ধর্মের নামে দেশ বেচে দেয়া পশুগুলার নাটক

ধর্মের নামে দেশ বেচে দেয়া পশুগুলার নাটক

হরতালের নামে মানুষ মারা গিললাম। ধর্মের নামে দেশ বেচে দেয়া পশুগুলার নাটক গিলতেসি। ডিলিউশনাল ফ্যানাটিক দের জালায় সব শান্তিপ্রিয় (প্রকৃত) মুসলিম এর নাম খারাপ হয়ে গেলো, সেটাও দেশে-বিদেশে বসে বুকে পাথর নিয়ে দেখতেসি। বিবেকটা আসলে অবশ হয়ে যাচ্ছে। দুদিন পরে কোনকিছুই মনেহয় আর গায়ে লাগবেনা। সেটাই ভাবসিলাম। আর পারলাম না।

এরা কি মানুষ? ডিসকভারি চ্যানেলে যেসব হায়না দেখি, এগুলাও তো এমন করেনা। ক্যান ভাই? কেন আমার আপনাকে জিজ্ঞেস করতে হবে এখানে আপনার মা-বোন হলে কেমন লাগতো? শুধু আপনার মা-বোন ই যদি আপনার মাথাব্যাথা হয় তাহলে তো বিপদ। অন্যদের মা-বোন তো আপনার সামনে সেইফ না! ৭১ এর বীর রা যদি আজকে শুধু নিজের মা-বোন কে বাচানোর জন্য যুদ্ধ করত তাহলে তো বটি নিয়ে বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে থাকতো হানাদার আসার অপেক্ষায়। সবকিছু ছেড়ে স্টেনগান নিয়ে গেঞ্জি-লুঙ্গি পড়ে রাস্তায় নামতো না। এটা বাংলাদেশ ও হতো না। আর আপনিই বা আজকে কই থাকতেন কে জানে!

খুব বেশিদিন আগের কথা না। আমরা নববর্ষে পান্তা-ঈলিশ খেতাম, বিজয় দিবসে পতাকা ওড়াতাম, শহীদ মিনারে ফুল দিতাম, নামাজ-রোজা করতাম, আস্তিক-নাস্তিক, মুসলিম-অমুসলিম সবাই একসাথে পড়াশোনা, কাজ, গল্প, খেলা সবই করতাম। বাংলাদেশে সব ধর্মের, সব গোত্রের, সব চিন্তার মানুষের যায়গা ছিল। মতের অমিল ছিলনা তা না, কিন্তু মতপার্থক্য থেকে কখনো প্রকাশ্যে গালাগালি-হাতাহাতি হতোনা, হত্যা-রাহাজানি তো দুরের কথা। মতের পার্থক্য মনের মধ্যে রেখেই আমরা সবাই কাধে কাধ মিলিয়ে চলাফেরা করতাম, একে অন্যের পাশে থাকতাম। সেই “গোল্ডেন এইজ” এর কথা কি কারো মনে নাই? আমাদের মত এত সামাজিক সুন্দর মিশুক জাতি কিনা আজকে এতো ছোট ছোট বিষয়ে এতো বেশি বিভক্ত?!

আমি আমার ধর্মে বিশ্বাস করি। আমারও হিজাবি-নামাজী মহিলা দেখলে মনে শ্রদ্ধা আসে। তাই বলে কি “নাভি’র নিচে” শাড়ী পড়া কাউকে দেখলে আমি ঝাঁপিয়ে পড়বো? নাকি কেউ ঝাঁপিয়ে পড়লে হাততালি দিয়ে বলব “উচিত হইসে!” সেলফ-প্রোক্লেইমড্‌ ফেসবুক-মুফতীদের উদ্দেশ্যে বলছি … আপনার কি মনে হয় রাসুলুল্লাহ্‌ (সাঃ) আপনার যায়গায় থাকলে একটা পশুর থেকে বেপর্দা নারী কে অনতিবিলম্বে উদ্ধার না করে বলে বেড়াতেন “উচিত হইসে”?? (নাউযুবিউল্লাহ্‌), যারা সেদিন লাঞ্ছিত হলেন, তাদের মধ্যে দুই বাচ্চার মা ও আছেন, হিজাবী ও আছেন। আপনার ভিতরের পশুটার যদি একজন নারীর পর্দার আড়ালে আশ্রয় প্রয়োজন হয়, নিজের কন্ট্রোল নিজের হাতে না থাকে, তাইলে দয়া কইরা নিজের মনগড়া ধর্মের সুবিধাবাদী ফতোয়া নিজের মধ্যে রাখেন!

এটা ধর্মের বিষয় না, সংস্কৃতির ও না, ঢাকা ইউনিভার্সিটির ও না। বিষয় টা হলো মানুষের দেশে খাঁটি অমানুষের ঘাঁটি বড় হচ্ছে। এরা কখনো ধর্ম কে ঢাল-তলোয়ার বানাবে, কখনো রাজনৈতিক প্রভাব কে বানাবে তাদের গুলি, আর এক এক করে আমার আপনার মতো শান্তিপ্রিয় মানুষ গুলোকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলবে। ফালতু কথায় কান দিয়ে প্লিজ মূল বিষয় থেকে সরে যাবেন না। অমানুষের কোন দেশ, ধর্ম, পার্টি, লেবাস ইত্যাদি নেই। এদের শুধু আছে মনের মধ্যে পশুত্ব। একটু আগে একাত্তর টিভিতে দেখানো টিএসসির ফুটেজ সেটা আবারও প্রমান করলো।

রাস্তাঘাটে আমাদের নিজেদের বেসিক সিকিউরিটি যদি নিজেদেরই নিশ্চিত করা লাগে তাহলে সরকার, বিরোধী দল, বাকি সব দল, প্রক্টর-পুলিশ-প্রশাসন … সো-কলড্‌ জনগনের কল্যাণ, জানমালের নিরাপত্তার দায় যাদের হাতে, তাদের কি বসে বসে ঘাস খাওয়া আর মিডিয়া তে আতলামি-ফাত্রামি কথা বলার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে?! ক্যান ভাই? আমার ই যদি সব করে নিতে হয় আমার প্রতিনিধির দরকার কি?!

আরেকবার রাজপথে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করে দাবি ওঠানো যায়না? ‘৭১ এর পিশাচের বিচারের দাবির জন্য যদি পারি, ২০১৫ এর পিশাচগুলোর বিচারের দাবিতে কেন নয়? কয়েক দশক আগের ঘটে যাওয়া খুন-ধর্ষণ এর বিচার চেয়ে যদি এতো বড় জনসম্মেলন হতে পারে, তাহলে ক’দিন আগে স্বাধীন দেশে স্বাধীন মানুষের সাথে ঘটে যাওয়া এতো বড় একটা গণনির্যাতন এর বিচার চেয়ে তো আরও বড় একটা হুঙ্কার-ডাকা জনস্রোত এর সম্মেলন হওয়া উচিত! যদি সেটা না হয়, তাহলে তা কি প্রমান করে, সেটা ভাষায় প্রকাশ করার চেষ্টাও একটা আত্মনির্যাতনের মত হবে।

সকল বড়-ছোট রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক দলের এবার এই একটা উদ্দেশ্যে এক হতে পারেনা? প্রকাশ্যে, জনসম্মুখে, সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সাথে … অন্তত এবার… অন্তত একবার … আমাদের প্রতিনিধিদের বিবেকবান ক্ষুদ্র একাংশ কি শুধু একবার ঐক্যবদ্ধ হতে পারবেনা? নাকি তাদের ভেতরের মতপার্থক্য সাধারন জনগনের জীবনের চাইতেও বেশী গুরুত্বপূর্ণ? আবারও কিছু সাহসী তরুণ কিছুদিন একা একা গর্জন ছেড়ে সমর্থনের অভাবে এক বুক কষ্ট নিয়ে ঘরে ফিরবে?

যারা এখনো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল দেখতে পান, তারা বোকার রাজ্যে স্বপ্নে বিভোর।
দেশ যেদিকে যাচ্ছে, যদি যেতে দেই, তাহলে কিভাবে স্বপ্ন দেখতে হয়, সেটাও একদিন আমরা ভুলে যাব।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment