ক্যানবেরার খেরোখাতা ২ (originally written for somewhreinblog.net)
১
বাঙালীয় সময়জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন করাই মহা ভুল। রেলস্টেশনে বাবা মাকে জিগ্যেস করতে শুনেছি নটার ট্রেন কটায়। ভাবতে পারিনি এই ক্যাঙারুর দেশে এসেও একই প্রশ্ন করতে হবে।
গতকাল ১৩ বৈশাখে আমাদের এখানে বৈশাখী মেলা হলো। ডাউনআন্ডারের অন্যান্য শহরগুলোর তুলনায় আমাদের মেলা নাকি শিশু ! এবারের সিডনী বা মেলবোর্নের মেলার ছবিগুলো দেখে বুঝতে পারলাম শুধু শিশু বল্লে ভুল হবে, বলতে হবে দুগ্ধপোষ্য নবজাত শিশু।
কথা ছিলো সকাল এগারোটায় মেলা শুরু হবে। আমরা টোনা-টুনি যথারীতি হাজির ১১:০৫ টায়। যথারীতি ৫ মিনিট দেরী । ভেবেছিলাম দেরী হয়ে গেলো। ওমা !! অনুস্ঠান শুরুতো দূরের কথা খবরই নাই। হাতে গোনা কিছু মানুষ ভুঁড়ি ঊঁচিয়ে হাঁটা হাঁটি করছে। একজকে জিগ্যেস করলাম " ভাই, অনুস্ঠান না শুরু হইবার কথা ! অনুস্ঠান কি শেষ ? "। ভদ্রলোক এহেন বেকুবীয় প্রশ্নে চরম বিরক্তি প্রকাশ করে বল্লেন " অনুস্ঠান শুরু হইতে দেরী আছে, দ্যাখেন না ব্যানারই টাঙানো হয় নাই " । উচ্চারন শুনে মনে হোলো জনাবের আদিবাস বরিশাল।
২
অনুস্ঠান শুরু হলো যথারীতি দেরী করেই। জয়তু বাঙালীর সময়জ্ঞান।
উদ্ভোদক উনার বক্তৃতায়, সেদিকে নজর না দিয়ে আমরা ব্যস্ত স্টলে স্টলে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নাচ গানে ব্যস্ত আর আমরা ব্যস্ত খাবারে। বৈশ্য বাঙালী ডাউনআন্ডারেও ব্যস্ত বানিজ্যে। পিএইচডি ডিগ্রীধারী ব্যস্ত ঝালমুড়ি বানাতে, কৃষিবিজ্ঞানী ব্যস্ত চটপটি বানাতে। আর আমরা ব্যস্ত পেট পুজোয়। কি কি খেয়েছিলাম সেটার লিস্ট দিয়ে ফেলি এ যাত্রায়। জিলাপী, চমচম, সন্দেশ, চটপটি, ফুচকা, ঝাল-মুড়ি, ঘুঘনি, হালিম, লুচি-ভাজি, সিঙাড়া। প্রিয় কাচ্চি বিরিয়ানীকে এক স্টলে দেখে আগ্রহী হয়ে এগুতেই দেখি তা আসলে তেহারী। ব্যাটা কি আমাদের মফিজ পেয়েছে যে কাচ্চি দেখাতে গিয়ে হাইকোর্ট দেখাবে !
৩
সিডনী, মেলবোর্নের মেলা দেখে অনেক আগ্রহ নিয়ে ছিলাম শাড়ি পড়া বাঙালী ললনা দেখবো ( অবশ্যই বউয়ের চোখ বাঁচিয়ে )। শাড়ি পড়া ললনাদের দেখে মাকসুদ ভাইয়ের মতো চিৎকার করে গান গাইতে ইচ্ছে করছিলো " মেলায় যাইরে "। অতি অতিসংগত কারনে গান গাওয়া হয়নি( মৃত পুরুষের গান গাওয়ার অধিকার নেই)।
তবে একটা মজার বিষয় লক্ষ্য করেছি। সিডনীর মেয়েরা ক্যানবেরার মেয়েদের তুলনায় অনেক স্বাস্থ্যবতী। স্বাস্থ্য রহস্যটি বুঝতে পারলাম না।
৪
ফ্যাশন শো নামক এক আজব চিজ দেখে অবাক হয়েছি। আয়োজকদের মস্তিস্কের উর্বরতা সম্পর্কে নিসন্দেহ হয়েছি। উনাদের মাথায় কাঁঠালবিচি লাগালে আশা করি ২ দিনের মাঝেই গাছ গজাবে। বাংলার বৈশাখী মেলায় ফ্যাশন শো !! আজব।
৫
ক্যানবেরার বাঙলা স্কুলের ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের পারফরমেন্স দেখে আমি মুগ্ধ। রবিঠাকুরের "বীর পুরুষ " কবিতাটি অসাধারনভাবে উপস্থাপন করেছে বাচ্চাগুলো। এরাই আসলে প্রবাসে বাংলার সংস্কৃতি ধরে রাখবে। এদের নাচ, কবিতা আবৃতি, অসাধারন গান শুনে একবারো মনে হয়নি প্রবাসে বসে বৈশাখী মেলায় বসে আছি। সাবাস বাঙালী। বাচ্চাগুলোর বাবা-মাকে অনেক শ্রদ্ধা।
৬
অনুস্ঠানের শেষের দিকে ক্যানবেরার স্থানীয় সংগঠন ‘স্পন্দনের’ পরিবেশনায় যখন ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো…। " গান শুরু হোলো তখন প্রথমবারের মতো মনে হোলো বৈশাখ এসেছে ক্যানবেরায়। সময় হয়ে এসেছিলো চলে আসবার। ইচ্ছে ছিলো আরো অনেক সময় নিয়ে থাকবো, হলো না। নীড়ে ফেরার তাগিদ।
৭
দারুন একটি দিন গেলো। অন্যরকম। বাসায় আসার পথে একগাদা বাজার, সংসারী মানুষেরা যা করে আর কি। পদ্মার ঈলিশ থেকে শুরু করে মুড়ির মোয়া। যা হয় সব সময় আমার, আমের আচার কিনতে গিয়ে রসুনের আচার কিনে নিয়ে এসেছি। বউ রেগে টঙ। আমার নাকি চশমা অতিজরূরী।