আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ এবং একুশে’র বিশ্বায়ন (দ্বিতীয় পর্ব)

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ এবং একুশে’র বিশ্বায়ন (দ্বিতীয় পর্ব)

প্রেক্ষাপটঃ “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ” এবং “একুশে’র বিশ্বায়ন” (দ্বিতীয় পর্ব)

সিডনীবাসী বাঙালিরা(বিশেষ করে অভিবাসী বাংলাদেশী বাঙালিরা) অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও যত্নের সাথে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে গ্রহণের সিধান্তকে সকল ভাষাভাষীর কাছেই অর্থবহ, তাৎপর্যপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য করার বৈশ্বিক সফল প্রয়াস হিসেবে মহান শহীদ মিনারের আদলে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ” বাস্তবায়িত করেছে। যার গ্রহণযোগ্যতা বা চেতনার উন্মেষ ভাষা হিসেবে বাংলা, জাতি হিসেবে বাঙালির একক বা সীমাবদ্ধ গণ্ডি পেড়িয়ে সকল ভাষাভাষী তথা তাবৎ বিশ্বের সকল মাতৃভাষা রক্ষার সচেতনায় আলোকিত করার সূচনা করেছে। আমাদের শহীদ মিনারের চেতনাদীপ্ত বাংলাভাষা অন্দোলনের সীমিত বলয়কে সঞ্চারিত করে পৃথিবীর ঝুঁকিপূর্ণ সকল ভাষা সুরক্ষার সঞ্জীবনী বার্তা “কনসারভ ইউর মাদার ল্যাংগুয়েজ” নিয়ে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়ার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। এই বৈশ্বিক সৃষ্টির ফলে একুশের চেতনাসৃষ্ট মহান শহীদ মিনারের মাতৃভাষা রক্ষার আবেগ-অনুভূতি বিজড়িত প্রতিশ্রুতি বিশ্বের সকল মাতৃভাষা সুরক্ষার চেতনার স্থাপত্য প্রতীকে সমৃদ্ধি পেয়েছে। “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ” বাংলার মহান একুশের চেতনাকে বৈশ্বিক একুশের চেতনার প্রাতিষ্ঠানিকতা অর্জনের পথে প্রথম এবং প্রধান মাইলফলক। এই ঐতিহাসিক অর্জন যে সার্বজনীন এবং সকল ভাষাভাষীর জন্যই উপযোগ্য তা একাধারে হেরিটেজ পার্কে প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ সরকারের অনুদান, অস্ট্রেলিয়া পার্লামেন্টে মোশন উত্থাপন ও পার্লামেন্টারি স্টেটমেন্টস, বিবিসি বাংলা বিভাগ কর্তৃক সম্প্রচারিত দীর্ঘ বিশেষ সাক্ষাৎকার সমৃদ্ধ প্রতিবেদন(১৮-২-০৬), ইউএন মহাসচিব জনাব কফি আন্নান এবং মাননীয় গভর্নর জেনারেল এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়ার স্বাক্ষরিত শুভেচ্ছাপত্র থেকেই স্পষ্ট এবং প্রমাণিত। অধিকিন্তু এই ঐতিহাসিক অর্জনের ধারাবাহিকতা সকল প্রবাসী বাঙালিদের জন্য একটি স্থায়ী মডেল হিসেবে মূল্যায়ন করেছে স্বদেশে বহুল প্রচারিত জনপ্রিয় দৈনিক “প্রথম আলো” (২১-১১-০৫) এবং দৈনিক “সংবাদ” (২৪-১১-০৫)পত্রিকার বিশেষ ক্রোড়পত্রে। “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” এর স্থাপত্য প্রতীক হিসেবে প্রবাসে শহীদ মিনারের আদলে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ”এর উদ্বোধনের (১৯-২-০৬)ঐতিহাসিক সংবাদ প্রায় প্রতিটি দৈনিক পত্রিকায় অত্যন্ত গুরুত্ব, গর্বিত এবং অহংকারী সংবাদ হিসেবে প্রচারণা পেয়েছে। আমাদের বাংলা ভাষা আন্দোলনের অনুপ্রেরণার সার্বক্ষণিক উদ্দীপক মহান “শহীদ মিনার” বিশ্বের সকল মাতৃভাষা বিস্তৃত বিশ্বপরিসরে “বিশ্বায়নে শহীদ মিনার” এর সমার্থক হয়েই “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ” নামে উন্মোচিত হয়েছে। যেই সৃষ্টি আন্তর্জাতিক বলয়ে ১৯৫২ এর একুশের পর নির্মিত “প্রথম শহীদ স্মৃতি স্তম্ব” এর নির্মাণের শোক-শঙ্কা বিজড়িত ভাবাবেগ গাম্ভীর্যতার সাথে মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে ইউনেস্কো কর্তৃক “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” হিসেবে গৃহীত সিদ্ধান্তের বৈশ্বিক পরিস্থিতির যোগসূত্র ভিত্তিক এবং সমার্থক হিসেবে পরিগণিত।

প্রত্যেকটি একুশপ্রেমী বাঙালির কাছেই, “একুশ আমার অহংকার”, “একুশ মানে মাথা নত না করা”, শুধুই শাব্দিক অর্থে নয়, ছিল চেতনায়-শপথে দীপ্ত-প্রখরিতও বটে; তবে তা স্বাধীনতা পূর্বে যেভাবে শাণিত ছিল, স্বাধীনতার পর তার প্রয়োজন অর্জন/আদায়ের বলাৎকার পর্যায় থেকে বাস্তবায়ন পর্যায়ে অধিষ্ঠিত। ‘শহীদ মিনার’ মানেই বাংলাভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের সংগ্রাম দমনের বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক প্রতিবাদী স্থাপত্য প্রতীক, যা প্রতিটি মানুষকে মাতৃভাষা রক্ষার শপথে উদ্দীপ্ত করেছে, ঐক্যবদ্ধ পথে স্থির-অবিচল থাকায় প্রশিক্ষিত করেছে, নতুন প্রজন্মকে শাসকচক্রের অশুভ শক্তির কথা স্মরণ করিয়ে মাতৃভাষা রক্ষার প্রতিশ্রুতিতে উজ্জীবিত করেছে। অধিকিন্তু দ্বিজাতিতত্বের কড়াল ছোবল থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করে ভাষা ও সংস্কৃতি ভিত্তিক মানবিক মূল্যবোধে একাত্ম হওয়ার প্রতিশ্রুতিতে সংঘবদ্ধ করেছে। ভাষা আন্দোলনকে স্বাধিকার আন্দোলনে রুপায়নে প্রেরণা জোগিয়েছে।

স্বাধীনতা উত্তর ‘শহীদ মিনার’ এর বার্তা প্রতিবাদ-প্রতিরোধ বা আন্দোলনের তির্যকতা কাটিয়ে মাতৃভাষা সুরক্ষার প্রতিশ্রুত অঙ্গিকারসহ সর্বস্তরের ব্যবহারের বার্তা হিসেবে উত্তীর্ণ। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের সংগ্রামী চেতনাকে সর্বত্র মাতৃভাষা’র অর্থবহ প্রয়োগ এবং ব্যাবহার বাস্তবায়নের দায়িত্বে অবিচল থাকার সচেতনতায় জাগ্রত থাকার প্রতীক হয়ে দেখা দিয়েছে। স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের “শহীদ মিনার” এর ঐতিহাসিক ভিত্তি/তথ্য এক ও অভিন্ন হলেও “শহীদ মিনার” এর বার্তা ভিন্ন এবং প্রায়োগিক। যেমন করে পূর্ব পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মানচিত্র, মানুষ, আকাশ-বাতাস সব কিছুই এক এবং অভিন্ন হলেও স্বাধীনতার পূর্ব এবং উত্তর কালে এই ভূখণ্ডের যাবতীয় সবকিছুর পরিচিতি, বর্ণনা ইত্যাদি সম্পূর্ণ ভিন্ন জাতিসত্তা ভাষা ও সংস্কৃতির মানদণ্ডেই প্রকাশিত এবং পরিচিত। যেমন করে প্রবাসে অভিবাসীরা নিজেদের সংস্কৃতি কৃষ্টিকে সংযত এবং সংহত রেখেই নিজ নিজ আবাসস্থলের জাতীয়তা বা রাষ্ট্রীয় বিধানে নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিয়ে থাকে। একইভাবে মহান একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার পরমুহূর্ত থেকেই ‘বাংলা ও বাঙালি’র ইতিহাস অহংকার বিজড়িত একুশের সবকিছুই আন্তর্জাতিক বলয়ের সাথে বিলীন হয়ে একাকার হয়ে গেছে। বাংলা ও বাংগালির আত্মাহুতি শোক-ত্যাগ, ঐতিহ্য অহংকার সবকিছুই স্বাধীন বাংলাদেশীদের মতই আজ পৃথিবীর সকল ভাষাভাষীর কাছে অনুপ্রেরণা। বাংলাভাষা আধুনিক বিশ্বে মাতৃভাষা হিসেবে ভাষার প্রতীকী নাম ধারণ করে সকল ঝুঁকিপূর্ণ ভাষা সুরক্ষার উদাহরণ হিসেবে অধিষ্ঠিত। একইভাবে বাংলার ভূখণ্ডে দণ্ডায়মান শহীদমিনারের চেতনা মহান একুশের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার পাশাপাশি “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ” নামে উত্তরণ মহান একুশের বৈশ্বিক বার্তাকে সকল ভাষাভাষীর কাছে পৌঁছে দেয়ার, তথা একুশ এবং শহীদ মিনারকে সকল মাতৃভাষা সুরক্ষায় প্রয়োজনে সহজতর কৌশল। বাংলার একুশের চেতনাকে সকল মাতৃভাষা সুরক্ষার অনুপ্রেরণার কৌশলী স্থাপত্য হিসেবে শহীদ মিনারের আদলে সকল ঝুঁকিপূর্ণ মাতৃভাষার অবক্ষয়ের বহুবিধ ক্ষতিকারক কারন বিবেচনা করেই “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ” নামাকরন বিবেচিত হয়েছে। কারণ শহীদ মিনার একান্তই বাংলা ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক, যা অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ মাতৃভাষার অবক্ষয়ের বহুবিধ ক্ষতিকারক কারনের সাথে সম্পৃক্ত বা অর্থবহ নয়।

প্রাথমিক অবস্থায় ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় শাব্দিক অর্থে ‘শহীদ মিনার’ এর পরিবর্তে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ” নামাকরন করা হলেও এসফিল্ড কাউন্সিল বরাবরে ২২/১১/২০০৪ তারিখে দাখিলকৃত আবেদনপত্রে বাংলার আইকনিক ‘শহীদ মিনার’ এর মতই “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ” নামে নির্মাণ প্রস্তাবনায় ৮মি/৬মি জায়গার প্রস্তাবনা করা হয়েছিল। কাউন্সিল প্রস্তাবনার পক্ষে সম্মত হয়ে জেনারেল ম্যানাজার ডঃ ডেভিড নিভেনকে ইউনেস্কোর “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” উদযাপনের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে স্থানীয় সকল ভাষাভাষীর সাথে প্রয়োজনীয় পরামর্শের ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব অর্পণ করে। জেনারেল ম্যানাজার ডঃ ডেভিড নিভেন প্রস্তাবক হিসেবে একুশে একাডেমীর প্রেসিডেন্ট জনাব নির্মল পাল এবং কাউন্সিলের সাথে সম্পৃক্ত প্রশিক্ষক মি ইয়ান মার কে নিয়ে কয়েক দফা আলোচনার মাধ্যমে প্রস্তাবিত আমাদের আইকনিক শহীদ মিনার সকল ভাষাভাষীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রতিফলিত না হওয়ার কারনে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ” এর নকশা প্রণয়নে চারটি মৌলিক উপাদান- যথাক্রমে মাতৃভাষার সংরক্ষণ, বহুভাষা/জাতি ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা, বিশ্বায়ন এবং একুশের ঐতিহাসিক তথ্য নির্ধারিত হয়। যথারীতি চারটি মৌলিক উপাদানের ভিত্তিতে নকশা দাখিলের অনুরোধ বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়ায় প্রচারিত হয় এবং সর্বমোট পাঁচটি প্রস্তাবনা বিবেচনার জন্য উপস্থাপিত হয়। প্রাথমিক বিবেচনায় একুশে একাডেমীর প্রেসিডেন্ট জনাব নির্মল পালের উপস্থাপিত নকশাটি গৃহীত হয় এবং কমিটি তাঁকে উপস্থাপিত নকশার ভিত্তিতে একটি মডেল আকারে উপস্থাপনা্র অনুরোধ জানালে তিনি একটি মডেল উপস্থাপন করেন। প্রাথমিক মডেলটি কমিউনিটির বিভিন্ন পরিসরে আলোচনা পরামর্শসহ এথনিক এফেয়ারস কমিটির সভায় উপস্থাপনের পর বিভিন্ন গঠন মূলক প্রস্তাবনার ভিত্তিতে মডেলটির ২য় সংস্করণ তৈরি করা হয় (ছবি সংযুক্ত)। দ্বিতীয় পর্যায়ে তৈরিকৃত এই মডেলটি কাউন্সিলের ব্যাবস্থাপনায় স্থানীয় জনসাধারনের কাছে উন্মুক্তকরন এবং মতামত গ্রহণের জন্য এসফিল্ড কার্নিভ্যাল ফেস্টিভালে (এসফিল্ড পার্ক) প্রদর্শনের জন্য একটি স্টলের মাধ্যমে দিনব্যাপী প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। কার্নিভ্যালে আগত বিভিন্ন ভাষাভাষী স্থানীয় জনসাধারনের মতামত এবং বাঙালি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যাক্তিবৃন্দের সৃজনশীল মতামতের সমন্বয়ের ফলশ্রুতিতে চূড়ান্ত করা হয় পৃথিবীর প্রথম “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ” এর নকশা। (চলবে)

Nirmal Paul

Nirmal Paul

নির্মল পাল; ইমেইলঃ nirmalpaul@optusnet.com.au; প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারপারশনঃ এমএলসি মুভমেন্ট ইনটারন্যাশন্যাল ইনক; প্রাথমিক নকশা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নকারী দলনেতাঃ পৃথিবীর প্রথম “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ”; প্রকাশিত গ্রন্থঃ “বিশ্বায়নে শহীদ মিনার”; বৈশ্বিক দর্শনঃ “লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার”, (স্থানীয় বর্ণমালা সংরক্ষণ কেন্দ্র)


Place your ads here!

Related Articles

A Message from Ltn Genaral Harun-ur–Rashid, Bir Protik on Ouderland Memorial Commitee Film Festival

Memebers of Ouderland memorial committee& member of Bangladesh-Australian Community in Australia Dear Friends, Thank you for the invitation to the

প্রিয় – অস্ট্রেলিয়ার নিকট থেকে একুশে সংকলন ২০১০ পেতে পারি কি?

প্রচারবিমুখতা আমার স্বভাবসিদ্ধ একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে যখন দেশ -বিদেশে বিচরণ করি , পশ্চিমা শিক্ষায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলি

I too am ‘sorry’ – Sabrina Quader

If I could apologise a thousand times over I would. Even though I was not even born in 1970, when

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment