লেখকের অনুভূতি

লেখকের অনুভূতি

পরদেশে আসার পর থেকে ভাল করে লক্ষ্যকরি বয়স্ক মানুষের চালচলন। তাঁদের আচরণের মধ্যে কোন টা অসংগত কোনটা আঘাত প্রদ, ভাবতে চেষ্টা করি। তাঁদের চালচলন বিচার করবার জন্য নয়। তাদের কে লক্ষ্য করি নিজেকে বিচার করার জন্য, নিজেকে সতর্ক করবার জন্যে। মনে মনে ভাবি কোন কোন আচরণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। যদিও আমাদের চোখের সামনে একটা সচল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছড়ানো আছে। নিজেকে আসলে সবসময় বা প্রায় সময় দেখতে পাই না আমরা, নিজেকে দেখার একটা যোগ্য আয়না পাওয়া যায় অন্যদের মধ্যে। সে জন্যই অন্যদের এমন করে লক্ষ্য করতে হয়। ঠিক লেখার ক্ষেত্রেও তেমনটা, অন্যদের লেখা পড়েই ঠিক ঠাক বোঝা যায়, নিজের লেখার অতল স্পর্শী শূন্যতা গুলো।

নিজে যখন লিখি, লেখার শব্দগুলোর চারপাশে অবাধ বিস্তার থাকে। আরো অনেক অলিখিত অনুসঙ্গ, পরিবেশ, বনর্না, ব্যন্জনা, কত কিছুই না থেকে যায়। আমি যখন নিজে শব্দ গুলোকে দেখছি তার সবর্স্ব নিয়েই যখন পাঠকের কাছে পৌঁছে তখন, আপেক্ষিক রিক্ততায় অনেক কিছু পায়না তারা। লেখক কি কখনো নিরাসক্ত পাঠক হয়ে নিজের লেখাকে পড়তে পারে? বিচার করতে পারে? দুর থেকে পারে না বুঝি সবসময়। তবে সমালোচনা সইবার শক্তি দরকার। তবেই শূন্যতা গুলো অভাব গুলো বুঝতে পারবো।
“নিন্দা পরব ভূষণ করে কাঁটার কন্ঠ হার
মাথায় করে তুলে লব অপমানের ভার”
নিন্দা সবসময় ভালো, নিজেকে সুধরে দেয়, বদলে দেয় সতর্ক করে দেয়। প্রশান্তি আর পুস্কারের চেয়ে বড় সবর্নাশ আর নাই। এই আমি কত্ত গুলো দিন এক নাগারে কিছু না করে ভয়াবহতায় আছি, কোথায় যেন একটা অবসান দেখে গেলাম, জীবন আর মরণের দ্বিধাছন্নতার মধ্যে টলমল করছি, নেপথ্যের চেয়ে বড় শক্তি লেখকের আছে আর কিছুই নেই!


দিনের পর দিন মাসের পর মাস বছরের পর বছর, উপেক্ষা উদাসীন্যের পরিবেশের মধ্য থেকে লেখে যাওয়া, কেবল নিজের উপর ভর করে নিজের চারপাশকে আমূল খুঁড়ে তোলা, তারপর , কিছু মিললো কি না সে বিচারেও নিজেকেই প্রশ্ন করে ফিরি। এখানকার সময়ে আমরা বড্ড বেশী বিজ্ঞাপনী মাইন্ডের . প্রচার গ্রস্থ , এইটা কিছুটা ডুবিয়ে মারছে প্রতিভার শরীর কে। কবি মন চণ্চল হলো হঠাৎ বৃষ্টি দেখে। অনেক দিন পর জানালা দিয়ে ঝরঝরা বৃষ্টি দেখলাম, সোনালী রোদ সমেত। ছোট বেলায় দেখেছিলাম এমন রোদ বৃষ্টি একসাথে, তখন আমি চড়কের মেলায়, আশির্বাদী কলা পাবার আশায় বৃষ্টিতে তুমুল ভিজেছিলাম, কলা পাইনি!

বৃষ্টি হলে মনের মধ্যে কি ঘটে ঠিক আজো বুঝি না, বৃষ্টি আমার কাছে অনেক গুলো অভিজ্ঞতা – দৃশ্য শব্দ গন্ধ স্পর্শ সবকিছু কেন্দ্রিত হয় কেবল বৃষ্টিতে। এতটা মিশে যাওয়া বোধ হয় প্রকৃতির কোন অনুসঙ্গে ঘটে না! বৃষ্টি হলো আমার জীবনে সুন্দরের তত্ব, স্মৃতির রহস্য। বৃষ্টির মত আরো কিছু আমাকে টানে , অদ্ভুত গহিনে নিয়ে যায়, সেটা সেতারের সুর। আর্ত অথবা আনন্দিত করে একদম শাররীক ভাবে, আমাকে ছঁয়ে নিতে পারে। আমি মাঝে মাঝে মনে করি সুরের চেয়ে বড় শিল্পি আর কি হতে পারে, আমাকে দ্রব করে দেয়, শুকনা রাখতে পারি না।


মনের ভেতরে কিছু করার একটা নিবিড় সুখ অনুভব করি, এখানে এসেছিলাম একটা আধুরা স্বপ্ন রেখে, একটা আশ্রম করার খুব ইচ্ছে – পুরোনো নতুনের নিয়ম মিলে সেটা চালাবার নীতি নিধার্রন করা, ওখানে যেমন বৈষ্ণব বিনয়, সাধুসঙ্গ, ধমর্সমাচার, জ্ঞান কথা প্রেম কথা, আতিথ্য সব কিছু আধুনিকতার মোড়কে, নানা আমলের সাহিত্য রাজনীতি, লাইব্রেরী, মানুষের সম্পকের্র সমতা প্রেস খাতা, কলম, কম্পিউটার সব মিলিয়ে একটা শান্তির আশ্রম!

আজ বুঝতে পারছি ঘু ঘু ডাকা দুপুরে বসে সে স্বপ্ন পূরণ হবার নয়, আর ভাঙ্গা জানু নিয়ে বেঁচে থাকলেও বড় বড় স্বপ্ন গুলো দেখা এখন বেমানান আমার জন্য। কতকিছু মিলে যায় কত কিছুই পড়ে রয় , জীবনের চড়াই উৎড়াইয়ের বাঁকে বাঁকে। হঠাৎ বিকেলে একটা খবর শুনে মনটা নেচে উঠলো ! আনন্দে নেচে উঠা যাকে বলে, যদিও নাচতে পারার শক্তিটা হারিয়ে ফেলেছি, তবুও পাওয়া বলে কথা! আমি খুব অল্প পেয়ে খুশি হওয়া মানুষ। আমাকে একটা পাতার বাঁশি বাজিয়ে শুনিয়েও অনেক খুশি করা যায়। কিংবা ঘন্টা বেঁধে নদীতে নৌকার ছই য়ে বসে ঘুরিয়ে আনলে। আমি স্বগের্র সুখ পাই। এই পাওয়া গুলো আমার অনন্য ভাল লাগার। আমার প্রিয় গান গুলোর শেষ রেশ নিয়ে যখন আমি সারাদিন গুনগুন করি। নিজের কন্ঠে নিজে অক্লান্ত শুনে যেতে পারি দিবস ও রজনী, এর চাইতে আর সুখ কি হতে পারে।


সবাই বলে শিল্পের জীবন নাকি সহানুভূতির জীবন , আর সেই সহানুভুতি গুলো কোথায় মিশে আছে জানেন – প্রকৃতি মানুষ আকাশ পাখির গান নদীর মর্ম, জীবন -মৃত্যু, মিলন -বিরহ, আনন্দ- বেদনা, এই অনুভব গুলোকে নিয়েই আমি রোজ জন্মি, বাঁচি!

Najmin Mortuza

Najmin Mortuza

দার্শনিক বোধ তাড়িত সময় সচেতন নিষ্ঠাবান কবি। চলমান বাস্তবতাকে ইতিহাস-ঐতিহ্যের পরম্পরায় জারিত করে তিনি কাব্য রূপান্তরে অভ্যস্ত। কাব্য রচনার পাশাপাশি ক্ষেত্রসমীক্ষাধর্মী মৌলিক গবেষণা ও কথাসাহিত্য সাধনায় তাঁর নিবেদন উল্লেখ করার মতো। গবেষণাকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ফোকলোর ও লিখিত সাহিত্যঃ জারিগানের আসরে "বিষাদ-সিন্ধু" আত্তীকরণ ও পরিবেশন পদ্ধতি শীর্ষক গ্রন্থের জন্য সিটি-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার ২০১২ অর্জন করেছেন।


Place your ads here!

Related Articles

“মহান বিজয় দিবস ’ ২০০৮” এর শুভেচ্ছা from Bangabandhu Society of Australia

আজ থেকে ছত্রিশ বছর পূর্বে নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতাকামী মুক্তি পাগল বাঙালি জাতি, শোষক ও

ধলেশ্বরী-4

শোকের মাস বাংগালী কাছে আগস্ট মাস নতুন করে তুলে ধরার কি আছে। এ বেদনার. শোকের। বই পরার অভ্যাস সেই পুরোনে

21st Century “Kunta Kinte”! Chapter 5: The flash back! (part two)

21st Century “Kunta Kinte”! Introduction: Revealing the “untold”! | Chapter 1: The realisation! | Chapter 2 : The beginning! |

1 comment

Write a comment
  1. সুমন মিয়া
    সুমন মিয়া 17 May, 2018, 17:47

    খুব সুন্দর হয়েছে…………………

    Reply this comment

Write a Comment