সংস্কারপন্থীদেরকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা উচিত -ফরিদ আহমেদ

সংস্কারপন্থীদেরকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা উচিত -ফরিদ আহমেদ

সম্প্রতিককালে কতকগুলি ঘটনা আবার আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে যা দেশের ও জাতির জন্য অমঙ্গল হয়ে দেখা দিতে পারে। সমগ্র জাতি আমাদের রাজনীতিতে অসামান্য অবদান রাখবার জন্য একটি মহাৎ ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছে দুই নেত্রীর উপর। আর তাহল: তাঁরা তাদের প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কার চালু করবেন যা বাংলাদেশকে হাজার বছর এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। তাঁদের উভয়ের কাছে একটিই দাবী: দলের সংস্কার করা যা মেধা ও যোগ্যতাকে মূল্যায়ন করবে। এই দাবীকে যারা জোরালোভাবে সমর্থন করেছেন তাঁদের অনেকেই সামাজিক ও শারীরিকভাবে নিগ্রিহীত হচ্ছেন বলে সংবাদ আসছে। নেত্রীর দেখা পাওয়ার জন্য কানাড, লন্ডন বা বেলজিয়ামও ছুটছেন। এবং এই দাবিটিকে উপেক্ষা করা হচ্ছে সুকৌশলে তৃণমূল পর্যায়কে গুরুত্ব দিয়ে।

একজন অসৎ রাজনীতিবিদ বা ব্যবসায়ী তৃণমুল পর্যায়ের নেতৃত্বকে অর্থ বা অস্ত্র দিয়ে কিনে রেখেছেন। তারাই মেধাবী রাজনীতিবিদদেরকে বিতাড়িত করেছে যুগের পর যুগ। অন্যায় করে লুট করে নিজের এলাকার দরিদ্রদেরকে বখরা দিয়ে অনেকেই এলাকায় জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। তাদের মাইনাস একটি জাতীয় দাবি। সেই দাবিকে উপেক্ষা করার চেষ্টা চলছে আবার। আর তাই একশ্রেনীর রাজনীতিবিদ সরল গাণিতিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে পরামর্শ দিচ্ছেন। সস্তা জনপ্রিয়তা কেবল কালো ও পেশী শক্তির রাজনীতিকে প্রসারিত করবে এবং নির্বাচন বানিজ্যকে সুক্ষভাবে সম্পন্ন করতে পথ দেখিয়ে দেবে। ২২ জানুযারীর মনোনয়ন ছিল স্থুল বানিজ্যকরণ, ১৮ ডিসেম্বর এর নির্বাচন হবে সুক্ষè বানিজ্যকরণ।

আমি মনে করি যারা সংস্কার চেয়েছেন তাদেরকে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত। তবে এর অর্থ এই নয় যে আমি মাইনাস ফর্মুলার সমর্থনকারীদের পক্ষ অবলম্বন করছি। মাইনাস ও সংস্কার এক নয়। যারা নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় সংস্কারের লেবাসে মাইনাস চিন্তা করেছেন তাদের যদি দুই নেত্রী মাইনাস করেন তবে কারোও আপওি থাকবে না। কারণ তাঁরা রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন চাননি। বরং, একটি সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেরা লুটপাট করতে চেয়েছেন। দুই নেত্রী খুব ভাল করেই জানেন কে কতটুকু লুটপাট করেছেন। কে এবং কারা তারেক রহমানকে বিপথগামী করেছেন। তাঁরা যদি ঐসব র্দূনীতিবাজ-সন্ত্রসীদেরকে দল থেকে বিতাড়িত করেন বা আগামী নির্বাচনে কোন মনোনয়ন না দেন তবেই হবে সেরা কাজ। তাতে জনগণের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসবে। অপরদিকে যদি সৎ ও যোগ্য নেতাকে কেবল সমালোচনা করা বা মান্নান ভুইয়া যেমন একটি শক্ত মন্তব্য করেছেন বেগম জিয়া পরিবার সম্পর্কে যে “র্দূগন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে” বলার জন্য কারোও প্রতি আক্রমণ করা হয় তাহলে সেটা বিজ্ঞতার পরিচয় বহন করবে না।

বরং, দুই নেত্রীর প্রয়োজন এখন সংযত হওয়া ও কোন উসকানিতে বিভ্রান্ত না হয়ে বা তাদেরকে মাইনাস করতে চেয়েছে বলে এক হাত দেখে নেব মনোভাব এর প্রতিফলন ঘটানো সুফল বয়ে আনবে না।

সংস্কার চিন্তা একটি জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক এজেন্ডা। সেটির লক্ষ্য সমাজে যাতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সেই পথ অনুসরণ করা। অতীতে রাজনৈতিক সংকীর্ণতার কারণে অনেক মেধাবী সরকারী ও সামরিক কর্মকর্তা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অনেক সৎ ব্যবসায়ী ব্যাবসা পাননি বা হয়রানির শিকার হয়েছেন। অনেক রাজনৈতিক কর্মী নিপীড়নের শিকার হয়েছে সন্ত্রাসী ও দলীয় সংকীর্ণমনাদের দ্বারা। আজ আবার তাঁদেরকে কোণ ঠাসা করার চেষ্টা চলছে তৃণমুলকে প্রথম সারিতে নিয়ে আসার কথা বলে ও প্রশাসন দলীয়করণ হয়েছে অভিযোগ তুলে। এতে করে মেধাহীন রাজনীতি প্রসারিত হবে এবং সংস্কার চিন্তা পর্যয়বসিত হবে অর্থহীন। এতে করে ন্যায় অন্ধকার গলিতে হোঁচট খাবে।

সংস্কার চিন্তাকে স্বাগত জানিয়ে বরং আমাদের এগিয়ে য

াওয়া উচিত। এবার উপজেলা নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সুতবাং, সংসদকে পরিণত করতে হবে মেধাবীদের বুদ্ধি চর্চার স্থান। এটি একটি আইন পরিষদ। এখানে তৃণমুল প্রাধন্য পেলে ন্যায় ভুলুন্ঠিত হবে। বরং, উপজেলা নির্বাচনে তৃণমুল নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া উচিত।

অপরদিকে যারা আইনজীবী ও বিচারকদেরকে টার্গেট করছেন তাদেরও উচিত কিভাবে বিচারব্যবস্থায় সংস্কার এনে যুক্তির দিয়ে অন্যায়কে পরাস্থ করা যায়। সন্ত্রাস দিয়ে সন্ত্রাসকে মোকাবেলা না করে যুক্তি প্রয়োগের পথে চলতে হবে। রাজনীতিতে গুণগুণ পরিবর্তন আনতে হলে সেটিকে অর্থাৎ রাজনৈতিক অঙ্গনকে যুক্তির আলোকে আলোকিত করতে হবে।

লেখক: ন্যায় ও সুশাসন গবেষক মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment