Importance of Salat

by Shariful Islam | August 19, 2010 3:08 am

সালাতের গুরুত্ব :

ইসলাম আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্ম। এ ধর্মের দ্বিতীয় ভিত্তিমূল সালাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘পাঁচটি ভিত্তির ওপর ইসলামের বুনিয়াদ।’ (বুখারি ও মুসলিম) এ পাঁচটির মধ্যে দ্বিতীয়টি হল সালাত।

কিয়ামতের দিন বান্দার সর্ব প্রথম সালাতের হিসাব নেয়া হবে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম বান্দার সালাতের হিসাব হবে। যদি তার সালাত ঠিক হয় তবে তার সব আমলই ঠিক হবে। আর তার সালাত বিনষ্ট হলে, সব আমলই বিনষ্ট হবে। (তিরমিজি : ২৭৮)

সালাত মুমিনদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের প্রশংসা করে বলেন, ‘তারা সালাত কায়েম করে।’ (বাকারা : ০৩)

যারা সালাতের ব্যাপারে অবহেলা প্রদর্শন করে তাদের নিন্দা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের পর আসল এমন এক অসৎ বংশধর যারা সালাত বিনষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং শীঘ্রই তারা জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে।’ (মারইয়াম : ৫৯)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে আসরের সালাত ত্যাগ করল তার আমল বরবাদ হয়ে গেল।’ (বুখারি : ৫২৬)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা নিজ সন্তানদের সালাতের নির্দেশ দাও, যখন তারা সাত বছরে পর্দাপণ করে। আর যখন তাদের বয়স দশে উপনীত হয় তখন সালাতের জন্য প্রহার কর এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও।’ (সহিহ আল-জামে : ৫৮৬৮)

সালাতের ফজিলত :

সালাত কবিরা গুনাহ ব্যতীত সকল পাপ মোচন করে দেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এবং এক জুমা থেকে অপর জুমা মধ্যবর্তী সময়ে কৃত গুনাসমূহের কাফ্ফারা। যাবৎ সে কবিরা গুনাহে লিপ্ত না হয়।’ (মুসলিম : ৩৪৪)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেন, ‘যদি তোমাদের কারো বাড়ির সামনে একটি নদী থাকে আর সে দৈনিক পাঁচবার তাতে গোসল করে, তবে কি তার শরীরে ময়লা থাকতে পারে? সাহাবিরা বললেন, না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের দৃষ্টান্তও তদ্রুপ। আল্লাহ তাআলা এর দ্বারা গুনাহ মোচন করে দেন।’ (মুসলিম – ৪৯৭)

তিনি আরো একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেন, ‘মুসলিম বান্দা যখন আল−াহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করে তখন তার গুনাসমূহ এমনভাবে ঝরে পড়ে, যেমন পড়ে যাচ্ছে এ গাছের পাতাসমূহ।’ (আহমদ – ২০৫৭৬)

সালাতের গুণগত মানের ভিত্তিতেই পরকালের সফলতা ও জান্নাতের সম্মানিত স্থান নির্ধারিত হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশ্যই মুমিনগণ সফল হয়েছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়াবনত।’ (আল-মুমিন – ১-২) অতঃপর বলেন, ‘আর যারা নিজদের সালাত হিফাজত করে তারাই হবে ওয়ারিশÑ যারা ফেরদাউসের অধিকারী হবে। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।’ (আল-মুমিন -৯-১১)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, ‘সেজদা অবস্থায় বান্দা আল−াহর সবচেয়ে নৈকট্য অর্জন করে। সুতরাং সেজদায় তোমরা বেশি বেশি দুআ কর।’ (মুসলিম : ৭৪৪)

আনাস রা. বলেন, ‘মেরাজের রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়। অতঃপর তা কমিয়ে পাঁচ রাকাত করা হয়। পরে ডেকে বলা হয়, হে মুহাম্মদ, আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয় না। তুমি এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের বিনিময়ে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সওয়াব অর্জন করবে।’ (তিরমিজি: ২১৩)

মুসলমানদের জীবনে সালাতের প্রভাব :

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতের ভূমিকা ও তার প্রভাব প্রসঙ্গে বলেন, ‘তোমাদের কেউ ঘুমালে শয়তান তার ঘাড়ের পশ্চাতে তিনটি গিরা দিয়ে দেয়। প্রতিটি গিরায় সে বলে, এখনও অনেক রাত বাকি, ঘুমাও। যদি সে জাগ্রত হয় ও আল্লাহর নাম স্মরণ করে, একটি গিরা খুলে যায়। যদি সে অজু করে দ্বিতীয় ঘিরাটি খুলে যায়, যদি সে সালাত আদায় করে, তবে তৃতীয় ঘিরাটিও খুলে যায়। ফলে সে সকাল করে কর্মোদ্যম ও প্রফুল্ল চিত্ত নিয়ে, অন্যথায় সে সকাল করে আলস্য, অকর্মা ও অপবিত্র মন নিয়ে।’ (বুখারি : ১০৭৪ )

আল−াহ বলেন, ‘নিশ্চয় মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অস্থির করে। যখন তাকে বিপদ স্পর্শ করে তখন সে হয়ে পড়ে অতিমাত্রায় উৎকণ্ঠিত। আর কল্যাণ যখন তাকে স্পর্শ করে তখন সে হয়ে পড়ে অতিশয় কৃপণ, সালাত আদায়কারীগণ ছাড়া। যারা তাদের সালাতের ক্ষেত্রে নিয়মিত।’ (মাআরেজ : ১৯-২৩)

সালাত ত্যাগকারীর প্রতি শরীয়তের বিধান

যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত পরিত্যাগ করে, যদি সে সালাত ওয়াজিব হওয়ার (অপরিহার্যতার) বিষয়টি স্বীকার করে, তবে ওলামাদের -দু’টি মতের সবচেয়ে সহীহ- মত অনুযায়ী সে বড় কুফরী করবে। আর যদি সালাত ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি অস্বীকারকারী-অবিশ্বাসী হয়, তা হলে ওলামাদের সর্বসম্মত মতে সে কাফের হয়ে যাবে। এ সম্পর্কে নাবী কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এরশাদ হলো :

কর্মের মূল হচ্ছে ইসলাম, তার স্তম্ভ হচ্ছে সালাত এবং তার সর্বোচ্চ চূড়া হচ্ছে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ বা সংগ্রাম করা। ( তিরমিযী এবং ইবনে মাজাহ)

নাবী কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আরো এরশাদ হলো,

“ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত ছেড়ে দেয়া।”(মুসলিম:১৪৯)

অতএব প্রতিটি মুসলমানের কর্র্তব্য প্রত্যেক সালাত যথাসময়ে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করা। তবেই আমরা দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভ করতে পারব। বাঁচতে পারব উভয় জগতের অকল্যাণ থেকে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/islam/2010/importance-of-salat/