বসন্ত মেলার আয়োজনে মুখর সিডনিবাসী

বসন্ত মেলার আয়োজনে মুখর সিডনিবাসী

শীতের শেষে বসন্ত মেলায়

হলুদ পরীদের দেখেছি সেদিন

জুবিলি ওভালের বালুকা বেলায়

ঋতুরাজ বসন্তকে স্বাগত জানাতে ১২ অক্টোবর ২০১৩ কোগারাহ জুবিলী ওভালে জমকালো আয়োজনে হয়ে গেল বাংলাদেশী-অস্ট্রেলিয়ান কমিউনিটির বসন্ত মেলা। এ বছর এই মেলার আয়োজক ছিল বাংলাদেশ সোসাইটি অফ সিডনি (বি ডি এস এস)।আমরা জানি ,কালের আবর্তে পড়ে বসন্ত উত্সবের রীতিনীতিতে কিছু পরিবর্তন এসেছে; উত্সব পালনের কায়দা-কানুনেও এসেছে পরিবর্তন। যেটি পরিবর্তন হয়নি, তা হচ্ছে বাংলাদেশীদের জীবনে বসন্ত উত্সবের গুরুত্ব এবং আবেদন।তাই বাঙালি জাতির ঐতিহ্য-সংস্কৃতির অনুষঙ্গ আর তারুণ্যের প্রাণের বসন্তকে বরণ করে নিতে বসন্ত মেলা কর্তৃপক্ষ এ উৎসব এবং মেলার আয়োজন করেছে।বসন্ত মেলা কমিটির ব্যবস্থাপক মিঃ শহীদুজ্জামান আলো ,সোহেলুর রহমান,সাজ্জাদ বিন আফাজ,জামাল আহমেদ এবং মোহাম্মাদ ফারুক এর সার্বিক তত্তাবধানে আয়োজিত এ মেলা চলে সকাল ১১ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত।সকাল ১১টায় বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে বসন্ত মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।সেসাথে ছিল বিডিএসএস এর পতাকা এবং বাংলাদেশের ফুল, পাখি, আর ঋতু বৈচিত্র্যের সঙ্গে মিল রেখে নানা রঙের ফেস্টুন । উদ্বোধনের সাথে সাথে মেলার দ্বার উন্মুক্ত হয় সবার জন্য।ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নিতে হাজার হাজার বাংলাদেশী মিলিত হন এই প্রাণোচ্ছ্বল মেলায়।

সিডনি প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য এই ব্যতিক্রমী বসন্ত মেলা আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার মাননীয় প্রাইম মিনিস্টার Tony Abbot এর পক্ষ থেকে সিনেটর Hon Concetta Fierravanti-wells,প্রিমিয়ার এর পক্ষ থেকে Hon.John Frederick Flowers ,বারটন ফেডারেল মেম্বার Hon Nockolas Varvaris.রকডেল সিটি কাউন্সিল মেয়র Cr Shane O’Brien.তাদের আশাবাঞ্জক বক্তব্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের মাঝে একক সংস্কৃতি এবং সংহতির বাতাস দোলা দিয়ে যায়।এ অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আয়োজনকারী সংস্থার প্রেসিডেন্ট ডঃ মোঃ মনজুরুল হক, উদ্বোধনী বক্তব্যে বসন্ত মেলা কমিটির সমন্নয়কারি মিঃ শহীদুজ্জামান আলো এবং এদেশের বিশিষ্ট লেখক Jessica Carter যিনি বিডিএসএস এর সেচ্ছাসেবক শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত আছেন।

