by Shariful Islam | November 12, 2009 4:12 pm
কোরবানী ইসলামের ১টি অতি গুরুত¦পূর্ন বিষয়। হানাফি মাজহাব অনুসারে কোরবানী ওয়াজিব অনান্য মাজহাব অনুসারে সুন্নতে মুয়াক্কাদা । কোরবানীকে আরবীতে বলা হয় উদাইয়া (টফযরুধ) । এর অর্থ “ রক্ত উৎসর্গ” এবং কোরবানী ১টি উর্দু ও ফারসী শব্দ যা আরবি শব্দ কোরবান হতে এসেছে। পারিভাষিক অর্থ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ত্যাগ।
হযরত যায়েদ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম , ইয়া রাসূলুল্লাহ, কোরবানি কি ? তিনি বললেন তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আঃ) এর সুন্নাত। আমি বললাম, কোরবানি করলে কি পাব? তিনি বললেন প্রত্যেকটি পশমের বিমিয়ে ১টি করে নেকি পাবে।
(ইবনে মাযহা)
কোরবানীর করার মাধ্যমে আমরা ইবরাহিম (আঃ) ও ইসমাইল(আঃ) এর আল্লাহর প্রতি ভালবাসা ও ত্যাগের ইতিহাসকে ন্মরণ করে থাকি। আল্লাহ বলেন,
হে ইবরাহিম, তুমি তো সত্যিই স্বপ্নের আদেশ পূর্ন করলে। এভাবে আমি সৎকর্মপরায়াণদের পুরস্কৃত করে থাকি। এত ছিল তার জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। আমি তাকে ছাড়িয়ে দিলাম এক মহান কোরবানির বিনিময়ে এবং তাকে রেখে দিলাম পরবর্তীদের মাঋে স্মরনীয় করে’
(সূরা সাফফাত, ১০২-১০৮)
সমর্থবান ধনীদের কোরবানী দেয়া অত্যাবশ্যক
হযরত আয়শা (রা) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল বলেন, কোরবানির দিনে কোরবানির পশুর রক্ত প্রবাহিতের চাইতে অন্য কোন ইবাদত আল্লাহকে অধীক সন্তুষ্ট করতে পারে না।
( ইবনে মাযহা)
হযরত আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেন, যার কুরবানি দেয়ার সামর্থ রয়েছে, কিন্তু যদি সে কোরবানী না করে তবে সে যেন ঈদগাহে না আসে
( ইবনে মাযহা)
ঈদের নামাজের পূর্বে কোরবানি করা যায়েজ নয়
বারা ( রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী করীম (সা) বলেছেন আমাদের এদিনে আমরা সর্ব প্রথম যে কাজটি করবো, তা হলো নামাজ আদায় করব। এর পর এসে আমরা কোরবানী করবো। যে ব্যক্তি এভাবে তা আদায় করল সে আমাদের নীতি অনুসরণ করল। আর যে ব্যক্তি আগেই যবহ করল, তা এমন গোশতরুপে গণ্য যা সে তার পরিবার পরিজনের জন্য আগাম ব্যবস্থা করল। এটা কিছুতেই কোরবানী বলে গণ্য নয়।
(সহীহ বুখারী)
একস্থানে বসবাস করে অন্য স্থানে কোরবানী করাও যায়েজঃ
মাসরক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি আয়শা (রাঃ) এর কাছে এসে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন হে উম্মুল মুমিনীন, কোন ব্যক্তি যদি কাবার উদ্দেশ্যে কোরবানী পশু পাঠিয়ে দেয় এবং নিজে আপন শহরে অবস্থান করে নির্দেশ দেয় যে তার কোরবানির পশুকে যেন মালা পরিয়ে নেয়া হয় , তাহলে সে দিন থেকে লোকদের হালাল হওয়া পর্যন্ত কি সেই ব্যক্তির ইহরাম অবস্থায় থাকতে হবে? মাসরাক (রাঃ) বলেন, তখন আমি পর্দ্দার আড়াল হতে তার (আয়শা (রাঃ)) হাত তালির আওয়াজ শুনলাম। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) এর কোরবানীর পশুর গলায় রশি পাকিয়ে পরিয়ে দিতাম। এর পর তিনি ঐ পশুকে কাবার উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিতেন। তখন স্বামী স্ত্রীর বৈধ কাজ, লোকদের ফিরে আসা পর্যন্ত নবী করীম (সাঃ) এর উপর ইহা হারাম হতো না।
(সহীহ বুখারী)
কোরবানীর গোশত/ মাংস জমিয়ে রাখা প্রসঙ্গে
সালমা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন তোমাদের যে ব্যক্তি কোরবানি করে, যে যেন তৃতীয় দিনের পর এমন অবস্থায় সকাল না করে যে, তার ঘরে কোরবানি গোশতের কিছু অংশ বাকী থেকে যায়।
পরবর্তী বছর লোকেরা আরজ করল ইয়া রাসূল্লাহ (সাঃ) আমরা গত বছর কোরবানীর গোশত নিয়ে যে রূপ করেছিলাম এ বছরও কি সেরূপ করব ? উত্তরে নবী করীম (সাঃ) বললেন, নিজেরা কোরবানি গোশত খাও, অন্যকেও খেতে দাও এবং কিছু জমা রাখ। যেহেতু গত বছর ক্ষুধার কষ্টে পড়েছিলাম, তাই আমি চেয়েছিলাম তোমরা তাদেরকে সাহায্য কর ( এ বছর সেরূপ নয়)
(সহীহ বুখারী)
আয়শা (রা) বলেন, আমরা কোরবানীর গোশত লবন মাখিয়ে রেখে দিতাম। অতঃপর তা থেকে কিছু অংশ নবী করীম (সা) এর খদমতে পেশ করতাম। তিনি বলতেন, কোরাবানির গোমত তিন দিন পর্যন্তই খাও এ নিদের্শ অলঙ্গনীয় বিধানরুপে দেয়া হয়নি। বরং তিনি অন্যদেরকেও খাওয়ার সুযোগ দিতে চেয়েছিলেন। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহই ভাল জানেন।
(সহীহ বুখারী)
কোরবানির শিক্ষণীয় বিষয়ঃ
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে- তোমাদের কোরবাণির জন্তুর রক্ত, গোশত কোন কিছুই আল্লাহর দরবারে পৌছে না ,পৌছে তোমাদের তাকওয়া
( সূরা হজ্জ-৩৭)
অর্থাৎ তাকওয়া বা আল্লাহভীতি ছাড়া মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। আর নিয়ন্ত্রনহীন জীবন কখনো সফলতার দাড়ে পৌছাতে পারে না।
আমরা কোরবানী করি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় । আর মুত্তাকী বা সত্যিকার বিশ্বাসীরই কোরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে থাকে।
“ আদমের দুই পুত্রের বৃত্তান্ত তুমি তাদের যথাযথভাবে শোনাও। যখন তারা উভয়ই কোরবানি করেছিল, তখন একজনের কোরবানি কবুল করা হলো, অন্য জনেরটা কবুল হলো না। (যার কোরবানি কবুল হলো না) সে বলল, আমি তোমাকে ( যার কোরবানী কবুল হলো) অবশ্যই হত্যা করব। সে বলল, আল্লাহ শুধু মুত্তাকীদের কোরবানিই কবুল করেন। ( সুরা মায়েদা -২৭)
আল্লাহ মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃস্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছে, কর্তৃত্ত্ব দান করেছেন সমস্ত সৃষ্টি জগতের উপর। আর তাই আল্লাহ বলেন-
এমনিভাবে আমি এগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় করো।
( সূরা হজ্জ-৩৬)
কাজেই যে স্রষ্টা আমাদের সম্পদ দান করে ইহকারে সুখী করেছেন। ঠিক তেমনি ভাবে পরকালেও যেন মুক্তি লাভ করতে পারি। তার জন্য আল্লাহর উদ্দেশ্যে আমাদের শুকরিয়া সরূপ কোরবানি করতে হবে। পবিত্র কুরআনের বাণিঃ-
“ অতএব তোমরা রবের জন্য সালাত আদায় কর, এবং তারই উদ্দেশ্যে কোরবানি কর। ( সূরা কাওছার-২)
Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/islam/2009/%e0%a6%95%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a6%86%e0%a6%a8-%e0%a6%93-%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%80%e0%a6%b8%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%86%e0%a6%b2%e0%a7%8b%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%89%e0%a6%a6%e0%a6%be/
Copyright ©2024 PriyoAustralia.com.au unless otherwise noted.