ভিনদেশীর হৃদয়ে বাংলার লালন

ভিনদেশীর হৃদয়ে বাংলার লালন

সিয়াটল- আমেরিকার ওয়াশিংটন স্টেইটের সবচেয়ে নামী শহর। বাংলাদেশ থেকে কার্যক্রম শুরু করা “স্পৃহা”-নামক সিয়াটলভিত্তিক এনজিও নির্দিষ্ট দিনে আয়োজন করেছে তাদের নিজস্ব ইভেন্টের। আপাতত, বাংলাদেশের শহরগুলোতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করছে এই সংগঠনটি। স্পৃহার সেই আয়োজনে উপস্থিত হয়েছিলো সিয়াটলের বাংলাদেশী কমিউনিটির বিভিন্ন অঙ্গণের মানুষজন; আর, তাদের সাথে সে-দিন নিজ থেকেই উপস্থিত হয়েছিলো আমেরিকান এক জাদুকরের দল।

নাহ্! জাদুর কাঠি, তাসের কার্ড আর বাক্সভর্তি সাদা পায়রা নিয়ে নয়; তারা উপস্থিত হয়েছিলো হাতে একতারা আর কন্ঠে নিয়ে লালনের জাদুকরী গান। হ্যাঁ! বাংলার লালন ফকিরের গান, লালন শাহের গান, লালন সাঁইয়ের গান, লালন সাধকের গান, লালন বাউলের গান, লালন সাধুর গান।

কেমন অনুভূতি হতো, যদি দেখতেন, আপনার নিজ দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরের অপরিচিত এক দেশে, অপরিচিত একদল মানুষ, তন্ময় হয়ে গেয়ে চলেছে আপনার দেশের, আপনার ভাষার পাগল করা গান; গেয়ে চলেছে- “তিন পাগলের হলো মেলা নদে এসে”।

কেমন অনুভূতি হতো, যদি দেখতেন, অন্য ভাষার, অন্য সংস্কৃতির এক দল মানুষ আপনার সংস্কৃতিকে, আপনার দেশে লালিত হওয়া এক জীবন-দর্শনকে তাদের জীবনের দর্শন হিসেবে ধারণ করে রেখেছে, দু-চোখ বুজে আবিষ্ট হয়ে গেয়ে চলেছে -“লালন কয় জাতের কি রূপ, লালন কয় জাতের কি রূপ, দেখলাম এই নজরে, সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে”।

আমি জানি কেমন লাগতো। এও জানি, সেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়; সম্ভব নয় কি-বোর্ড নামক যন্ত্র দিয়ে সেই অনুভূতি লিখে ফেলাও। সেদিন, তাদের গাওয়া প্রায় পাঁচটি গান এবং ছোট্ট সাক্ষাৎকার ক্যামেরায় ধারণ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিলো। ক্যালিফোর্নিয়ার শেন্, টেক্সাসের কিথ্ এবং ওয়াশিংটনের জন্ এর চোখে-মুখে যে একাগ্রতা আমি দেখেছি সেটা কখনো ভুলবার নয়। সাথে থাকা বাংলাদেশের ফেরদৌস ভাইয়ের কাছ থেকে জানা গেলো লালনগীতির জন্য তাদের আগ্রহ এবং লালন ভক্তির কথা। সেদিন, ধারণ করা সেই ভিডিওর কিছু অংশ শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই আজকের এই লেখা।

উল্লেখ্য, এই ভিডিও ধারণ করার কয়েক ঘণ্টা পরেই কিথ্ উড়াল দেবে আকাশে, উড়াল দেবে তার প্রিয় গন্তব্যে; যেখানে টানা এক বছর কাটিয়ে মাত্র এই কিছুদিন আগে সে ফিরে এসেছিলো আমেরিকায়। কিন্তু, সে গন্তব্যের সত্যিকারের সন্ধান একবার যে পেয়েছে, পৃথিবীর অন্য কোথাও গিয়ে তার কি আর সুখ আছে! কিথ্ এর সেই স্বপ্নের গন্তব্যস্থল কুষ্টিয়ার লালন আখড়া; গন্তব্যের সেই দেশের নাম বাংলাদেশ।

পৃথিবীর মানুষতো লালনকে ভালোবেসেই ফেলেছে, এখন শুধু নিজ দেশের মানুষদের ভালোবাসা পাওয়ার অপেক্ষা; সমস্ত পৃথিবীতো বাউলদের জীবনধারা দেখে মুগ্ধ হয়েই গেছে, এখন শুধু নিজ দেশের মানুষদের মুগ্ধতা দেখার অপেক্ষা। বেঁচে থাকুক লালন, বেঁচে থাকুক বাউল; সুখে থাকুক লালন, সুখে থাকুক বাউল।

এই লিঙ্কে ক্লিক করলেই পাবেন দুটি গান নিয়ে সাত মিনিট ষোলো সেকেন্ডের ভিডিওটিঃ ভিনদেশীর হৃদয়ে বাংলার লালন



Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment