, আনন্দ-খুশি -স্বপ্ন মেশানো অন্যরকম এক অনুভূতি। তখন থেকেই টুকটুক করে প্রস্তুতি শুরু, হাসপাতালে রুটিন ভ্রমন – সন্তানের জন্য কেটা কাটা- প্যারেন্টিং ক্লাস ইত্যাদি ইত্যাদি। এটা সেটা করতে করতে রাজ্যের সব কেনা কাটা, তার পরো মনে হয় কি যেনো বাকি রয়ে গেলো।
তবে খুব কাছের স্বজন ও বন্ধুরা ছাড়া এ খবরটি কাউকে বলা হয়নি। তার পরো কিভাবে যেনো অনেকেই জেনে গেলো।
অস্ট্রেলিয়ার বসন্তে নাকি সন্তান বেশী জন্মায়। কি জানি বাপু কেনো !
হঠাৎ রাত ১১টার দিকে বউ বল্লো " হাসপাতালে যেতে হবে " , পড়ি মরি করে হাসপাতালের দিকে ছুট লাগালাম। সব কিছু পরীক্ষা করে মিডওয়াইফ ( ধাত্রী ) বলে দেরী আছে। কি আর করা, বাড়ী ফেরত আসতে হলো। এভাবে পর পর ৩ রাতে ৩ বার হাসপাতালের দিকে যাবার পর চতুর্থবারের মতো মিডওয়াইফ সবুজ বাতি দেখালেন, এবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া যাবে।
০৮ অক্টোবর ২০০৮। দূপুরের খাবার সেরে সিগারেট মাত্র ধরিয়েছি তখনই হাসপাতাল থেকে ফোন। " তোমার বউ তোমাকে কাছে পেতে চায় "। ছুটে ডেলিভারী রুমে যাবার কিছুক্ষন পরেই আমার ছেলের জন্ম হলো, সময় তখন দূপুর ২:২৬। সব কিছুই আমার চোখের সামনে। সে এক অন্যরকম অনুভূতি। আমি কাঁদছি – মিডওয়াইফ বলছেন " মাহবুব, কাঁদো- এরকম কান্নার জীবনে খুব কমই কাঁদতে হয়" । সন্তানের নাড়ি কাটার পর ছেলেকে মায়ের কাছে তুলে দিয়ে এক ছুটে বাহিরে এসে সবাইকে ফোন ;
" আম্মু আমি বাবা হয়েছি "
" প্রিন্স তুমি চাচ্চু হয়েছো "
" মামা তুমিতো নানা হয়ে গেলে "
" বস আপনেতো চাচ্চু হয়া গেলেন "
পাশ দিয়ে যারাই যাচ্ছে তারা হয়তো অবাক হয়ে তাকিয়ে ভাবছিলো, ব্যাটা পাগল হয়ে গেলো নাকি ! ব্যটা কাঁদে কেনো ?
ছেলের কানে কানে আজান দিয়ে বল্লাম " বাবালু, অনেক বড় মানুষ হও, অনেককক বড়"।
ক্যানবেরার এক বড় ভাই বল্লেন " ওয়েলকাম টু ফাদার্স ক্লাব ", তাই তো ! বাবা হয়ে গেলাম। সত্যি ? বিশ্বেষ হয় না।
আরিফ ভাই প্রশ্ন করলেন " সুমন, অনুভূতি কেমন?"। কঠিন, অনুভূতিটা প্রকাশ করে আসলেই কঠিন।
জীবনের আরেক স্বপ্নযাত্রা সবে শুরু হলো। অনেক দ্বায়িত্ব।