একাত্তরে হত্যার অভিযোগ : মাওলানা আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে মামলা

by Priyo Australia | May 6, 2009 4:23 am

মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুটপাট ও ধর্ষণের অভিযোগে ফরিদপুরে বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু মিয়া ও তাঁর শ্যালক মোহাম্মদ কাজীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ফরিদপুরের বিচারিক হাকিম মোতাহারাত আক্তার ভুঁইয়ার আদালতে গতকাল সোমবার এ মামলা দায়ের করেন সালথা উপজেলার পুরুরা গ্র্রামের ভক্ত রঞ্জন বিশ্বাস। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে তদন্তের জন্য সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আরজিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে সালথার খারদিয়া গ্রামের আ. সালাম মিয়ার ছেলে আবুল কালাম আজাদ আলবদর বাহিনীর ফরিদপুর জেলার প্রধান ছিলেন। তিনি ও তাঁর শ্যালক মোহাম্মদ কাজী জেলার বিভিন্ন থানায় শান্তি কমিটি গঠন করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেন। এ সময় তাঁরা এলাকায় মানুষের সহায়-সম্পদ লুট, খুন, বাড়িঘর পোড়ানো ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটান।

আরজিতে বাদী উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালের ১ জ্যৈষ্ঠ দুপুর আনুমানিক একটায় আসামিরা আরও ১০-১২ জনকে নিয়ে অস্ত্রসহ আমাদের বাড়িতে আসে। বাবা মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করায় আবুল কালাম আজাদ ক্ষিপ্ত স্বরে আমার বাবা মাধব চন্দ্র বিশ্বাসকে ডাকেন। বাবা ভয়ে পালানোর চেষ্টা করলে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় তিনি আমাদের বাড়িতে আসা অতিথি জ্ঞানান্দির বিশ্বাসকেও হত্যা করেন। এরপর আসামিরা ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেন।

আরজিতে আরও বলা হয়, আসামিরা মুক্তিযুদ্ধের সময় নগরকান্দার কুমারকান্দা গ্রামের ওহাব সর্দার, টাকু মোল্লা, কাঞ্চু ফকির, আদম মোল্লা, আলমপুর গ্রামের হাসেন মিয়া, বড়ু খাতুন ও কেশবদিয়া গ্রামের ওমেদ মোল্লাকেও হত্যা করে। ওই সময় লাল মিয়া নামের একজনকে বাচ্চু মিয়া গুলি করেন। কিন্তু ঘটনাক্রমে তিনি বেঁচে যান। তিনি এখনো জীবিত রয়েছেন।

এলাকাবাসী জানায়, আবুল কালাম আজাদ স্থানীয়ভাবে খারদিয়ার বাচ্চু হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর তিনি কিছুদিন আত্মগোপন করেন। পঁচাত্তরের পর তিনি প্রকাশ্যে আসেন। পরে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন।

সুত্র জানায়, নব্বই দশকের সুচনালগ্নে আবুল কালাম আজাদ বাংলাদেশ মসজিদ মিশন নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলায় তিনি দীর্ঘদিন ইসলামবিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতেন। বর্তমানে এনটিভিতে আপনার জিজ্ঞাসা নামে একই ধরনের একটি অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ফরিদপুর জেলা শাখার আমির দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৭১ সালে আজাদ জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তবে স্বাধীনতার পর তিনি জামায়াতে যোগ দেন। আশির দশকের শেষ দিকে তিনি জামায়াত ছেড়ে দিয়ে মসজিদ মিশন গঠন করেন।

এ ব্যাপারে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, এসব অভিযোগ সবৈব অসত্য। আমি ধর্মীয় কুসংস্কার দুর করা, বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সংহতি তৈরি করা, সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকান্ডসহ অনেক সমাজসেবামূলক কাজ করি। এ মামলার ফলে সে সুনাম বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কে বা কারা এটা করছে বলতে পারব না। তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আমি নগরকান্দায় জামায়াতের প্রার্থী সাইয়েদ মোহাম্মদ আলীর পক্ষে কাজ করি। তখন তো একাত্তরের প্রশ্ন ছিল না। ওই সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন কে এম ওবায়দুর রহমান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি আমাকে মামলায় জড়িয়ে ছিলেন। পরে সেগুলো থেকে আমি খালাস পেয়েছি।

সালথা উপজেলার চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, আবুল কালাম আজাদ চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী। তার যথাযথ বিচার হবে বলে আশা করি।

original source[1]

Endnotes:
  1. original source: http://www.prothom-alo.com/archive/news_details_home.php?dt=2009-04-21&issue_id=1256&nid=MjMyODE=

Source URL: https://priyoaustralia.com.au/readers-link/2009/%e0%a6%8f%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%b9%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%85%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a7%8b%e0%a6%97-%e0%a6%ae/