সামারে একদিন: পর্ব -১ ওয়াসিম খান পলাশ প্যারিস থেকে
এখানে প্রায় সবাই সামারকে উপভোগ করার আপ্রান চেষ্টা করে । সামার আসে খুব অল্প সময়ের জন্য। দেখতে দেখতে দিন, সপ্তাহ এমনকি মাস গিয়ে বছর ঘুরে আসে। যেন চোখের নিমিষেই শেষ হয়ে যায় সামার। সামারের ছুটিতে এবার বেলজিয়াম যাওয়া হলো। ভ্রমনের উদ্দেশ্য ছিলো স্বপরিবারে ওয়ালীবি পার্ক দেখা।
ওয়ালীবি পার্ক বেলজিয়ামের একটি প্রসিদ্ধ পার্ক। এখানে রয়েছে শিশু কিশোর, তরুন,বয়স্ক সবার জন্য খেলাধুলার বিভিন্ন ইভেন্ট। ইউরো ডিজনিতে যেমন দুটি পার্ট। দুটি অংশে প্রবেশে দুটো টিকিট নিতে হয়। কিন্তু পার্ক ওলীবিতে একাটি টিকিটেই পুরো পার্ক ঘুরে দেখা যায়। প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২০ ইউরো। তবে ১ মিটারের কম উচ্চতার ছেলে মেয়েদের কোনো প্রবেশ মুল্য লাগে না। এখানে একটি পার্কের সাথে আরেকটি পার্কের তুলনা করা কঠিন। প্রতিটি পার্কের রয়েছে আলাদা আলাদা বৈচিত্র।
এ আদলের পার্ক এখন অনেক দেশেই আছে। ফ্রান্সেও এ আদলের পার্ক বেশ কয়েকটি রয়েছে। পার্ক আস্কতেরিক্স, পার্ক সেন্ট পল ঊল্লেখযোগ্য। আমি বিভিন্ন সময়ে ইউরোপের বেশ কিছু দেশ ভ্রমন করেছি। রোমের লুনা পার্ক,লন্ডনের হাইড পার্ক, জার্মানির মোভি পার্ক, হোলিডে পার্ক অনেকটা এ আদলের।
আয়তনের দিক দিয়ে ইউরোপের সবচেয়ে বড় দেশ ফ্রান্স। ফ্রান্সকে ইউরোপের ট্রানজিটও বলা যেতে পারে। দেশটির চারিদিকে কয়েকটি দেশের ফ্রন্টিয়ার। বেলজিয়াম, স্পেন, ইটালী ও সুইজারল্যান্ডের বর্ডার আছে এই দেশটির সাথে। ফ্রান্সের সবচেয়ে কাছের দেশটি হলো বেলজিয়াম। প্যারিস ব্রাসেলসের দুরত্ব মাত্র ২৬১ কিলোমিটার। ডিরেক্ট ট্রেনে প্যারিস থেকে এক ঘন্টা বিশ লাগে ব্রাসেলস যেতে। সড়ক পথে লেগে যায় প্রায় তিন ঘন্টা। ইউরোপের অনেকগুলো দেশ আমার দেখা হয়েছে ইতিমধ্যে। বেলজিয়ামকে মনে হয়েছে একটু অন্য রকম। ঘর বাড়ীর আর্কিটেকচার সম্পূর্ন ভিন্ন ধরনের। অধিকাংশ ঘর লাল সিরামিক ইটের তৈরী। বাড়ী গুলোর চমৎকার চমৎকার সব ডিজাইন। ব্রাসেলস শহরটি বেশ বড়ই মনে হয়েছে আমার কাছে। শহরটি মনে হলো আধুনিক পুরোনোর সংমিশ্রন। দুটো মেট্রো লাইন শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে গেছে। এছাড়া শহরজুড়ে চোখে পড়েছে জালের মতো বিস্তৃত ট্রাম লাইন।
আর্ন্তজাতিক রাজনীতিতে ব্রাসেলস একটি গুরুত্বপূর্ন রাজধানী। মিটিং প্লেস। এখানে রয়েছে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সদর দপ্তর। বিশ্বের পরাশক্তিরা এখান এসে অনেক গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
