Deshattobodh
দেশাত্ববোধঃ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কোন পথে
আলমামুন আশরাফী
রাজনীতিবিদদের গালমন্দ করা সমাজের এখন একটা অংশ হয়ে গেছে যারা যুগের পর যুগ ধরে দেশটাকে নিজের প্রপার্টি মনে করে দুমড়ে-মুচড়ে আর বেচে-কিনে খাচ্ছে। এটা আমার কোন মনগড়া কথা নয়, স্বঘোষিত রাজনীতিবিদদের মুখের কথা। খালেদা যখন ক্ষমতায় থাকে হাসিনা বলে, বিএনপি দেশ বেচে দিচ্ছে অন্যের হাতে। আর হাসিনা যখন ক্ষমতায় থাকে খালেদা বলে হাসিনা দেশ বেচে দিচ্ছে ইন্ডিয়ার কাছে। এ কথার ভাবার্থ অত্যন্ত জঠিল ও কুঠিল যার বিশদ ব্যাখ্যা সমাজে দাড় করানো গেলে দেশের প্রত্যেকটা রাজনীতিবিদ দেশদ্রোহী যার সমার্থক শব্দ প্রচলিত আইনে নির্ঘাত মৃত্যুদন্ড।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় দেশ কেনা-বেচার ব্যবসা সাংবিধানিক; জনগণের চাওয়া-পাওয়া শতভাগ উপেক্ষিত। এ ব্যবসায় জনগণ সরাসরি জড়িত না থাকলেও পরোক্ষভাবে জড়িত কারণ কইলেকশনে জনগণ ম্যান্ডেড দিয়ে উনাদেরকে সংসদে বসিয়েছে। তাছাড়া অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তারা সমভাবে দোষী। কিন্তু এ দায়ভার আমাদের দেশের জনগণের জন্য প্রযোজ্য কিনা তা বিতর্কের বিষয় যেখানে ৬০-৭০ ভাগ মানুষ অশিক্ষিত। অবশ্য এ কথা এখন ধোপে টিকবে কিনা বলা কষ্ট কারণ বেশকিছুদিন যাবৎ সরকার বলছে দেশে শিক্ষার হার ৫০-৬০ শতাংশ। এটা নিয়েও কিন্তু ব্যবসার অন্ত নেই আমাদের পিটুয়া রাজনীতিতে। এ স্কেলের উঠা-নামা নিয়ে যারা রাজনীতি করে তারা কিন্তু শতভাগ লাভবান কারণ ঘোলাজলে মাছ শিকারে তারা অত্যন্ত পটু। সফলতার এ সুতা ধরে তারা ষোল আনা বাগিয়ে নিচ্ছে আদায়-কাচকলায় দেশ ও বিদেশ থেকে; আর বারো বাজ্জে আপামোর জনগণের। রাজনীতিবিদরা শিক্ষা-দিক্ষায় মানুষ করে তুলছে তাদের ছেলেমেয়েদের বিদেশী শিক্ষায় ও দীক্ষায়।উনাদের ছেলেমেয়েরা সবাই নাকি ব্যারিষ্টারি পড়ায় ব্যস্ত, নূতন মন্ত্র শিখছে দেশের (অ!)দেখভালে। তাই নব্য রাজনীতিবিদদের কথায় প্রায়ই উচ্চারিত হয় মুজলিম আমজনতা যা কিনা স্বাশতঃ মুসলমান হিসাবে গ্রাহ্য অধ্যাবধি। ভাঙ্গা বাংলায় বিংলিশ বলে জনগণের মন ভুলানোই ব্যস্ত। অনেকটা নূতন সংস্কৃতি যা উদ্ভুত অপসংস্কৃতির ঝুলা থেকে উৎপন্ন। অবশ্য এ মেডিসিনে কাজ হচ্ছে বেশ কারণ মোদের দেশপ্রীতি শিক্ষেয় উঠেছে।
খুকু ঘুমাবে পাড়া জুড়াবে বর্গি এল দেশে, বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা বিদ কিসে। ধান ফুরাল পান ফুরাল খাজনার উপায় কি, আর কটাদিন সবুর কর রসুন বুনেছি। কবিতার এ’কটি লাইন পড়লেই বুঝা যাই কষ্টের কষাঘাতে সমাজ ব্যবস্থা কতটা অসহায়, বিধ্যস্ত ছিল! এ অবস্থা থেকে জনগণ সময়ের সাথে-সাথে পরিত্রাণ পেলেও নূতন বোমা ফাটে সমাজ-সংসারে যার প্রকাশ এভাবেঃ আয়রে খুকু বয়রে ডালে ভাত দেব তোর সোনার থালে, খাবি দাবি কলকলাবি মনির নিয়ে ঘুম পাড়াবি বা ঘুম পাড়ানো মাসি-মিশি এসো আমার ঘরে, গাড়ি দিব, বাড়ি দিব দিব ঢাকার শাড়ি। অর্থাৎ গ্রামের তাতের শাড়ি বাদ দিয়ে অভ্যস্ত হয়েছে ঢাকার বেনারশিতে, বেনারশি ছেড়ে বিদেশী সাজে ও পোষাকে। গ্রাম থেকে শহরে, শহর থেকে শহরান্তে মানূষ এখন বিদেশের স্বপ্নে বিভোর – দৈনন্দিন সামগ্রী থেকে শুরু করে স্পেশাল আয়োজনে। ভাবটা এমন হয়ে দাড়ায়েছে যে, কোন কিছুতে বিদেশের গন্ধ দিতে না পারলে কাটতি নেই। এর জলন্ত প্রমাণ আমাদের দেশের গার্মেন্ট সামগ্রীতে – দেশের সামগ্রী দেশে দোকানদাররা বেচছে বিদেশী বলে। এর থেকে লজ্জাজনক আর কি হতে পারে! আমরা নিরলর্জের মত তা মাথায় নিয়ে গর্বের সাথে বলছি মেড ইন থ্যাইল্যান্ড বা ইন্ডিয়া বা চায়না। সত্য বলতে আমাদের লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যাই! কিন্তু কেন? নিজের নিজস্বকে বিসর্জন দেয়া মানে নিজের মা’কে অস্বীকার করা নয় কি! অথচ পাশের দেশ ইন্ডিয়াতে ভিন্ন চিত্র – দেশের সামগ্রীতে তারা শতভাগ তুষ্ট; রুষ্ট বিদেশী ও বিদেশী সামগ্রীতে। ঢাকার লোক দেখলেই জিনিষের মূল্য ১০০০ টাকা ২০০ টাকার জিনিষ। কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে আমাদের অর্থ, আর ফেরত দিচ্ছে ডাল ইয়ং জেনারেশন ধবংস করার জন্য। সালমান খান, সাহাবাজ খান, ইত্যাদি খান এসে নিয়ে যাচ্ছে দেশের টাকা ডলারের অংকে, আর ফিরিয়ে দিচ্ছে ফুটা পয়সা বাংলাদেশে। দেশের স্বরাষ্ট মন্ত্রী এ অনুষ্টান দেখতে পেরে ধন্য।
দেশে ছোট্ট একটা বাচ্চা জন্মের পরেই মা যে গান শুনায় তার একটা সর্বজনগ্রাহ্য লাইন এখানে তুলে ধরলামঃ লেখাপড়া করে যারা গাড়িঘোড়ায় চড়ে তারা। অর্থাৎ সোনামণি গাড়িঘোড়ায় চড়ে সুখের পায়রা ধরে আনবে ঘরে, অবহেলিত গ্রামে পড়ে থাকার কোন দরকার হবে না। আস্তে আস্তে সোনামণি বড় হয়, স্কুলে যাই। বাবা-মার গানের কলি পরিবর্তন হয়। গাড়িঘোড়ায় চড়ার কথা ভুলে বলতে থাকেঃ আমার সোনামণি বিলেতে পড়তে যাবে, আমেরিকা পড়তে যাবে, যাবে অষ্ট্রেলিয়ায়। অর্থাৎ বাচ্চার জন্মের পর থেকে দেশের কোন ভাল বাণি কানে পৌছে না। সে জানে না তার ইউনিয়নের নাম, চেয়ারম্যান কে, জেলা শব্দের অর্থ কি, জাতীয় কবি কে, দেশের রাজধানী কোথায় বা কি হয় এখানে, ইত্যাদি। কিন্তু জেনেছে আমেরিকা ও অষ্ট্রেলিয়ার কথা যেখানে মানুষ তৈরীর কারখানা আছে; কাড়ি-কাড়ি টাকা আয়ের উৎস আছে। যে বাচ্চা জন্মের পর থেকে পরচর্চা শুনে আসছে তার মধ্যে দেশের প্রতি ভালবাসা জন্ম নেবে কিভাবে, দেশেত্ববোধ আসবে কোন পথে! সেটেলাইটে নাকি টিভি চ্যানেলে? ইন্টারনেটে নাকি গেমসফটে?
কোন পাবলিক চ্যানেলেই আমাদের দেশের ভাল কথা আসে না পচা গন্ধ নর্দমার কথা ছাড়া, দু’একটা ব্যতিক্রম। ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানবে কিভাবে আমাদের দেশের কথা, আমাদের জাতীয় কবি ও কবিতার কথা, জাতীয় গান ও গন্ধের কথা! এখনতো আর জীবনানন্দের বা নজরুলের কবিতা পড়ানো হয় না ক্লাসে যে তারা জানবে এগুলো। এখন বিকৃত মুক্তিযুদ্ধার ইতিহাসে দেশের ইতিহাস মৃত জীবাশ্ম হয়ে গেছে। সবাই হারিয়ে ফেলেছে খেই, খুজে ফিরছে নূতন কিছু যেখানে জীবন ও জীবিকার কথা আছে। বাচ্চারা নষ্ট ইতিহাস জানতে গিয়ে ছিটকে যাচ্ছে দেশের শিক্ষার মেন ট্রাক/ফ্রেম থেকে, পদচ্যুত হচ্ছে দেশাত্ববোধ থেকে আর লাভবান হচ্ছে নব্য ব্যরিষ্টার’রা যারা রাজনীতির ধুম্রজালে আবদ্ধ করে মামলা ঠুকে জেলের ভয় দেখাচ্ছে সবাইকে। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হালে মোহাম্মদ ইউনুস ও খালেদ ইব্রাহিম।
সময়ের সাথে সাথে সোনামণি বড় হয়, লেখাপড়া শিখে মানূষ হয় কিন্তু বিদেশী ভূত মাথা থেকে সরে না। দিনে-দিনে এই টিউমার বড় হয়ে জন্ম নেয় ক্যান্সারে, ঘিরে ফেলে তার চারিধার। আশে-পাশের বন্ধুবান্ধবরা এ রোগে আগেই আক্রান্ত বিধায় মোর্চা গড়তে বেগ পেতে হয় না। দশে মিলে গড়তে থাকে কিভাবে দেশের বাশ দেয়া যাই, পাড়ি দেয়া যাই বিদেশে। এখানে একটা কথা অত্যন্ত ধ্রব যে, জন্মের পর থেকে যে বিষবাষ্প বাবা-মা ডুকিয়েছে ব্রেনে তার বিকাশ হতে অনেকে হ্রত হতে হয় মাঝ নদী/সাগরে। আমার প্রশ্ন হল, বাবা-মা কেন জন্মের পর থেকেই তার বাচ্চাদের বিদেশের ধারণা ঢুকাতে থাকে? বাংলা ভিত শক্ত হওয়ার আগেই ইংরেজী শিখি? দেশ কি তাদের কিছুই দেয়নি? এ দাপটে এগিয়ে কে? বাবা না মা নাকি সমাজ ব্যবস্থা? মা’য়েদের মধ্যে দেশান্তবোধের তবে কি অভাব? দেশপ্রেমে উৎবুদ্ধ করতে এগুলো কি সমাজে অন্তরায়?
ব্যতিক্রম সর্বত্র, কিন্তু এ আলোচনা সামষ্টিক অর্থে। আমার লেখার উদ্দেশ্য বিভাজন তৈরী নয়, বরং একত্র করার উপায় খুজে বের করা। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ নয়, বরং দেশের মানুষের মধ্যে দেশাত্ববোধ গড়ে তোলার বৃথা চেষ্টা। পৃথিবীর সব দেশে কমবেশি এ সমস্যা আছে। সব দেশের মা’য়েরা তাদের বাচ্চাদের বড় করার জন্য বিদেশী ভালবাসায় গড়ে তুলে – হয়তো আনমনেই। কিন্তু এতে করে কি যে বড় বিপদ তৈরী হচ্ছে তা কি আমরা ভেবে দেখেছি; বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশে? আসুন দেশের প্রতি ভালবাসা গড়তে বাচ্চাদের দেশের কথা বলি, মাতা ও মাতৃভূমির কথা বলি। আজ না হলেও ভবিষ্যতে ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে দেশাত্ববোধ জন্ম দিতে সাহায্য করি। মাতা ও মাতৃভূমি সবার আগে। কবির গানে “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি”।
লেখক ও গভেষক
amader shakaler desher proti kritogga thaka uchit, ajker unnoto desh ekdin amader cheao onunnoto silo kintu tara desh ke gorese deshke sradhdha korese, ….