বাংলাদেশ: সাইকেলে চলাচল উপযোগী পরিবেশ চাই

by Priyo Australia | January 1, 2010 7:05 pm

পরিবেশবান্ধব, প্রাণবন্ত ও বসাবাসযোগ্য নগরের জন্য সাইকেলে চলাচল উপযোগী পরিবেশ চাই

সাইকেলে চলাচল উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, পরিবেশের উন্নয়ন এবং সর্বোপরি শহরকে প্রাণবন্ত ও বসবাসযোগ্য করা সম্ভব। আজ সকাল ১০টায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর যৌথ আয়োজনে ‘‘সাইকেলে চলাচল উপযোগী পরিবেশের জন্য সাইকেল র‌্যালীতে এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়।

র‌্যালীটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ-মৎসভবন হয়ে প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়। সাইকেল র‌্যালী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক কামরুল আহসান খান এর সভাপতিত্বে র‌্যালী শুরুর পূর্বে আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন এস্ট্রোনমিকাল এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক এ আর খান, প্লানিং কমিশনের প্রাক্তন সদস্য ড. আনিসুর রহমান, বাপার সহ-সভাপতি আধ্যাপক নজরুল ইসলাম, বিখ্যাত আলোকচিত্রী শহীদুল আলম, জাতীয় ক্রীড়াবিদ কামরুন নাহার ডানা, সংস্কৃতিকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা ম. হামিদ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান, বাপার মহিদুল হক খান, বাইসাইকেল মার্চেন্ট-আসেম্বলিং এন্ড ইম্পোর্টার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নূরুল হক, প্রত্যাশার সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, জাতীয় সাইক্লিং ফেডারেশনের পারভেজ হাসান, এনডিএফ এর নির্বাহী পরিচালক ইবনুল সাঈদ রানা, ঢাকা সাইক্লিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মাসুম এবং বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন। আলোচনাপর্ব পরিচালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা মারুফ রহমান।

বক্তারা বলেন, দেশে প্রতিরোধযোগ্য অসংক্রামক রোগ (ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ব্লাড প্রেসার ও মুটিয়ে যাওয়া) এর কারণে দিন দিন মৃত্যুহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন ৩০মিনিট অথবা বছরে ২১০০কিমি সাইক্লিং করলে ৫০ভাগ মুটিয়ে যাওয়া, ৩০ভাগ ব্ল-াড প্রেসার, ৫০ভাগ হৃদরোগ, ৫০ভাগ ডায়াবেটিসের হ্রাস পায়। পাশাপাশি অতিরিক্ত যান্ত্রিক যানবাহনের নির্ভরতার কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে পরিবেশ দূষণ। বিশ্বে পরিবহণ খাতে জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহারজনিত কারণে ২৫শতাংশ কার্বন নির্গমণ হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ। পরিবহণ ব্যবস্থায় সাইকেলের ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে কার্বন নির্গমণ হ্রাস করা সম্ভব। তাছাড়া সাশ্রয়ী যাতায়াত মাধ্যম হিসেবে সাইকেলের বিকল্প নেই।

এ আর খান বলেন, ঢাকা শহরে প্রাইভেট কার বৃদ্ধির মাধ্যমে যানজট, রাস্তাঘাটের নির্মাণ ব্যয়, দূষণ, জ্বালানীর ব্যবহার ও দূর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া বিনোদনের জন্য উন্মূক্ত স্থান ও শিশুদের খেলাধূলার জায়গা কমে আসছে। দীর্ঘস্থায়ী নগর পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পথচারী, সাইকেল, রিকশা ও উপযোগী পাবলিক পরিবহণের সমন্বয় করা প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। শহিদুল আলম বলেন, আর ঢাকা শহরে বেশিরভাগ অল্প দূরত্বে যাতয়াত হয়ে থাকে। যেখানে হেঁটে এবং সাইকেলে বেশিরভাগ যাতায়াত করা সম্ভব।

ড. আনিসুর রহমান বলেন, পাবলিক পরিবহণের সেবামান বৃদ্ধি এবং সাইকেলের জন্য নিরবিচ্ছন্ন নেটওর্য়াক গড়ে তোলা প্রয়োজন। কামরুল আহসান খান বলেন, সারা পৃথিবীতে সাইকেল খুবই জনপ্রিয় বাহন। রাষ্ট্রীয়ভাবে অনেক দেশেই সাইকেল ব্যবহার জন্য ব্যাপক সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের দেশে পরিবহন ব্যবস্থায় সাইকেলের জন্য কোন সুযোগ-সুবিধা আজও তৈরি হয়নি। বরং মাত্রারিক্ত কর আরোপ, বিভিন্ন সড়কে অযান্ত্রিক যান নিয়ন্ত্রণের নামে কার্যকর এই বাহনটি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে।

মঞ্জুরুল আহসান খান বলেন, সাইকেলের উপর অধিক কর বড় ধরনের অন্তরায়। সর্বসাধারণ বিশেষ করে ছাত্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের সুলভে সাইকেল প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সাইকেলের উপর আরোপিত কর হ্রাস করা প্রয়োজন। ম. হামিদ বলেন, যানজট নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সাইকেলের সুবিধা সৃষ্টিতে আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে।

আগামী ৩ ও ৪ জানুয়ারী ২০১০ বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং বেন আয়োজিত বাংলাদেশের পরিবেশ বিষয়ক তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন (ওঈইঊঘ) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে আজ সাইকেল র‌্যালী আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ স্কাউটস্, জাতীয় সাইক্লিং ফেডারেশন, নিরাপদ ডেভলাপমেন্ট ফাউন্ডেশন, প্রত্যাশা, ঢাকা সাইক্লিং ক্লাব, ফেজ, স্বভূমি, অনুসন্ধিৎসু চক্র, ঢাকা নাগরিক, ভ্রমন বাংলাদেশ, বাইসাইকেল মার্চেন্ট-আসেম্বলিং এন্ড ইম্পোর্টার্স এসোসিয়েশন, গ্রীণ ভয়েসসহ সমমনা বিভিন্ন সংগঠন সাইকেল র‌্যালীতে গ্রহণ করে।

সাইকেল র‌্যালী থেকে শহরের সর্বত্র সাইকেলে চলাচলের জন্য পৃথক লেন ও পথ, স্ট্যান্ড তৈরি করা, কর কমানো, বাইক এন্ড রাইড সিস্টেম এবং ফ্রি সাইকেল সার্ভিস চালু, শিক্ষার্থীদের সুলভে সাইকেল সরবরাহ করা, পথচারী, রিকশা ও পাবলিক বাসে চলাচলের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা। একদিন বেজোড় সংখ্যা ও অন্যদিন জোড় সংখ্যার লাইসেন্স অনুযায়ী প্রাইভেট কার চলাচলের ব্যবস্থা করা। জায়গা ও সময়ের মূল্যানুসারে পার্কিং চার্জ আদায় করা। পিক আওয়ারে নগরের কেন্দ্র কারমুক্ত করা এবং ব্যস্ত এলাকায় প্রাইভেট কার প্রবেশের জন্য কনজেশন চার্জ গ্রহণের ব্যবস্থা করা।

ধন্যবাদসহ

(কামরুল আহসান খান)

সাইকেল র‌্যালী উদযাপন কমিটি, বাপা, ০১৯২৫৯৮৯৪৩৬, ০১৫৫২৪৪২৮১৪

Source URL: https://priyoaustralia.com.au/community-news/2010/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%b2%e0%a7%87-%e0%a6%9a%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%9a%e0%a6%b2-%e0%a6%89/