বেলজ়িয়ামে তিনটি ভাষা প্রচলিত। ফ্লেমিস, ডাচ ও ফ্রেন্স। প্রায় সবাই ইংরেজি জানেন। বেলজিয়ামে ফ্রেন্স ও ফ্লেমিসদের দ্বন্দ অনেক দিনের। দেশটির কিছু অংশে ফ্রেন্সরা সংখ্যা সংখ্যা গরিষ্ঠ আবার কিছু অংশে ফ্লেমিসরা সংখ্যা গরিষ্ঠ। প্রশাসনেও আছে এই দুই ভাষা ভাষীদের নিরব দ্বন্দ্ব।
বেলজিয়াম ইউরোপের ছোট্ট একটি দেশ। আয়তন মাত্র ৩০২৫৮ কিলোমিটার। জনসংখ্যা ১০ মিলিয়ন। প্রতি কিলোমিটারে ৩৩৪ জনের আবাস। দেশটির প্রায় শত ভাগ শিক্ষিত। বেলজিয়ামের ষ্টোভারি বিশ্ব বিখ্যাত। এখানে ব্যাপক ভাবে ষ্টোভারি চাষ করা হয়। এগুলো সংরক্ষন করে পরবর্তীতে জ্যাম, জ্যালী প্রস্তত করা হয়।
তবে বেলজিয়ামের ডায়মন্ড বাজার বিশ্ব বিখ্যাত। দেশটির এন্থারপেন শহরে রয়েছে বিশাল ডায়মন্ড মার্কেট।
যাই হোক লিখাটা শুরু করেছিলাম ওয়ালীবি ভ্রমন নিয়ে। আসলে ভ্রমনটি অরগানাইজড করেছিলো আমার এলাকার ম্যারী। ম্যারী হলো সিটি করপোরেশনের অধীন প্রতিটি ওয়ার্ডের আঞ্চলিক প্রশাসনিক ব্যুরো। প্রতিটি ভেকেশানে এরা প্রচুর ভ্রমনের ব্যাবস্থা করে থাকে। নাম মাত্র এন্ট্রী দিয়ে এলাকাবাসীরা এসব ভ্রমনে অংশ নিতে পারে।
এবারের ভ্রমনে আমরা ৮০ জন যাত্রী। দুটি লাক্সারিয়াস দ্বোতলা বাসে যাত্রা করলাম। এসব ভ্রমনে আমি সাধারনত দ্বোতলাতে বসতে পছন্দ করি। প্রতিটি বাসে একজন করে গাইড। এখানে গাইড ও যাত্রী উভয়ে উভয়ের পরিচিত। এই গাইডরা দীর্ঘদিন যাবৎ আমাদের সেবায় নিয়োজিত। ভোর ৬ টায় আমাদের নিয়ে বাস বেলজিয়ামের ওয়ালীবির উদ্দেশ্য যারা শুরু করলো। ভোরের যাত্রাতে রাতে কারোই ভাল ঘুম হয় না। তারপরও শিশু কিশোর, তরুন তরুনী, বয়স্ক সবার ভিতর অন্য রকম একটা অনুভুতি। যেন অচেনা চিনতে যাচ্ছি। অটো রুট ধরে আমরা ছুটে চলেছি।
সকালের শান্ত পরিবেশ অপূর্ব লাগছিলো দুপাশ। আশে পাশের অনেকে, রাতের অপূর্ন ঘুম পুর্ন করে নিচ্ছিলেন। প্রায় ঘন্টা তিনেক চলার পর বাস হাইওয়ের পার্শ্বে এক রেস্তোরার সামনে এসে থামলো। গাইড আমাদের সবাইকে এক ঘন্টা সময় দিলেন ব্রেকফাষ্টের জন্য। গাইড নিচের লাগেজ ষ্টোর খূলে দিলেন। যার যার মতো প্রয়োজনীয় জিনিষ নিয়ে সবাই ছুটলো রেস্তোরার দিকে। হাইওয়ের পার্শ্বে এসব যাত্রাবিরতিতে পাবলিক টয়লেট, ফাষ্টফূডের দোকান, মিনি মার্কেট থাকে। হাইওয়ের পার্শ্বের এই যাত্রা বিরতির স্থানগুলো সব সময় ব্যাস্ত থাকে যাত্রীদের আসা যাওয়ায়। সবার মতো আমিও প্রথমে টয়লেট সেরে একটা গরম কাফে নিলাম। আমাদের সাথে আসা অনেককে দেখলাম বাসা থেকে নাস্তা বানিয়ে এনেছে। আবার অনেকে ফাষ্টফূড থেকে কিনে নাস্তা করছে। বাইরে চমৎকার রোদ ঝলমলে সকাল। যারা সিগারেটে অভ্যস্ত, সিগারেট টেনে নিচ্ছেন।
গাইড এসে আমাদের পুনযাত্রার ইঙ্গিত দিলেন। আমরা যে যার সিটে গিয়ে বসলাম। গাইড সবাই এসেছেন কিনা একবার চেক করে নিলেন। বাস হাইওয়ে ধরে ছুটে চললো ………..।