A Beautiful Golden Evening
এক সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যা…
শুক্রবার সন্ধ্যা…..ফোন বেজে উঠলো,
হ্যালো, কে বলছেন ?
আপা আমি জেরিন……একটু কথা বলতে পারি ?
অবশ্যই, কি খবর জেরিন ?
আপা, পর্শু রোববার ফ্রি আছেন ?
কেন ?
আপা, একজন খুব নামী শিল্পী এসেছেন বাংলাদেশ থেকে ব্রিজবেনে,নাহার জামিল, ওনাকে নিয়ে রোববার সন্ধ্যায় একটা অনুষ্ঠান করতে চাচ্ছি…..
জেরিন, তোমার পিচ্চি, তারপর পুতুল মাত্র কালকে জ্বর থেকে ভাল হোল ! আর তুমি এখন এসব করবে ? তাছাড়া রোববার বিকেলের পর সাধারনত কোথাও যাইনা, পরদিন সবার কাজ…..অন্য একদিন করি, আমারও খুব সখ ওনার গান শোনা……
আপা, আর যে সময় নাই, ওনারা চলে যাবেন ৩/৪ দিনের ভেতর….তাই আমি অলরেডি ওনার সাথে কথা বলেছি আর ওনি ঐ দিন ফ্রি আছেন, আসতে রাজীও হয়েছেন……….
এভাবে তাতক্ষনিক ভাবেই ঠিক হয়ে গেল যে রোববার ওর বাসায় এক ঘরোয়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান …এভাবেই হটাৎ করে প্রোগ্রামের প্ল্যান হয়ে গেল, আর এই হোল পুতুল আর জেরিন ! প্রচন্ড রকম সংস্কৃতিমনা এক দম্পতি !
কিছুক্ষন পরে ওরা জানালো আরও কিছু লোকাল শিল্পীকে ওরা বলেছে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করতে। মোট অতিথি হবে ৭০/৮০ জন !! জোড় করে রাজী করালাম যে আমরা কজন যারা খুব ক্লোজ একটা করে ডিস নিয়ে যাব। ১ দিনের মধ্যেই অনুষ্ঠানের আয়োজন সম্পন্ন হোল।
যথারিতী রোববার বিকেলে হাজির হোলাম ঐ বাসায়। প্রথমেই স্টেজ সাজানো হোল সাথে সাউন্ড সিস্টেম সেটিং। একে একে আসতে শুরু করল সবাই।
সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে একে একে গান গেয়ে শোনালেন সন্চিতা, সাব্বির, জেরিন, নাহার জামিল, সোহাগ, অহনা, নীলা, মঐন, রাহাত।
যার উপলক্ষে এই আয়োজন তিনি হলেন, বিখ্যাত রবিন্দ্র সংগীত শিল্পী নাহার জামিল, বাংলাদেশ টেলিভীষন, রেডিওতে নিয়মিত প্রোগ্রাম করেন আর অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। বর্তমানে গিতান্জলী সংগীত সংগঠনের সদস্য এবং বাংলাদেশ রবিন্দ্র সংগীত শিল্পী সংস্থার সহ সভাপতির দায়িত্বে আছেন। পর পর বেশ কটি রবিন্দ্রসংগীত পরিবেশন করে ওনি সবাইকে মুগ্ধ করে দিলেন !!
ওনার স্বামী মাহবুব জামিল, যিনি বর্তমানে লিসিং ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এর চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত আছেন আর বাংলাদেশ টেলিভীষনে নিবেদণ, গীতিশতদল ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান গুলির ডাইরেক্টার ও উপস্থাপক হিসেবে বহুদিন মানুষের মন জয় করা অনুষ্ঠান করে গেছেন। ওনাকে আমাদের মাঝে পেয়ে সত্যি আমরা গর্বিত অনুভব করেছি। বরাবরের মত এই অনুষ্ঠানেও ওনি চমৎকার কিছু কথা বলে অনুষ্ঠানের সার্থকতা বহন করে এনেছেন।
সন্চিতা আপা বাংলাদেশ রেডিওতে প্রতিনিয়ত রবিন্দ্রসংগীত পরিবেশন করতেন, এখানেও তার সুললিত কন্ঠ আমাদের মন ভরিয়ে দিল। কোন মিউজিক ছাড়াই অসাধারন ভাবে গান পরিবেশন করলেন তিনি !
রাহাত শান্তনু অল্প বয়সেই যায়গা করে নিয়েছেন সংগীতের ভুবনে, চমৎকার মন কাড়া কিছু আধুনিক, হিন্দী, ব্যান্ডের গান গেয়ে আমাদের অবাক করে দিল, ভাবলাম বিদেশের এই ব্যস্ত জীবনে সারাদিন কাজ করে কিভাবে এই ছেলে চালিয়ে যাচ্ছে তার সংগীত চর্চা !! আমরা অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছি ওর পরবর্তি সিডি “স্বপ্নশুরু”র জন্য, যেটা পাবলিস হতে যাচ্ছে ১৩ই আগস্ট আর সিডিটার ফিচার করেছেন বাপ্পা মজুমদার, আরেফিন রুমি ও অদিত !!
তারপর নীলা কিছু আধুনিক গান, হিন্দি/বাংলা গেয়ে শোনাল আর আমরা বরাবরের মতই মুগ্ধ হয়ে ওর গান শুনলাম, ২ মাসের ছেলেকে রেখে কষ্ট করে অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করাতে কৃতগ্গতায় মন ভরে ওঠলো।
সোহাগ ভাই এর গাওয়া আধুনিক ও ব্যান্ডের গান গুলি ছিল অপূর্ব !! একদিকে যেমন অসাধারন তবলা বাজালেন আর এক দিকে গিটার নিয়ে গান !! এ যেন আমাদের সংগীত সন্ধ্যায় আলাদা আমেজ এনে দিল !
কিছু গানের সাথে গলা মেলালো ওর মেয়ে অহনা, ছোট্ট এই মেয়েটিও এরই মাঝে সবার মন জয় করে নিয়েছে……
মঐন ভাই এলেন আজম খানের গান নিয়ে !! অপূর্ব !! হটাৎ করেই এই অতি ব্যস্ত মানুষটির এই গুনটির কথা আমরা জানতে পারলাম, পর পর কয়েকটা গান গেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলেন !
জেরিনের গলায় মান্না দে’র গান অভিভূত করে দিল আমাদের, বেশ কয়েকটা আধুনিক শোনাল ও। চড়া গলায় কঠিন কঠিন গান গুলি অসাধারন ভাবে গায় ও।
সাব্বির ভাই এলেন আরও কিছু আধুনিকের ঝুলি নিয়ে…দারুন !! ইন্ডিয়ান, বাংলাদেশী বেশ কিছু গান শোনাল সে….সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনলাম !
অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বড়-ছোট দের উচ্ছাস, উৎসাহ, আনন্দ দেখবার মত ছিল,কোন দর্শকই চুপ করে বসে থাকতে পারেননি…..
গানের সাথে সাথে ছোট ছোট শিশুদের নাচ ছিল দেখবার মত , বিশেষ করে নাইসার নাচ !! অনুস্ঠানের সাথে মজার মজার খাবার আমাদেরকে রাত জাগানোতে আরও আগ্রহ বাড়িয়ে দিল……:P
পরিশেষে পুতুল শিল্পীদের উপহার প্রদানের মাঝ দিয়ে সবাইকে ধন্যবাদ জানাল।
চমৎকার এক সন্ধ্যা-রাত্রি কাটিয়ে পরিপূর্ন তৃপ্তি নিয়ে গভীর রাতে বাড়ি ফিররলাম …..
চমৎকার ছবি তোলা ও ভিডিও করার জন্য ধন্যবাদ শান শাকির(Shaan Shakir,)ও মুস্তাফিজ রহমানকে(Mustafiz Rahman).সর্বোপরী অজস্র ধন্যবাদ পুতুল ও জেরিনকে ,যারা আমাদের এই ব্যষ্ততম যান্ত্রিক জীবনে এরকম অনুস্ঠানের আয়োজন করে একদিকে যেমন আনন্দে ভরিয়ে তোলে আমাদের অবসর গুলিকে আবার অন্যদিকে এই সুদূর প্রবাসে বসেও দেশের ঐতিহ্যকে সবার মাঝে বিলিয়ে দিয়ে তা টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে।