খুনি ধরার ইচ্ছে নেই, সক্ষমতাও নেই
একের পর এক হত্যা: স্বজনদের ক্ষোভ : খুনি ধরার ইচ্ছে নেই, সক্ষমতাও নেই
শেখ সাবিহা আলম: একের পর এক কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে ভিন্নমতাবলম্বীদের। তাঁদের স্বজনেরা মনে করেন, বিচারহীনতার কারণে বন্ধ হচ্ছে না গুপ্তহত্যা। সবশেষ ২৫ এপ্রিল কলাবাগানে নিজের বাসায় খুন হন জুলহাজ মান্নান ও তাঁর বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয়। এই পটভূমিতে নিহত অভিজিৎ রায়ের বাবা অজয় রায় ও ফয়সল আরেফিন দীপনের বাবা আবুল কাসেম ফজলুল হক–এর সঙ্গে কথা বলেছেন শেখ সাবিহা আলম
প্রথম আলো: অভিজিৎ রায়ের খুনিদের কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। এ কথা বললেন ঢাকার পুলিশপ্রধান।
অজয় রায়: আমাদের সরকার, গোয়েন্দা বাহিনী একটা নিষ্ক্রিয়তার মধ্যে আছে। ওদের খুনি ধরার ইচ্ছে নেই, সক্ষমতাও নেই। প্রতিটি খুনের পর ওরা যেভাবে কথা বলছে, তাতে করে খুনিরা আশকারা পাচ্ছে। এত দিন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ বলে আসছিল, সাত-আটজন সন্দেহভাজনকে তারা রিমান্ডে নিয়েছে। ওরা বোধ হয় কিছু স্বীকার করেনি। পরে শুনলাম, প্রকৃত হত্যাকারী তিনজন। ডিবির ওই যে ছেলেটা, কী যেন নাম ওর, বলল, মূল খুনি তিনজন। আমরা নজরদারিতে রেখেছি। আমি জানতে চাইলাম, নজরদারির অর্থ কি গ্রেপ্তার? ভাবলাম, তদন্তের স্বার্থে কিছু বলছে না। আমি আমার আশঙ্কার কথা বললাম, ওরা পশ্চিমবঙ্গ বা ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যেতে পারে। ঠিকই তা-ই হলো। আজ এত দিন পর বলছে, ওরা পালিয়ে গেছে। তাহলে তোমরা এত দিন কী করেছ? পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন কিনা টার্গেটেড লোকজনকে সুরক্ষা দেওয়া কঠিন। সেই সংখ্যাটা নাকি আঠারো শ। আঠারো শ জনকে নিরাপত্তা না দিতে পারলে অন্তত প্রথম পঞ্চাশ জনকে দাও। সেটাও পারবে না। আমি মনে করি, পুলিশের মহাপরিদর্শক পদে থাকার নৈতিক কোনো অধিকার তাঁর নেই।
প্রথম আলো: পুলিশ ও প্রশাসন বলছে, জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আছে, গোয়েন্দা বাহিনী সফল।
অজয় রায়: আমি মোটেও একমত না। জঙ্গি তৎপরতা ঠেকাতে না পারাটা সরকারের চরম ব্যর্থতা। শুধু অর্থনৈতিক উন্নতির চিত্র তুলে ধরলেই হবে? গণতন্ত্র, সেক্যুলারিজম, ব্লগার হত্যার বিচার—এগুলো কিছুই না? এই যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খুন হলেন। একজন শান্তিপ্রিয় শিক্ষককে রক্ষা করতে পারল না। তারপর আবার পুলিশপ্রধান বলছেন নিজেদের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিজেদের নিশ্চিত করতে। তাহলে কি এখন আমরা নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলব? এগুলো তো উসকানিমূলক বক্তব্য। পুলিশের তো উচিত, যারা হুমকিতে আছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। গুরুত্বপূর্ণ ফোন নম্বরগুলো দিয়ে রাখা। যাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন, তাঁদেরকে চলাফেরার সময় সহযোগিতা দেওয়া। কেউ তো বলছে না, ষোলো কোটি মানুষকে এই সহায়তাটা সব সময় দেওয়া হোক। অল্প কজন মানুষকেও দেওয়া যাবে না?
প্রথম আলো: লেখক, প্রকাশকের পর কলাবাগানে সমকামী ও হিজড়াদের অধিকার নিয়ে প্রকাশিত পত্রিকার সম্পাদক খুন হলেন। হত্যাকাণ্ডের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।
অজয় রায়: আমাদের সমাজে সমকামীরা আছেন। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কেউ কেউ সমকামিতাকে নৈতিকতাবিরোধী ভাবতে পারেন। কিন্তু তাঁদেরকে কি খুন করে নিঃশেষ করতে হবে? কেউ খুন হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বলেন, তারা কী লিখেছে খুঁজে দেখতে হবে, তখন তো তিনি খুনটাকে জায়েজ করছেন। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। তাঁর উচিত এখনই বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেওয়া। যেখানে প্রধানমন্ত্রী নিজে বলছেন, ব্লগার হত্যার বিচার হবে, সেখানে তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কীভাবে এমন সাংঘর্ষিক বক্তব্য দেন?
প্রথম আলো: দেয়ালের এই পাশের সাদাকালো ছবিটা কার? দুটো ছবি একই রকম। সাদাকালো আর রঙিন দুটোই অভিজিৎ রায়ের?
অজয় রায়: নাহ্। সাদাকালোটা আমার। আর ওই যে রঙিন, ওটা অভিজিতের। একই রকম দেখতে লাগলেও একটা পার্থক্য আছে। আমার চোখে চশমা আছে, অভিজিতের নেই। ওর চলে যাওয়ায় আমরা শোকাহত। আমি নির্ভীক, শক্ত মনের মানুষ। কিন্তু ওর মা ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছে। গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি অভি বাসায় টেলিফোন করল। বলল, বাবা আমি দেশে আসতে চাই। তিন বছর আসি না। মাকে দেখতে ইচ্ছে হয়। আমি আসতে মানা করলাম। বললাম, তুমি নিজেই দেখেছ, ফেসবুকে ওরা বলছে, তোমাকে আমেরিকায় গিয়ে মারতে পারবে না, কিন্তু বাংলাদেশে আসলে আর ফিরতে দেবে না। এখন এসো না। ছেলেটা কথা শুনল না। ১৬ তারিখ ফোন করে জানাল, ও দেশে চলে এসেছে। আমি বললাম, এসেই যখন পড়েছ, আমি জানি, তুমি বইমেলায় যাবেই। দয়া করে সূর্য ডোবার আগে বাড়িতে চলে আসবে। বন্যাকেও বললাম। বন্যা বলল, ও কি আর আমার কথা শোনে? ২৪ তারিখ আমি সব আত্মীয়স্বজনকে বাড়িতে ডাকলাম অভির দেশে আসা উপলক্ষে, একসঙ্গে সবাই খাওয়াদাওয়া করলাম। ওই শেষ। দুদিন পরই তো খুন হলো। তাও রাত সাড়ে নয়টায়। সন্ধ্যার পর আড্ডা দিচ্ছিল। কতবার বলেছিলাম, তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরো। কথা শুনল না। যাক…। তুমি কোথায় যাবে এরপর?
প্রথম আলো: আবুল কাসেম ফজলুল হক স্যারের কাছে।
অজয় রায়: ওহ্। আরেক বিপর্যস্ত মানুষের কাছে? ঠিক আছে তাহলে। ভালো থেকো তোমরা সবাই।
অজয় রায়
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
original source: http://www.prothom-alo.com
Related Articles
Australian election: Kevin Rudd's triumph and Bangladesh context
The Labour Party has won an historic landslide in Australia’s general election on Saturday, defeating incumbent Prime Minister John Howard’s
Shahadat six-for stuns South Africa: Bangladesh 192 125/4 (48.0 ov) lead by 147 runs with 6 wickets remaining
Shahadat Hossain was the bowling hero as Bangladesh gained a valuable 22-run lead but Dale Steyn produced another superb new-ball
Wasfia becomes first Bangladeshi to scale seven summits
No mountain is high enough for Wasfia Nazreen, who became the first Bangladeshi to climb all seven highest peaks in