ইউরোপিয়ানদের সামারের প্রস্তুতি – ওয়াসিম খান পলাশ প্যারিস থেকে
এখন মে মাস। এখনো শীত। আবাহওয়া বেশ পাগলামি করছে ইদানিং। আবাহওয়ার এরকম পাগলামি অনেক বছর চোখে পড়েনি। আজ রোদ তো কাল মুষল ধারে বৃষ্টি , পরশু আবার প্রচন্ড শীত। এভাবেই যাচ্ছে কয়েকটি সপ্তাহ। স্বয়ং ইউরোপীয়ানরাও প্রচন্ড বিরক্ত আবাহাওয়ার এরকম পাগলামীতে। মার্চ মাস পুরোটাই ছিলো প্রচন্ড হাড় কাঁপানো শীত। এপ্রিলের শুরু থেকেই শীত কমতে শুরু করেছে। গাছে গাছে মাত্র নতুন পাতা গজাতে শুরু করেছে। তবে প্রতিটি এলাকাতেই ম্যারীর লোকজন দল বেধে নেমে পড়েছে গাছের ডাল পালা কেটে ছেটে দিতে। মে এর দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে সবুজ পাতায় গাছ গাছালির ডাল পালা পরিপূর্ন।
এপ্রিল মাসে ইউরোপে প্যাক ও প্রান্তর দুসপ্তাহ ছুটি গেছে স্কুল কলেজ গুলোতে। চাকুরিজীবিরাও তিন চারদিন টানা ছুটি কাটিয়েছেন এ উপলক্ষ্যে। এ উৎসবে মার্কেটগূলোতে পাওয়া যায় রং বেরংয়ের চকলেট। আকর্ষনীয় ডেকোরেশন ও মোড়কে মুরগী ও পাখির ডিমের চকলেট। পাশাপাশি থাকে অন্যান্য চকলেটও। ইউরোপের নামকরা চকলেট কোম্পানিগুলো নিজেদের স্পেশাল আইটেম নিয়ে হাজির হয় এই সময়টাতে। এটাকে চকলেট উৎসবও বলা যেতে পারে। ছোট বড় সবাই চকলেট ডিম কিনতে ছুটেন মার্কেটে মার্কেটে। নিজেদের পাশাপাশি প্রিয়জনকেও উপহার দেয় চকলেট ডিম। স্কুল, কলেজ ও বাচ্চাদের ক্রেসগুলোতে ছুটির আগের দিন বিতরন করা হয় ডিম চকলেটের প্যাকেট।
আর মে মাসকে ফ্রান্সে উৎসবের মাস বলা যেতে পারে। শনি রবিবার বাদ দিলে আরো চারদিন সরকারি ছুটি থাকে এই মাসটিতে। ১লা মে মেদিবসের ছুটি, ৮ই মে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয় দিবস, ১৩ই মে আছনছিও আর ২৩শে মে পন্তকোতের ছুটি।
যাই হোক, লেখাটি শুরু করেছিলাম ইউরোপিয়ানদের সামার প্রস্তুতি নিয়ে। সামারের ছুটি জুনের শেষ, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হলেও ইউরোপিয়ানরা কে কোথায় যাবেন, কিভাবে যাবেন, কত দিন থাকবেন,মনস্থির করে ফেলেন এখনি। নিজ নিজ কর্মস্থলে ইতিমধ্যেই ছুটির জন্য আবেদন করে রেখেছেন সবাই।
যারা দুরের কোনো দেশে বা ইউরোপের কোনো দেশে ভেকেশানে যাবেন তারা ইতিমধ্যেই রেল বা বিমানের টিকেটের খোজ নিতে শুরু করেছেন। খুজছেন ভাল একটা আবাসস্থল। যারা স্বপরিবারে ভেকেশানে যাবেন তদের জন্য এখনি টিকেট কাটে রাখার সময়। অনেক কমদামে টিকেট পাবেন এই সময়টায়। সময় এগিয়ে এলে টিকেটের দাম কয়েকগুন বেড়ে যাবে।
বিভিন্ন এয়ার লাইন্স, লো কষ্ট এয়ার লাইন্সগুলো টিকেটের উপর আকর্ষনীয় মূল্য হ্রাস দিয়ে থাকে এই সময়টাতে। মেট্রো, রেলষ্টেশন, টিভি, বাসষ্টেন্ডগুলোতে শোভা পায় এদের বিজ্ঞাপন। খুব অল্প সময়ের জন্য দেয়া এই অফারগুলো কাজে লাগান ইউরোপীয়ানরা। অনলাইনে বাসায় বসেই টিকেট কেটে ফেলেন অনেকে। যারা নিয়মিত ভ্রমন করেন, এই জনপ্রিয় ওয়েব সাইডগুলোর এড্রেস তাদের সবার জানা। এখানকার লোকষ্ট এয়ার লাইন্স গুলো অবিশাস্য সব অফার দিয়ে থাকে মাঝে মাঝে। আপনি খুব অল্প টাকায় যেমন ধরুন, ১০ ইউরোতে ইউরোপের এক দেশ থেকে আরেক দেশে ভ্রমন করতে পারবেন। লোকষ্ট এয়ার লাইন্সগুলোর মধ্যে রায়ান এয়ার লাইন্স, ইজি জেট, এয়ার বারলা, নিকি জেট ও ভুলিং এয়ার লাইন্স বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বিশাল এদের নেট ওয়ার্ক। ইউরোপের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের শহর পর্যন্ত এদের নেটওয়ার্ক। সপ্তাহ দুয়েক আগে ইজি জেট এক লক্ষ টিকেট ছেড়েছিলেন সামারে ভ্রমনকারীদের জন্য ৩০% অফ প্রাইজে। এর পর পরই রায়ান এয়ার লাইন্স ছেড়েছে এর লক্ষ টিকিট। ইউরোপের যে কোনো দেশে ( যেখানে রায়ান এয়ার লাইন্স চলাচল করে )মাত্র ৮ ইউরোতে । আর এখন চলছে ভুলিং এয়ারের অফার। ভুলিং এয়ার এর লক্ষ টিকিট ছেড়েছে তাদের যে কোনো ডেস্টিনেশনে মাত্র ৩০ ইউরোতে। সময় বেধে দেয়া হয়েছে মাত্র সাত দিন। ট্রেনেও ঠিক একই ধরনের ডিস্কাউন্ট দিয়ে থাকে রেল কতৃপক্ষ। তবে কেউ যদি ভ্রমনের ২।৩ মাস আগে টিকেট ক্রয় করে তাহলে অনেক কম দামে টিকেট পাবেন। এটাকে ফ্রাম টিকেট বলে। এসব দেশের রেল বিভাগ যাত্রীদের জন্য ৩০ থেকে ৭০ পারছেন্ট পর্যন্ত বিশেষ ছাড় দিয়ে থাকে সময় সময়। এসব দেশের বিমান, রেল কিংবা ইউরো লাইন বাস ভ্রমন টিকিট বিক্রির পাশাপাশি হোটেল রিজারভেশনও নিয়ে থাকে। দিয়ে থাকে বিশেষ ডিস্কাউন্ট।
সামার আসার আগে এসব দেশের পর্যটন বিভাগ গুলোও তৎপর হয়ে উঠে । ভিজিটর আকৃষ্ট করার জন্য বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে বিভিন্ন মিডিয়াতে। লোক সমাগমের স্থান গূলোতেও টানানো হয় আকর্ষনীয় সব বিজ্ঞাপন। সামার আসার আগেই পর্যটন স্থানগুলোকে নতুনভাবে সাজানো হয়। তৈরী করা হয় ভ্রমনকারীদের জন্য। বিভিন্ন দেশের আবাসিক হোটেলগুলোও ব্যস্ত থাকে টুরিষ্টদের রিজারভেশন নিয়ে। আগেভাগে হোটেল রিজার্ভ করে টেনশন মুক্ত থাকতে চান সবাই।
ইউরোপে সামার খুব অল্প সময়ের আসে বলে সবাই উপভোগ করার আপ্রান চেষ্টা করে। এসব দেশের সোস্যাল বিভাগও খুব সচেতন নাগরিকদের নিয়ে। বিশেষ করে বেকার, স্বল্প আয়ের লোক ও বয়স্কদের ভ্রমনের ব্যবস্থা করে থাকেন এরা। খোজ খবর নিতে শুরু করেছেন কে কোথায় যাবেন। অনেকে আবার আগে ভাগেই নাম রেজিষ্ট্রেশন করে রেখেছেন। এমন কি বুড়োরাও বঞ্চিত হন না সামার ভেকেশন থেকে। ষাটের উপর বয়সের নাগরিকরাও দেশ বিদেশ ভ্রমনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন না। প্যাকেজ পোগ্রাম নেয়া হয় এদের জন্যেও।
ইউরোপীয়ানদের একটি অংশ সামার কাটান নিজেদের গ্রামের বাড়িতে। এরা পরিবার পরিজন নিয়ে চলে যান নিজ গ্রামে। এদেরও বিশাল পরিকল্পনা থাকে এখন থেকেই। কিনেতে শুরু করেছেন প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্র।
মার্কেটে ইতিমধ্যেই শীতের পোষাকের পাশাপাশি গরমের জামা কাপড় উঠা শুরু হয়েছে। এ সময়টায় অনেকে আগাম জামা কাপড় কিনে রাখছেন সামনে সামারের জন্যে। অনেকে আবার অপেক্ষা করছেন সামনের ডিসকাউন্টের জন্য। কেউ কেউ আরার যাত্রার কয়েকদিন আগেই সেরে ফেলবেন কেনাকাটা।
জামা কাপড় ছাড়াও ভ্রমনকারীদের চাহিদাকে সামনে রেখে এসব দেশের সুপার মার্কেট ও মার্কেটগুলোতে আমদানী করা হয় বিভিন্ন ধরনের পণ্য সামগ্রী।
স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রী যারা পরিবারের সাথে ভেকেশনে যাবেন, পড়াশোনা থেকে যাতে নিজেকে একদম বিচ্ছিন্ন হতে না হয় সেজন্য ভ্রমনের যাবার আগেই হয়তো কিনে ফেলবেন নতুন ক্লাসের নতুন গাইডটি। নতুন ক্লাসে প্রবেশের আগেই একটু ধারনা পেয়ে যাবেন গাইডটি থেকে।
১২।০৫।১০
editor.aktibangladesh@yahoo.fr