অন্য রমক ভালবাসা

অন্য রমক ভালবাসা

কৃষাণু একটা ক্ষ্যাপা ছেলের নাম । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। রাষ্ট্র বিজ্ঞানের । সেই সুত্রে রাষ্ট্র কে কলঙ্কমুক্ত করার নেশার ভুত চেপেছে কৃষাণুর মাথায়। দেশ কে কি ভাবে কত উপায়ে ভালবাসা যায়? কি ভাবে দুর্নীতি দুঃশাসন থেকে দেশ কে রক্ষা করা যায় ?সারাদিন মাথায় এইগুলিই চরকির মত ঘুরতে থাকে । বইর সাথে দেখা হয় খুব কম তবে নিয়মিত পাস করে যায়।

কোন মেয়ের চেয়ে হকি স্টিক ই তার প্রিয়। তেমনি ঠোঁটের চেয়ে সিগারেট । কোন মেয়ের সাথে সময় কাটানো তার ভাষায় স্থুল চিন্তা, তাই কৃষাণুর মাথায় এইসব নেই । সে মেয়েদের থেকে ট্রাকের পিছনের লিখার মত একশ হাত দূরে থাকুন এই নিয়ম মেনে চলে। কিন্তু মেয়েরা কোন নিয়ম মানে না । তারা তো আর দেশ উদ্ধারে নামেনি। বা জীবন বাজি রাখেনি দেশ উদ্ধার করবে বলে। ওরা বিবিধ ঊপায়ে চেষ্টা করে কৃষাণুর মন পাওয়ার জন্য ।

পাঁচফিট এগার ইঞ্চি, উজ্জ্বল শ্যামলা , মাথা ভর্তি কোঁকড়ানো চুল, ডাগর আঁখির অধিকারী বেপরুয়া মারদাঙ্গা ছেলেদের অবুঝ মেয়েরা না বুঝে একটু বেশীই ভালবেসে ফেলে।কিন্তু কৃষাণুর মেয়েদের পিছনে সময় নষ্ট করার সময় নেই। তার মাথায় বাসা বেঁধেছে দেশ উদ্ধারের পোকা । সব অনিয়মকে নিয়ম করার নেশায় চেপেছে । স্বপ্ন দেখে কৃষাণু দেশটা সত্যিকারের সোনারবাংলা হবে। মুক্তি যুদ্ধের সময় জন্ম হয়নি তাই সম্মুখ যুদ্ধে যেতে পারেনি । তাতে কি হয়েছে এখন সে দেশের জন্য যুদ্ধ করবে। সে হবে দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ নির্ভীক সৈনিক । এইভাবে কৃষাণুর স্বপ্নে বিভোর দিনগুলি কাটছিল। কিন্তু বিনা মেঘে বজ্রপাত। বাড়ি থেকে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রাজনীতি করা যাবে না ।

বিয়ে করে সংসারী হতে হবে । কৃষাণুর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল । এ কি করে সম্ভব ! বেপোরুয়া কৃষাণুর সিদ্ধান্ত নিতে দেরী হলনা। পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে সে টুকটাক ঠিকাদারি করত। আলমারি থেকে বেশ কিছু টাকা বেগে ঢুকিয়ে গভীর রাতে নিরুদ্দেশের উদ্দেশ্যে একটা চিরকুট রেখে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে গেল। কৃষাণুর মাথায় দেশ উদ্ধারের ভুত টা আরও সজোড়ে চেপে বসেছে । দেশ উদ্ধারের শিকড় বাকড় কৃষাণুর সারা শরীরে জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলছে । প্রথম এক বন্ধুর বাসায় যেয়ে ঊঠল । কয়েক দিন থাকার পর নিরাপত্তার অভাবে আরেক বন্ধুর বাসায়। এইভাবে বাড়ির সাথে কোন যোগাযোগ বিহীন বিচ্ছিন্ন ভাবে কাটালো দীর্ঘ দেড় বছর। অনেকদিন টাকার ব্যাগ সহ বিভিন্ন মসজিদে কাটিয়েছে দিনের পর দিন । কৃষাণুর মাঠার ভূতটা কিছুতেই নামছে না ।

এদিকে বাবা মার মন অশান্ত অস্থির হয়ে গেছে। যেখানেই খবর পান সেখানেই তাঁরা দৌড়ে যান । কিন্তু প্রিয় পুত্রের মুখ আর দেখা হয় না। জেদি কৃষাণু রাগ করে ফোনে ও কথা বলে না। মায়ের চোখের জলে নদী হয়। বাবা ঘুরে বেড়ান টুঁ টুঁ করে কোথায় পাওয়া যাবে কৃষাণু কে । কিন্তু যে ছেলে জেগে ঘুমায় তাকে জাগাবে কে ? যে নিজ থেকে হারিয়ে যায় তাকে খুঁজে পাবে কে ? কৃষাণুর বাবা ভিতরে ভিতরে মুষড়ে পড়লেন। কৃষাণুর বোহেমিয়ান জীবন মেনে নিতে পারলেন না । তিনি আকস্মিক হৃদরোগের স্বীকার হয়ে কৃষাণু কে একা করে প্রচণ্ড অভিমান নিয়ে চলে গেলেন না ফিরার দেশে। (চলবে )

দ্বিতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment