দিন বদলের দিন: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা কি বদলেছি?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাদের দিন বদলের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। কিন্তু দিন বদল করতে হলে মানুষকে বদলাতে হবে। আমার প্রশ্ন আমরা কি বদলেছি? না আমরা বদলায়নি। বদলাতে চাইলেও বদলানো যাচ্ছে না। এইতো আবার জোরে শোরে শুরু হয়েছে ক্রসফায়ার। আপনার দল ও সরকার এর বিরুদ্ধে থাকলেও এখন নিরুপায় হয়ে ওই একই পথে হাঁটছে। কোন রাজনৈতিক দল নয় এবার তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটি হরতাল ডেকেছে। সরকার বদল হয়েছে বটে বদলায়নি আমাদের মানসিকতা। যারা ক্রস ফায়ারের শিকার তাঁরা কি আত্মসমার্পণ করতে পারতো না? যারা আজ হরতাল ডাকছেন তারাতো টিভি-পত্রিকায় নিয়মতি স্থান করে নিয়েছেন। তারা কি বিতর্কের মধ্যদিয়ে জয় পরাজয় মেনে নিতে পারতেন না? আজ তেল-গ্যাস নিয়ে হরতাল তো কাল ট্যানজিট-টিপাইমুখ নিয়ে হরতাল হবে। একসময় ভ্যাট নিয়েও হরতাল হয়েছে। এই নেতিবাচক কালচার থেকে বদলাতে হলে আগে নিজেকে বদলাতে হবে। এইতো সেদিন বাসে করে আসছিলাম। এক মহিলা শত চেষ্টা করেও মহিলাদের জন্য নির্ধারিত সিটে আসন পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। আইন করেও আজ যা সম্ভব হচ্ছে না সেখানে আমরা কিভাবে পরিবর্তন আশা করতে পারি?
দিন বদল করতে হলে ওই পুরোন কায়দায় ক্রস ফায়ার করতে হবে, হরতাল-ধর্মঘটকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে এবং কঠোর হতে হবে। এই কঠোর মনোভাব নিয়ে সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া চলেছে। এই কঠোর মনোভাব নিয়ে ওবামাও আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে সামরিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এই কঠোর মনোভাব নিয়ে সৌদি আরব রাজতন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ তাঁদের মতে গণতন্ত্র অকার্যকর যদিনা মানুষ তার কদর বোঝে।
আজ আবার আপনাকে সামরিক বাহিনী ডাকতে হচ্ছে যানযট নিরসনের জন্য। অথচ এই সমস্যাটি সমাধানে বাস্তব উদহারণ থেকে কোন শিক্ষা নিচ্ছি না। আজ সিঙ্গাপুর কি করেছে? তারা রাস্তায় রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেছ। আজ যদি ১ নম্বর গাড়িটি রাস্তায় নামে তবে ২ নম্বর গাড়িটি পরের দিন। আমাদের দেশে কি এই ব্যবস্থাটি চালু করা যায় না? আমরা কেন প্রশ্ন করি না কেন মানুষ গাড়ি ব্যবহার করে? যদি আমরা জনগণকে একটি ভাল বাস সার্ভিস দিতে পারি তবে কেঊ গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামবে না। তাই প্রয়োজন উন্নত বাস সার্ভিস। একটি বাস মানেই ৪০টি গাড়ি রাস্তায় কম নামবে। সেদিন বিআরটিসির এক কর্তা ব্যক্তি সামরিক বাহিনী থেকে আগত বলছিলেন যে বিআরটিসি বাস লোকসান করে তাই বন্দ আছে অনেক সার্ভিস। আরেক কর্তা বলেছেন বাসমালিকার বিআরটিসি বাসের বিরুদ্ধে। সরকারকে বলতে হবে ঐ সামরিক কর্তাকে যে সরল গণিত দিয়ে লাভ লোকসান বিবেচনা করলে সামরিক বাহিনী, স্কুল কলেজ সবই লোকসানী প্রতিষ্ঠান। আজ প্রতিদিন যে মানুষ রাস্তায় ৬ ঘন্টা কাটায়, আজ বাসমালিকরা জনগণকে জিম্মি করে ফেলেছে এই ক্ষতি কি ঐ সামান্য লোকসান থেকে বেশী নয় কি?
যে ভলভো বাস জনগণের মনে আশা জাগিয়েছিল সেগুলি আজ অলস পড়ে আছে। একবার চিন্তা করুন ১০০০ ভাল বাস নিমিষেই ঢাকার যানযট নিরসন করতে পারে। এতে সমাজে আসবে স্বস্তি। কয়েকদিন আগে একজন শিক্ষক গাড়ি কেনার জন্য টাকা যোগাড়ে ব্যস্ত দেখলাম। আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম স্যার আপনি কয় মাইল প্রতিদিন গাড়িটি ব্যবহার করবেন? উনি বললেন না ্ওই তোমার ভাবাী ও ছেলের স্কুল এর জন্য দরকার। আমি তখন তাকে বললাম বিদেশে ছেলে মেয়েরা বেশীরভাগ বাসেই যায়। কর্ম স্থলে যায় বাস-ট্রাম ট্রেন। তাদের ড্রাইভার নেই। তাদের সস্তা গ্যাস নেই। তাই সকালে বাচ্চার স্কুলের সামনে যানযট বাধেনা। বিবি সাহেব নিঊমার্কেটের সামনে গিয়ে যানযটে পড়েন না, আর সাহেবও তিন ঘন্টা রাস্তায় পড়ে থাকেন না।
দিন বদলে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে কঠোর হতে হবে এবং তবেই সম্ভব হবে উন্নয়ন। আজ তিন ধরণের শিক্ষা আমাদের জাতিকে বিভক্ত করে ফেলছে। সেখানে শৃংখলা আনতে হবে। শহর যদি নিরাপদ হয় তবে রিকসা বাসে করে ধনীদের সন্তানরাও স্কুলে যাবে। মায়েরাও সেখানে বসে থাকবেনা। যান যট হবে না। তাই কঠোরভাবে নিরাপওা নিশ্চিত করতে হবে। তাতে বিনিয়োগ হবে। আর বিনিয়োগ হলেই উন্নয়ন হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কেবল জিনিষের দাম বেশী ছিল। তবুও জনগন খুশি ছিল। তারা ঐ সরকারকে আজ দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছে। মাত্র ১৫ জন। সেখানে উপদেষ্টা সচিবালয়, সংসদীয় কমিটি সচিবালয় ও মন্ত্রী সচিবালয় ছিল না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেমন কঠোর হয়েছেন মাইনাস পন্থীদের বেলায় তেমন কঠিন হন নিরাপত্তার প্রশ্নে। তেমন কঠিন হন শিক্ষা-যানজট-আর দলীয় নেতাদেও নিয়নত্রণে। আপনার পাশে জনগণ আছে। নেতা নয় জনগণই শক্তি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা কিন্তু বদলায়নি!