প্যারিসের চিঠি – ৪ ওয়াসিম খান পলাশ
আটলান্টিকের পাড়ে ফ্রান্সের নরমন্ডির একটি শহর।
জুলাই মাসে প্যারিসে পিকনিকের হিড়িক পড়ে যায়। এমনিতেই সামারের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা। যেন তর সইতে চায়না । যারা পিকনিকের আয়োজক আর যারা যাবেন উভয়েই সিরিয়াস। এখানে বিভিন্ন এসোসিয়েশন পিকনিকের আয়োজন করে থাকে । কথা সাহিত্য ও সাংকৃতিক গোষ্ঠী, উদীচি,আমার সোনার বাংলা, বিভিন্ন আঞ্চলিক সমিতি ও রাজনৈতিক দলের শাখা গুলো পিকনিকের আয়োজন করে থাকে। এখন বাংলাদেশী দোকানগুলোতে বিভিন্ন আয়োজকদের লিফলেটের ছড়াছড়ি। এছাড়া টেলিফোন করেও অনেকে কনফার্ম করে নিচ্ছেন।
এখানকার বাংলাদেশীরা পিকনিকের জন্য বেছে নেন আটলান্টিকের তীরবর্তী নর্মন্ডি অঞ্চলকে। এখান থেকেই আটলান্টিক মহাসাগর শুরু। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্যবর্তী আটলান্টিকের এই অংশটিকে বলা হয় ইংলিশ চ্যানেল। আমাদের গর্বিত সাতারু ব্রজেন দাশ সাতার কেটে এই ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছিলেন। আজ আটলান্টিকের এই ইংলিশ চ্যানেলের ট্যানেলের মধ্য দিয়ে প্যারিস – লন্ডন ইউরো ষ্টার ট্রেন চলাচল করছে। নরমন্ডির দ্বোবিল, থ্রোবিল, ক্য, ওয়িস্তিওতে পিকনিক পার্টিরা বেশী আসেন। প্যারিস থেকে প্রায় ৩ ঘন্টার পথ এই পিকনিক স্পটগুলো। তবে সামারের Week End গুলোতে জ্যাম থাকে বলে যেতে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা লেগে যায়। তারপরও বিরক্ত আসে না বিন্দুমাত্র। চল না ঘুরে আসি অজানাতে, যেখানে নদী এসে থেমে গেছে – লাকি আকন্দের গাওয়া বিখ্যাত গানটি মনে করিয়ে দেয় সবাইকে। যাত্রাপথ ৩ ঘন্টার হওয়াতে সকালের নাস্তাটা গাড়িতেই সেরে ফেলতে হয়।যারা স্বপ রিবারে আসেন্,সাথে ছোট ছোট বাচ্চা থাকে তাদের প্রস্তুতিটা একটু বেশী থাকে। আর যারা আটলান্টের পানিতে গা ভিজাতে বা গোসল করতে অথবা সাতার কাটতে চান সাথে নিয়ে আসেন মায়ওবা।
অনেক সংগঠন আবার জাহাজ ভাড়া করে পিকনিক করে থাকে। সেইন নদীতে প্রমোদতরী করে বেড়ানো আর দুপাশ্বের প্যারিসের সৌন্দর্য উপভোগ করা । এছাড়া এধরনের পিকনিকের মুল আনন্দ ষ্টেজ প্রোগ্রাম।ষ্টেজে সাংকৃতিক অনুষ্ঠান, আবৃতি,বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা ও অংশগ্রহনকারীদের পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকে।
এছাড়া অনেকগুলো পরিবার একসাথে হওয়ার সুযোগ পায়।
আবার যারা দুরের কোন শহরে থাকেন, বাংলাদেশ কমিউনিটি থেকে আনেকটা বিচ্ছিন্ন তারা নিজেদের গাড়ি নিয়েই স্বপরিবারে চলে যান পিকনিকে।
আমাদের দেশে যেমন পিকনিক স্পটে গিয়ে রান্না-বান্না করা হয় এখানে ঠিক তেমনটা নয়। এখানে বাইরে রান্না-বান্না করা সম্পুর্ন নিষিদ্ধ। তাই পিকনিক পার্টি গুলোকে রান্না করে নিয়ে যেতে হয়। এখানকার বাংলাদেশী ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেণ্টগুলো থেকেই সাধারনত খাবার রান্না করে নেয়া হয়।
প্রবাসে হলেও পুরো সময়টাতেই একটা বাংলাদেশ বাংলাদেশ পরিবেশ বজায় থাকে। সার্বক্ষনিক বাংলা গান, দেশীয় আমেজে সাংকৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, সর্বপরি হৈ চৈ করে সময়টা কেটে যায়। তরুন –তরুনী, ছেলে-মেয়ে ও তাদের সন্তানরা স্বতফুর্ত ভাবে এগুলোতে অংশগ্রহন করে থাকে। আয়োজকরা বিভিন্ন ইভেন্টে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নারী-পুরুষ, ছোট ছেলে-মেয়েদের পুরস্কৃত করে থাকে। একটি দিনের জন্য হলেও সবাই চলে যান নিজের মাতৃভূমিতে। অনেকে আবার হারিয়ে যান সোনালী অতীতে। রোমত্থন করেন পুরনো কোন স্মৃতি, হয়তো মনে পড়ে মা-বাবা, ভাই-বোনের সাথে কোন স্মৃতি বা ছোটবেলার খেলার বন্ধুদের নয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন আড্ডা। কেউ একজন হয়তো গেয়েই ফেললেন— কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই, কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী দিনগুলো সেই ——————————-
প্যারিস – ০৮-০৭-০৮ চলবে ———-