অষ্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস উদযাপন প্রসঙ্গ

by Ajoy Kar | August 24, 2019 2:24 pm

এবছর অষ্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী’ ( জাতীয় শোক দিবস ২০১৯ ) উদযাপন ছিল তাৎপর্যপূর্ণ ।

‘জাতীয় শোক দিবস ২০১৯’ উদযাপন উপলক্ষ্যে কেনবেরা ও সিডনিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন কর্তৃপক্ষ একই দিনে প্রায় একই সময়ে (বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়) বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্প স্তবক অর্পণ করেন। রাষ্ট্রদূত হিজ এক্সিলেন্সি সুফিউর রহমান কেনবেরাতে (সন্ধ্যা ৭.০০ টায় ) আর কনসুল জেনারেল জনাব নজরুল ইসলাম সিডনিতে (সন্ধ্যা ৭. ৩০ টায়) বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্প স্তবক অর্পণ করেন।

কনস্যুলেট জেনারেল সিডনী অফিসের উদ্যোগে আয়োজিত শোকসভার আলোচনা অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরান তেলোয়াত ও গীতা পাঠ হয় ( সুত্র: সিডনিতে জাতীয় শোক দিবস পালিত, সিডনিপ্রতিদিন.কম, তারিখ: ১৬ আগষ্ট ২০১৯) । কেনবেরাতে রাষ্ট্রদূতের অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয় ( সুত্র: জাতীয় শোক দিবসে বাংলাদেশ হাইকমিশন, ক্যানবেরায় বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন, প্রিয়অস্ট্রেলিয়া।কম, তারিখ: ১৯ আগষ্ট ২০১৯) ।

বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম এবং মুক্তিযুদ্ধের উপর রচিত বিভিন্ন বই ও তার ছবি সংগ্রহ করে বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রদূত হিজ এক্সিলেন্সি সুফিউর রহমান কেনবেরাতে উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু কর্নার। প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেককেই তিনি এস,এম,এস পাঠিয়ে  আমন্ত্রণ জানান তার এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য ।

অনেকের মতো আমিও তার নিমন্ত্রনে সাড়া দিয়ে দূতাবাসের সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম- বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়েছিলাম, শুনেছিলাম বিভিন্ন বক্তার আলোচনা । 

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শনের  উপর আলোকপাত করতে গিয়ে রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে বলেন,  বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে ভাষা, ধর্ম ও স্বাধিকার বিষয়গুলো একসূত্রে গাঁথা ছিল। তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ গঠনের আন্তরিক প্রয়াসে সবাইকে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বানও  জানান।

আমি যতদূর জানি, হাইকমিশনের বর্ধিত অংশ হচ্ছে কনসুলেট অফিস। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে হাইকমিশন তার কার্যক্রম পরিচালনা করে। হাইকমিশনের নির্দেশে কনসুলেট অফিস সাধারনত হোস্ট কান্ট্রির প্রধান প্রধান শহর গুলিতে সামাজিক, অর্থনৈতিক, ও সাংস্কৃতিক বন্ধন দৃঢ় করতে ভূমিকা রাখে। 

সহজ ভাবে আমি যেমনটি জানি, সিডনিতে আমাদের কনসুলেট অফিস আমাদের হাই কমিশনের একটি বর্ধিত অংশ। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ হাইকমিশন ক্যানবেরায় তার সরকারি কার্যক্রম চালায়, আর হাইকমিশনের নির্দেশে কনসুলেট অফিস হাতে নেয় বিভিন্ন কার্যক্রম।  

সূত্র: সিডনিপ্রতিদিন.কম

সরকারি নির্দেশ মেনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ হাইকমিশনগুলি ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করে, শহীদদের আত্মার শান্তির কামনা করে প্রাথর্না করে।

১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে কেনবেরাতে রাষ্ট্রদূত কোরান থেকে পাঠ করিয়েছেন কিন্তু অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের ব্যবস্থা রাখেন নি।

আমি যতদূর জানি, কয়েক মাস আগে ক্যানবেরায় বাংলাদেশ থেকে অভিবাসনকারী হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু লোকজন শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে গীতা পাঠ করতে চেয়ে হিজ এক্সিলেন্সি সুফিউর রহমান বরাবর অনুরোধ জানিয়েছিল।  তা স্বত্বেও আজ অবধি ‘গীতা পাঠ’ করে  শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করার সুজোগ পায়নি তারা ।

কেনবেরাতে হাইকমিশনের অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের যথাযোগ্য মর্যদায় তাদের নিজ নিজ ধর্মমতে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করার সুজোগ না দিয়ে ‘অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ’ সমাজ গঠনে সবাইকে অংশগ্রহণের যে আহ্বান হিজ এক্সিলেন্সি জানিয়েছেন তার সেই আহ্বান কতটুকু আন্তরিক তা নিয়ে অনেকের মতো আমার মনেও প্রশ্ন জেগেছে।  

আমি জানি, অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টার ঘাটতি নেই । কেনবেরাতে হাইকমিশনার তার কোনো অনুষ্ঠানেই এযাবৎ গীতা পাঠ করান নি জেনেও, সিডনিতে কি কারণে কনসুল জেনারেল গীতা পাঠ করিয়েছেন তা আমার জানা নেই । তবে ‘অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ’ দেশ গঠনে সকল ধর্মের বিশ্বাসীরা যাতে অংশগ্রহন করতে পারে সে প্রয়াস চালাতে কনসুল জেনারেল সাহেব সিডনির অনুষ্ঠানে গীতা পাঠের যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটি সঠিক হয়েছে।  

কেনবেরায় বাংলাদেশ হাইকমিশন ভবনে ‘বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী’ অনুষ্ঠানে গীতা পাঠ না হলেও কনসুলেট জেনারেলের অফিসে ‘গীতা পাঠ’ হয়েছে জেনে প্রবাসী বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকের মতোই আমি কনসুল জেনারেল জনাব নজরুল ইসলাম’কে ধন্যবাদ জানাই।

Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2019/15151/