by Shariful Islam | August 24, 2010 4:35 am
যাকাতুল ফিতর
আমাদের প্রতি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিশেষ অনুগ্রহ এই যে, তিনি আমাদের ইবাদত বন্দেগীতে কোন ক্রুটি হলে তার ক্ষতি পুষিয়ে নেবার ব্যবস্থা রেখেছেন, যেমন ফরয নামজে ক্ষতি পুষিয়ে নেবার ব্যবস্থা করেছে নফল নামায দ্বারা। এমনি ভাবে আমাদের উপর অর্পিত ফরয সিয়াম পালনে যে ক্রুটি বিচ্যুতি হয়ে থাকে তার ক্ষতি পুষিয়ে নেবার জন্য যাকাতুল ফিতর এর বিধান দিয়েছেন, সেই সাথে দরিদ্র ক্লিষ্ট মানুষও যাতে আনন্দ সহকারে ঈদ করতে পারে তার জন্যও এই যাকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের রমজানের রোজা রাখা এবং রজমানে অন্যান্য নফল ইবাদতের মাধ্যমে অশেষ নেকি অর্জূনের সুযোগ দান করেছেন। আর মানুষ এই ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে থাকে।
হাদিসে এসেছে-
ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুল্লাহ (সা:) সিয়াম পালন কারীর জন্য সদকাতুল ফিতর আদায় অপরিহার্য করে দিয়েছেন। যা সিয়াম পালন কারীর অনর্থক কথা ও কাজ পরিশুদ্ধকারী ও অভাবী মানুষের জন্য আহারের ব্যবস্থা হিসেবে প্রচলিত। যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের পূর্বে তা আদায় করবে তা সদকাতুল ফিতর হিসেবে গ্রহনযোগ্য হবে। আর যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের পর আদায় করবে তা সাধারণ সদকা বলে গণ্য হবে। (আবু দাউদ-১৬০৯, ইবনে মাজহা-১৮২৭)।
কাজেই সদকাতুল ফিতর আদায় করা আমাদের জন্য অপরিহার্য, আর রাসুল্লাহ (সা:) যা তাঁর উম্মতকে পালনের জন্য অবশ্যই নির্দেশ দিয়েছেন তা পালন করা অপরিহার্য, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন যে, রাসূলের অনুগত্য করলো সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল এবং যে মুখ ফিরিয়ে নিল আমি তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক পাঠাইনি।
সুর (নিসা-৮০)
আর যারা তাদের নিকট হিদায়তের পৌছার পরও রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মুমিনের ব্যতিত অন্যদের পথের অনুসরন করে এবং তারা যেভাবে পিছিয়ে রয়েছে আমিও তাদেরকে পিছিয়ে রাখব এবং জাহান্নামে পৌঁছে দিব আর ইহা কতই বা খারাপ প্রত্যাবর্তন স্থল।
(সুরা নিসা-১১৫)
যাকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব/ফরজ
সদকাতুল ফিতর সম্পর্কে ইমামদের মাঝে মতভেদ আছে। ইমাম আযম হানিফার মতে সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব। অন্যান্য ইমাম মেযন শাফেরী, মালেক ও আহমদ ইবনে হাম্বল (র:) এর মতে ফরয। তাঁদের মত এক সা’, কিন্তু ইমাম আবু হানিফার মতে অর্ধ সা দিতে হবে।
যার কাছে ঈদের দিন স্বীয় পরিবারের ১দিন ও ১ রাতের ভরন পোষনের খরচ বাদে এক সা পরিমান খাদ্য সামগ্রী থাকবে তার উপরই সদকাতুল ফিতর ফরয হবে। যার উপর সদকাতুল ফিতর ফরজ তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবে তেমনি নিজের পোষ্যদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন।
যাকাতুল ফিতরের পরিমান
যা কিছু প্রধান খাদ্য হিসাবে স্বীকৃত যেমন – গম, যব, ভুট্রা, চাউল, খেঁজুর ইত্যাদি থেকে এক সা পরিমান দান করতে হবে, হাদীসে এসেছে ইবনে উপর (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল্লাহ (সা:) অপরিহার্য (বোখারী-১৪১৬, মুসলিম-২১৪৮)
[নবী (সা:) এর যুগের সা’র হিসাব : এক সাতে ২ কেজি ৪০ গ্রাম]
আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামাহ ইবনে কা’নাব (রহ:) আবু দাউদ খুদবী (রা:) হবে বর্ণিত করেছেন তিনি বলেছেন হুজুরে পাক (সা:) যখন আমাদের মধ্যে ছিলেন, তখন আমরা বালেগ, নাবালেগ, স্বাধীন ও ক্রীতদাস প্রত্যেকের তরফ হতে এক সা’ পরিমাণ খাদ্য অথবা এক সা পনির কিংবা এক সা যব অথবা এক সা খেজুর কিংবা এক সা কিসমিস প্রদান করতাম। এই ভাবেই আমরা তাহা দিতে থাকিতাম। পরে মুয়াবিয়অ ইবনে আবী সুফিয়ান (রা:) হজ্ব অথবা ওমরার উদ্দেশ্যে আমাদের নিকট আসিয়া মিন্বরে আরোহন করত: সমবেত লোকদের সাথে সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেন। এই সময় তিনি বললেন, আমার মতে সিরিয়ার দুই মুদ গম এক সা খেজুরের গম পরিমান, লোকজন তাহা স্বীকার করে নিল। আবু দাউদ খুদরী (রা:) বললেন, আমি তো জীবিত থাকা পর্যন্ত সেই ভাবে ছদকায়ে ফিতর আদায় করে যাব, যেভাবে আমি পূর্বে আদায় করে এসেছি।
সহীত মুসলিম-২১৫৪, ইমনে মাজাহ-১৮২৯
সদকাতুন ফিতর আদায়ের সময় ঃ
সদকাতুল ফিতর আদায় করার দুটি সময় রয়েছে। ১টি হলো উত্তম সময় অন্যটি হল বৈধ সময়। উত্তম সময় হলো ঈদের দিন ঈদের সালাতের পূর্বে আদায় করা। যেমন হাদীসে এসেছে-
ইমনে উমার থেকে বর্ণিত যে, রাসুল্লাহ (সা:) ঈদাহে যাওয়অর পূর্বে সদকাতুন ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মুসলিম-২১৫৮
ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন সদকাতুন ফিতর হচ্ছে রোজ্যদারদের জন্য পবিত্রতা এবং মিসকিনদের জন্য খাদ্য। আর যে তা ঈদের নামায আদায় করার পূর্বে আদায় করে তা কবুল করা হয়। আর যে উহা ঈদের নামাজের পর আদায় করে, তাহলে তা সদকাতুল ফিতর না হয়ে সাধারণ সদকা হিসেবে আদায় হয়ে যাবে।
আবু দাউদ-১৬১০, ইবনে মাজাথ-১৮২৭
সদকাতুল ফিতর আদায় করার সুযোগ দেয়ার জন্যইতো ঈদুল ফিতরের সালাত একটু বিলম্বে আদায় করা মোস্তাহাব। সদকাতুল ফিতর আদায় করার বৈধ সময় হল: যদি কেউ ঈদের দু একদিন পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করে দেয় তবে আদায় হয়ে যাবে। সহি বোখারিতে আছে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর এ রকম আদায় করতেন। তবে কোন সংগত কারণ ব্যতীত ঈদের সালাতের পরে আদায় করলে সদকাতুল ফিতর হিসেবে আদায় হবে না বরং সাধারণ নফল সদকা হিসেবে আদায় হবে। ওজর বা বিশেষ অসুবিধায় কেউ যদি ঈদের সালাতের পূর্বে আদায় করতে না পারে তবে সে ঈদের সালাতের পর আদায় করবে।
সদকাতুল ফিতর আদায় করার স্থান হলো, সে তার নিজ এলাকার মিসকিনগন হোক বা অন্য এলাকার উহা ইসলামী রাষ্ট্র হোক বা অমুসলিম রাষ্ট্র হোক। এতে কোন দোষ নেই। আর যদি যেখানে সদকা গ্রহন করার মত কোন লোক পাওয়া না যায় তাহলে উহা অন্য কোন স্থানে মিসকীনদের নিকট পাঠিয়ে দিবে। অথবা আদায় করার জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ করবে।
আর ফিতরা পাওয়ার অধিকারী হলো ফকির মিসকীন, অভাবী, এমন ঋনগ্রন্থ যে তার ঋন আদায় করতে সক্ষম নয়। তাদেরকে উহা এক ফিৎরা পরিমান অথবা দ্রকের অধিক ও দেয়া যাবে। কেননা রাসূল (সা:) উহা নিধারণ করেছেন কিন্তু উহা প্রাপকদের সংখ্যা করেননি।
Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/islam/ramadan/2010/zakat-ul-fitr/
Copyright ©2024 PriyoAustralia.com.au unless otherwise noted.