জাতীয় সংগীতে বাংলাদেশের রৌপ্য : ওয়াসিম খান পলাশ প্যারিস থেকে
এইতো কদিন আগে বেইজিং অলিম্পিয়াড ভেন্যুতে পৃথিবীর দেশগুলোর জাতীয় সংগীত প্রতিযোগীতায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। বেইজিং অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ কোন পদক না পেলেও জাতীয় সংগীত প্রতিযোগীতায় রৌপ্য পদক পেয়েছে বাংলাদেশ। সুর ও সংগীতের বিবেচনায় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতকে এই মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
পৃথিবীর মানচিত্রে অত্যন্ত ক্ষুদ্র এই দেশটি ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভ করে। এ জাতির গর্বিত ইতিহাস আরও পুরনো। পৃথিবীতে একমাত্র জাতি যারা মায়ের ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী সালাম, বরকত, রফিক, জাব্বাররা জীবন দিয়ে রক্ষা করেছে বাংলা ভাষাকে। কিন্তু স্বাধীনতার পরপরই রচিত হয়েছে কালো অধ্যায়। দেশ চলে গেছে স্বৈরশাসকদের হাতে। রাজনৈতিক রেষারেষি, আন্দোলন, হরতাল, এছাড়া খুন, ছিনতাই-রাহাজানি সাধারন মানুষের জীবন অতিষ্ট করে তুলেছে। দুর্নীতিতে প্রথম হয়েছে কয়েকবার, শিক্ষিত যুব সমাজের বিশাল একটি অংশ বেকার। প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই আছে। রয়েছে ভুমিকম্পের সম্ভবনা।
অধিকাংশের ধারনা, ধর্মভীরু এই মানুষদের বোধ হয় সৃষ্টি কর্তাই বাচিয়ে রেখেছে। ছোট্ট একটি দেশে ১৫ কোটি জন সংখ্যা নিয়ে ঠাসাঠাসি অবস্থা। বিদেশিরা বিশ্বাসই করতে চান না ছোট্ট একটি দেশে এত জন সংখ্যার বাস।
এত প্রতিকুলতার মধ্যেও ছিটে ফাটা কিছু সাফল্য আমাদের আশার আলো দেখায়। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা একদম শেষ হয়ে যাইনি। দাবাতে উপ মহাদেশের প্রথম গ্রান্ড মাষ্টার নিয়াজ মোর্শেদ আমাদের বাংলাদেশেরই সন্তান। আমরা পেয়েছি আরও তিনজন গ্রান্ডমাষ্টার – জিয়াউর রহমান, রিফাত বিন সাত্তার, এনামুল হোসেন রাজীব ও রাকীবকে। আমরা শুটিংয়েও আন্তর্জাতিক সাফল্য পেয়েছি। ক্রিকেট আমাদেরকে এনে দিয়েছে আরও বড় সাফল্য। আমরা আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের পূর্ন সদস্য পদ লাভ করেছি। বিশ্বের সেরা দেশগুলোর সাথে টেষ্ট ও ওয়ান্ডে খেলার সুযোগ পাচ্ছে আমাদের দেশ। এবছরই আমেরিকা প্রবাসী একজন বাংলাদেশী তরুন অস্কার জিতেছেন। পেশাগত দিক দিয়েও বাংলাদেশের ছেলেরা বিদেশে সুনাম অর্জন করছে। মাঝে মধ্যেই আমাদের ছেলেরা আন্তর্জাতিক সাফল্য নিয়ে আসছে।
আমাদের দেশে মেধার অভাব নেই। দেশের সর্বত্র, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য প্রতিভা। প্রয়োজন শুধু খুজে বের করে সুযোগ দেয়া। Close Up one এর মাধ্যমে আমরা পাচ্ছি সালমার মতো সংগীত শিল্পীদের।
ব্রিটেনের জনপ্রিয় দৈনিক গার্ডিয়ান এবারের বেইজিং অলিম্পিকে পৃথিবীর ২০৫ টি দেশের জাতীয় সংগীতের বিবেচনায় সেরা ১০ টি সংগীতের মধ্যে – আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি – দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাজানো ২০৫ টি জাতীয় সংগীতের মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতকে দ্বিতীয় স্থানে নির্বাচন করা হয়। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় উরুগুয়ের জাতীয় সংগীত তৃতীয় হয় তাজাকিস্তানের জাতীয় সংগীত। এছাড়াও সেরা ১০ এর তালিকায় রয়েছে – ডোমেনিকান রিপাবলিক, ভার্জিন আইল্যান্ড, সেনেগাল, নাইজেরিয়া, নেপাল ও জাপান।
আমাদের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি প্রথম বাঙালি যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভুষিত হয়েছিলেন। বাঙালি সাহিত্য ও সাংকৃতিতে তার অবদান ব্যাপক। রবীন্দ্রনাথ ছাড়া বাংলা সাহিত্য কল্পনা করা যায় না। তিনি বাংলা সাহিত্যের মহাপুরুষ। বাংলা গান ও সুরে তিনি এনে দিয়েছেন ভিন্ন ধারা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গত হয়েছেন। রেখে গেছেন তার কীর্তি। আজকের এই সন্মান আমরা তাকেই উতসর্গ করতে পারি।
প্যারিস ১৪-০৮-০৮ Polashsl@yahoo.fr