বিকেলে ছিল ৫ ঘণ্টার বর্ণিল মনোঙ্গ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটির প্রধান দায়িত্তে ছিলেন St.George Migration Resource Centre এর ব্যবস্থাপনা বোর্ডের Vice Chairman Mr.Mikall Chong ।অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনার ছিলেন অর্পিতা সোম চৌধুরী এবং রুবিনা কাসেম ঝুমু ।কণ্ঠশিল্পী রুবিনা আক্তার লনির “আহা আজি এ বসন্তে কত ফুল ফোটে’’ গানের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় সেদিনের বসন্ত মেলায় বসন্ত বাতাসের পদচারনা।অস্ট্রেলিয়ান চাইনিজ কমিউনিটি এসোসিয়ান ড্যান্স গ্রুপ আয়োজিত ৮ সদস্যের একটি দল বিউটিফুল স্কার্ট ,মার্শাল আর্ট,ময়ুর নাচ,মঙ্গোলিয়ান নাচ দিয়ে উপস্থিত দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন অনেকক্ষণ। এছাড়া গান পরিবেশন করেন সিডনির বিশিষ্ট শিল্পী অমিয় মতিন,জসিম আহমেদ এবং হারুন।মনমুগ্ধকর দরাজ গলায় কবিতা আবৃত্তি করেন আবৃতিকার শাহিন শাহ্‌নেয়াজ,কাইউম পারভেজ ,কবিতা পারভেজ।সেদিন অনুষ্ঠানে ‘কিশলয় কচিকাঁচার’ আকর্ষণীয় সাজে সজ্জিত ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের চমৎকার পরিবেশনা সবাইকে চমকে দেয়।গানের মাঝে মাঝে নাচ পরিবেশন করেন রকডেল বাংলা স্কুলের নাচের শিক্ষক অর্পিতা সোম চৌধুরী এবং ছাত্রী রুসমিলা সাজ্জাদ তাজরি।আমাদের সবার প্রিয় সিডনির ঐক্যতানের মনকাড়া বিভিন্ন জনপ্রিয় গানের পরিবেশনা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।বিডিএসএস এর কার্যকরী কমিটির সদস্য মিঃ শহীদুজ্জামান আলো , জনাব মোহাম্মদ সামসুজোহা স্বপন এবং সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাকসুমুল আহসান এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে আয়োজিত সেদিন বিকালের এ মনোরম অনুষ্ঠান নিসসন্দেহে একটি সার্থক প্রচেষ্টা বলে দর্শকদের অভিমত। ব্যান্ড স্বপ্ন এর সুরের মূর্ছনা আর দৃপ্ত পদচারনায় যখন দর্শকবৃন্দ ভুলেই গিয়েছিল তাদের বাসায় ফেরার তাড়া,তখন রাত ১০ টায় মেলার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। শেষাংশে লাকাম্বার বিশিষ্ট জুয়েলারি ‘কোয়ালিটি জুয়েলারির’ সত্ত্বাধিকারী বসন্ত মেলার সৌভাগ্যবান রাফেল ড্র এর বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন।

শুধু কথা, কবিতা, গান আর নাচে মেতে ওঠেন সবাই সেদিনের বসন্ত উৎসবে ।মেলার বিশাল মাঠ প্রাঙ্গনে হলুদ সবুজের ছোঁয়ায় প্রানের আনন্দে মেতে উঠেছিলেন বাঙ্গালী ললনারা।বাঙ্গালীর ঐতিহ্যবাহী খাবার প্রদর্শনী ও বিকিকিনির জন্য এ মেলায় অংশগ্রহনকারী বিভিন্ন স্টলের মধ্যে অন্যান্য দেশের স্টল ও অংশ নিয়েছে।এসব স্টলে ছিল রকমারি সুসসাধু মজাদারখাবারের সমাহার।

সব মিলিয়ে প্রথমবারের মত বসন্ত মেলার এই আয়োজনকে আয়োজকসংস্থা অত্যন্ত সফল একটি উদ্যোগ বলে মনে করেন, যা তাদের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়েছে বলে তারা দাবি করেন।তাদের বিশ্বাস শেষ বসন্তে এ আয়োজন প্রবাসী বাঙালীদের শিকড়ে প্রেমের জানান দিয়ে গিয়েছে সেদিন।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment