Saraswati Puja: Pujar Anondo

Saraswati Puja: Pujar Anondo

পুজার আনন্দঃ প্রেক্ষিত সরস্বতি পুজা

ডঃ অজয় কর, কেনবেরা

ভাল মন্দ বোঝার বয়স হয়নি তখনো।

সরস্বতি পুজার দিন পুস্পাঞ্জালী দেওয়ার জণ্যে মা আমাদের উপোস থাকতে বলতেন। আমাদের বলতেন উপোস রেখে পুস্পাঞ্জালী দিয়ে বিদ্যার দেবী সরস্বতির কাছে প্রার্থনা করলে মা সরস্বতি স্কুলের পরীক্ষায় আমদের ভাল ভাবে পাশ করিয়ে দেবেন।

মার কথামত পুজার দিন খুব ভোরে স্নান সেরে পরিস্কার কাপড় পরে খালি পেটে শ্লেট আর চক হাতে দৌড়ে পুজা মণ্ডপে যেতাম পুস্পাঞ্জালী দেওয়ার জণ্যে। পুজ়োর শেষে প্রসাদ খেয়ে উপোস ভাঙ্গতাম। আমাদের জয়েন্ট ফ্যামিলির স্কুল পড়ুয়া সকলকেই সরস্বতি পুজার দিন এটা করতে হত।

দেবীর আশীর্বাদ না পেলে পরীক্ষাতে ভালো করা যাবে না এই ধরনের একটা ভয়ের কারনেই পুস্পাঞ্জালী শেষ না করে, খিদের কস্ট যন্ত্রনা সত্বেও, উপোস ভাঙ্গতাম না।

ক্লাস সিক্স-এর ছাত্র আমি তখন।

আমার ক্লাসের এক মুসলমান ছাত্র বন্ধু পরীক্ষাতে সর্বোচ্চ নম্বর পেল। এতদিন বাদে ওর নামটা কোণো ভাবেই মনে করতে না পারলেও এটা ঠিক মনে আছে যে, সেবারে পরীক্ষাতে ওর প্রথম হওয়ার যুক্তি টেনে মাকে বলেছিলাম, দেবীর আশীর্বাদ না নিয়েও পরীক্ষাতে ভালো করা যায়– আর সেটার প্রমান আমার মুসলমান বন্ধুটি। ও সরস্বতি পুজাতে পুস্পাঞ্জালী দেয় না, ওকে পুজ়োতে উপোস থেকে খিদের যন্ত্রনা সহ্য করতেও হয় না, তার পরও ও পরীক্ষাতে সর্বোচ্চ নম্বর পায়। সেই ঘটনার পর থেকে আমি প্রায় তিন দশকের মত সরস্বতি পুজোতে উপোস রেখে পুস্পাঞ্জালী দেই নি।

ক্লাস ইলিভেন-এর ছাত্র আমি তখন। পড়ছিলাম মাদারিপুর জেলার এক গ্রামের কলেজে। সরস্বতি বিদ্যার দেবী। তাই অন্যান্য কলেজের মত আমার কলেজেও আমরা শিক্ষার্থী শিক্ষার্থীনিরা মিলে সরস্বতি পুজোর আয়োজন করেছি্লাম।

আমাদের শিক্ষার্থী বন্ধু গিয়াস ঊদ্দিন (কমলাপুর গ্রামের) তার বাড়ির কুল বড়ই আর ফুল দিয়ে ঐ পূজ়োতে আমরা যারা পুজ়োর আয়োজক হিসাবে ছিলাম তাদের সাথে মিলে মিশে সরস্বতি পুজ়োয় অংশ নিযেছিল, আর আমাদের সাথে পুজ়োর আনন্দ করেছিল। সেদিন গিয়াসকে সাথে নিয়ে আমাদের সরস্বতি পুজ়ো করতে কোণ রকম সমস্যা ছিল না। ভক্তি আর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা সেদিন মহা আনন্দে ঐ কলেজে সরস্বতি পুজ়ো করেছিলাম। কলেজের পড়ালেখা শেষে গিয়াস কৃষি ব্যাংক-এ লোণ কালেক্টরের চাকরী নিলো, আমি চলে গেলাম ঢাকাতে কৃষি কলেজে পড়তে, পড়া শেষে চাকরী, তার পর দেশ ছেড়ে এখন অস্ট্রেলিয়াতে।

গ্লোবালাইজেশনের যুগে ধর্ম বিশ্বাসী সব মানুষই অস্ট্রেলিয়াতে শান্তি আর সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে নিজ নিজ ধর্ম পালনের সু্যোগ পাচ্ছে, বাড়াচ্ছে তাদের উপাসনালয়ের সংখ্যা। হিন্দুবংশদ্ভুত বাংলাদেশীরাও অস্ট্রেলিয়ার বড় বড় শহরে প্রতি বছর নির্ভয়ে উদযাপন করে যাচ্ছে দেবী সরস্বতি সহ অণ্যাণ্য দেবদেবীর পুজা।

গর্ভধারিনী সেই মাকে হাজার হাজার মাইল দূরে রেখে বউ বাচ্ছা নিয়ে পুজোতে উপোস করে পুস্পাঞ্জালী দেবার সেই ছোটবেলার অনিয়মটাকে কখন কি ভাবে যে নিজের অজান্তেই আবার নিয়মে রুপ দিয়ে ফেলেছি তা জানি না- এখন আমি অস্ট্রেলিয়াতে পুজ়োর মণ্ডপে যাই, পুস্পাঞ্জালী দেই, প্রসাদ খেয়ে উপোস ভাঙি।

ভক্তরা বীনা হাতে বিদ্যা ও জ্ঞানের দেবী এই সরস্বতিকে জীবন আর ভালবাসার দেবী হিসাবেও বিবেচনা করে।

যখন ফুল হাতে, চোখ বুজ়ে, বিড় বিড় করে মন্ত্র আওরিয়ে ভক্তদের কাতারে দারিয়ে জীবন আর ভালবাসার দেবী সরস্বতির প্রতি ভক্তি জানাতে পুস্পাঞ্জালী দেই, তখন গর্ভধারিনী মাকে মনের পর্দাতে ভেষে উঠে, আর ভেষে উঠে কলেজের সেই বুন্ধু গিয়াসকে।

এতদিন বাদে উপোস রেখে দেবী সরস্বতির পুস্পাঞ্জালী দেবার মায়ের সেই আদেশকে পালন করার সু্যোগ পেলেও, আমার বন্ধু গিয়াস্কে সাথে নিয়ে সরস্বতির পুজো করে যে আনন্দ পেতাম পুজার সেই আনন্দ এজীবনে কি আর ফিরে পাবো?

2012/pdf/125832_saraswati_puja_pujar_anondo_902132043.pdf ( B) 


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment