“লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার” – একুশের চেতনা’র বৈশ্বিক প্রাতিষ্ঠানিক দর্শন(উপসংহার)

by Nirmal Paul | December 4, 2018 10:14 am

“লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার– একুশের চেতনা’র বৈশ্বিক প্রাতিষ্ঠানিক দর্শন

উপসংহার (বাঙালির করনীয় এবং প্রাপ্তি)

নির্মল পাল    

‘লাইব্রেরী’ তথ্য-উপাত্ত তথা তথ্য সম্পর্কিত উপাদান, উল্লেখযোগ্য সাহিত্য, রচনা, দর্শন অথবা চিত্রকলা-সংস্কৃতির সংগ্রহশালা; যে সংগ্রহশালা থেকে বিশেষ কোন নির্ধারিত বিষয়ে উৎসাহী ব্যাক্তি বা গুষ্টি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিবিড় ও গভীরভাবে জানতে পারে, বা নিতে পারে সাময়িকভাবে ধার করা বা ব্যবহারের বিশেষ সুবিধা।  পাবলিক লাইব্রেরী’ একটি সমাজ ও সভ্যতার ক্রমোত্থান-পতন বা বিবর্তনের প্রামান্য তথ্যভাণ্ডার, ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্তের যোগসূত্র বা পথিকৃৎ, এককথায় ‘সমাজ দর্পণ’। সাধারণতঃ একটি পাবলিক লাইব্রেরীর তথ্যসামগ্রী থেকে সংশ্লিষ্ট সমাজ, সমাজ-ব্যবস্থা, সভ্যতা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির উত্থানের ঐতিহাসিক ক্রমধারা চিত্রিত হয়। স্থানীয়ভাবে প্রচলিত ভাষা বা ভাষাসমূহই এই তথ্যভাণ্ডারের মাধ্যম। প্রকাশকালীন সময়ে প্রচলিত ভাষার মাধ্যমেই গ্রন্থিত, প্রকাশিত বা প্রচারিত উল্লেখযোগ্য রচনা, প্রকাশনা, ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্তাদি প্রাচীনকাল থেকেই স্থানীয় লাইব্রেরীতে সংগৃহীত হয়ে থাকে। মানবসভ্যতা, সমাজ, শিক্ষার প্রচার প্রসার এভাবেই ধীরে ধীরে জন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বহুতল ভবনের ন্যায় আজকের গগনচুম্বী আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে সমাসীন। সভ্যতা-শিক্ষা-বিজ্ঞান-প্রযুক্তির বহুমুখী ব্যাপকতর উন্নয়নের সাথে সাথে সমৃদ্ধ হয়েছে লাইব্রেরীর তথ্য ভাণ্ডার। সময়ের প্রয়োজনের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক তথ্যের প্রাচুর্যতায় প্রাচীনতম তথ্যভাণ্ডার প্রতিস্থাপিত হয়ে আসছে প্রতিনিয়ত। ক্রমবিবর্তিত ধারায় শিক্ষা সমাজ সভ্যতায় ব্যপক অগ্রগতির সাথে প্রচলিত ভাষার গতিশীল পরিবর্তনে আধুনিকতার ছাপ স্পষ্ট। শিক্ষার ক্রমবিকাশ এবং সমাজ বিবর্তন ও সম্প্রসারণের সাথে প্রচলিত কথ্যভাষার পরিবর্তিতরূপের প্রতিফলনই ভাষা পরিবর্তনের ভিত্তি নির্ণায়ক। যা প্রকাশনা শিল্পকে নিয়মিতভাবে সমৃদ্ধকরে যুগোপযোগী করে আসছে। বিশ্বব্যাপী ভাষা পরিবর্তনের এই ধারা অতিদ্রুত সম্প্রসারিত হলেও সম্প্রচারিত নয়। আধুনিক বিশ্বায়নের তথ্য-প্রযুক্তি সম্প্রচারের সমন্বয়মুখী ঢেউ এই ধারায় পরোক্ষভাবে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বসমাজ আজ বহুজাতিক সমাজমুখী। বহুভাষাভাষী সমাজের আধুনিক মানুষ আজ জীবন ও জীবিকার তাগিদে নিজের অজান্তে নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতির সংস্কারের বেড়াজাল থেকে বের হয়ে কমনভাষা ভিত্তিক শিক্ষা গবেষণা বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিমুখী। ফলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রভাবিত বিশ্বায়নের ফলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগুষ্টির ব্যবহৃত অধিকাংশ ভাষাসমূহের ব্যবহার দ্রুত সংকুচিত হতে হতে প্রায় বিলীনের মুখোমুখি। সামাজিক সেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্বব্যাপী প্রচলিত শত-সহস্র বছরে গড়ে উঠা লাইব্রেরী প্রথার সাথে এই ভয়াবহ পরিবর্তনের খাপ খাওয়ানো প্রযুক্তিমুখি সভ্য মানবজাতির জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাহিত্য তথ্য ইত্যাদির ডিজিটালাইজেশন বহু প্রাচীনকাল থেকে সংগৃহীত প্রকাশনা সামগ্রীর সংরক্ষণ প্রক্রিয়া সংকুলানে বিভিন্নভাবে প্রচণ্ড ঝুঁকির সন্মুখীন। বিশেষ করে প্রকাশনা সামগ্রীর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ভাষার প্রকাশনায় ব্যবহৃত ভাষার বর্ণমালা এবং বর্ণমালার উচ্চারণ সম্পর্কিত কোন নমুনা বা তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা প্রচলিত লাইব্রেরী সেবা প্রথায় অন্তর্ভুক্ত না থাকার কারনে প্রাচীনতম ভাষাসমূহ তথা ক্ষুদ্র জনগুষ্ঠির অথবা অপেক্ষাকৃত কম প্রচলিত ভাষাসমূহ দ্রুত বিলীন হওয়ার মত ভয়াবহভাবে হুমকির মুখোমুখি। ইউনেস্কোর গবেষণা মতে প্রতি পনের দিনে একটি করে ভাষা বিলীন হচ্ছে অধুনা দ্রুত প্রযুক্তিমুখি সভ্য সমাজ থেকে। বিলীন হওয়া ভাষা ভিত্তিক শত-সহস্র সমাজ সভ্যতার ইতিবৃত্ত সকলের অজান্তে আধুনিক সভ্যতার ভয়াবহ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আগামী প্রজন্মের প্রয়োজনে হারিয়ে যাওয়া এই সকল সমাজ সভ্যতা সম্পর্কে জানা বা গবেষণার যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া হবে একটি দুঃসাধ্য বিষয়। মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশ বা উত্থানের ঐতিহাসিক ধারা অক্ষুন্ন রাখাটা হবে প্রশ্নবিদ্ধ।

বিশ্বব্যাপী বর্তমানে প্রচলিত লাইব্রেরী সেবা ব্যাবস্থায় “একুশে কর্নার” দর্শনের অন্তর্ভুক্তি, এবং কার্যকরী বাস্তবায়ন বিশ্বের সর্বত্র স্থানীয় সকল ভাষার বর্ণমালা এবং সংশ্লিষ্ট বর্ণমালার উচ্চারণ সম্পর্কিত নমুনা বা তথ্য সংরক্ষণের স্থায়ী ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। ভাষা অবক্ষয়ের বৈশ্বিক ধারা প্রতিস্থাপিত হবে ভাষা সংরক্ষণের নিমিত্তে সমন্বিত গণসম্পৃক্ততার মধ্য দিয়ে। যে ধারা কালক্রমে স্থায়ীভাবে প্রচলিত লাইব্রেরী সেবাপ্রথার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে বিশ্বায়নমুখী বহুভাষা ভিত্তিক পরিবর্তিত বহুজাতিক সমাজ ব্যবস্থার ধারার সাথে ঝুঁকিপূর্ণ ভাষাসমূহ সংরক্ষণের সহনশীল ব্যবহারে আগ্রহ সৃষ্টি এবং যথারীতি চর্চার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ভাষা অবক্ষয়ের ভয়াবহধারা রোধে বিশেষ কার্যকরী ভুমিকা রাখতে সক্ষম হবে। বিশ্বব্যাপী ইউনেস্কোর গৃহীত ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদযাপনে এমএলসি মুভমেন্টের সংকলিত বার্তা “কন্সারভ ইউর মাদার ল্যাংগুয়েজ” একুশে কর্নার পোস্টারের ইমেজের মাধ্যমে প্রত্যেকটি লাইব্রেরীতে ঝুঁকিপূর্ণ মাতৃভাষাসমূহ রক্ষা ও সংরক্ষণে নিয়মিত গণসংযোগ সৃষ্টি, অর্থবহ প্রচারণা ও গতিশীল করায় কার্যকরী ভুমিকা রাখবে। পৃথিবীর সর্বত্র স্থানীয় সকল ভাষাভাষী লাইব্রেরী সেবা প্রক্রিয়ায় সক্রিয় সহায়তায় নিজ নিজ ভাষা সংরক্ষণ এবং চর্চায় হবে উৎসাহিত। নিজ নিজ মাতৃভাষার চর্চা এবং সংরক্ষণ বিষয়টি সকল ভাষাভাষীর কাছেই একটি নৈতিক দায়িত্ব এবং কালক্রমে সার্বজনীন বৈশ্বিক সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। বিশ্ব সভ্যতা-শিক্ষার মাধ্যম এবং সমাজ বিবর্তনের ধমনীসরূপ ভাষাগুলি বিলীনের ঝুঁকিমুক্ত হবে। নিশ্চিত হবে বিশ্বায়নের ধারার সাথে ভাষাগুলি সহনশীল অবস্থানে টিকে থাকার জন্য গণসম্পৃক্তকরনের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ। লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার এবং আনুসাঙ্গিক লাইব্রেরী সেবাপ্রথার প্রাতিষ্ঠানিক বাস্তবায়ন স্থানীয় সকল ভাষাভাষীকে নিজ নিজ ভাষা চর্চা, রক্ষা এবং সংরক্ষণে বিশেষভাবে উৎসাহিত করবে, নিশ্চিত করবে ভাষা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট ভাষাভাষীর অংশগ্রহণের প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ।

বিশ্বব্যাপী ভাষা অবক্ষয়ের ভয়াবহতা রোধকল্পে মহান ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’কে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে উদযাপনে ইউনেস্কোর প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত ভাষা হিসেবে ‘বাংলা’ এবং জাতি হিসেবে ‘বাঙালি’কে বিশ্বের সকল ভাষাভাষী এবং জাতীর কাছে এক ব্যতিক্রমী সম্মানীয় অবস্থানে স্থায়ীভাবে স্থান করে দিয়েছে। ঈর্ষান্বিত এই বিরল আন্তর্জাতিক সম্মানীয় অর্জনকে স্থায়ীভাবে অর্থবহ করে তোলা, তথা বিশ্বের সকল ভাষাভাষীর উপলব্দিতে মহান একুশের চেতনাকে সম্মানীতভাবে গ্রহণযোগ্য করে তোলা, এবং সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠা করার মূল দায়িত্ব বাঙালিদের উপর বর্তায়। ভয়াবহভাবে ঝুঁকিপূর্ণ সকল মাতৃভাষা সুরক্ষায় প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’তে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদযাপনের ইউনেস্কোর মিশনের পবিত্র দায়িত্ব পালনে সক্রিয়ভাবে কার্যকরী অবদান রাখা বাঙালিদের জন্য একটি বিশ্বব্যাপ্ত সুবর্ণ সুযোগ। বিশ্বের প্রতিটি  ‘লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার’ দর্শনের অর্থবহ প্রবর্তন বাঙালিদের জন্য বিশ্বব্যাপী এই বিরল সুযোগের যথার্থ প্রয়োগের প্রাতিষ্ঠানিক কৌশল, এবং স্থায়ী ভিত্তি রচনা করবে। যার ফলে একদিকে বিশ্বব্যাপী ঝুঁকিপূর্ণ অবলুপ্তিমুখী ভাষাসমূহ সুরক্ষায় পদ্ধতিগতভাবে একটি প্রাতিষ্ঠানিক স্থায়ী ব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে, অন্যদিকে মাতৃভাষা ‘বাংলা’ ভাষা আন্দোলনে উজ্জীবিত মহান একুশের চেতনা, মাতৃভাষা রক্ষায় ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের মত বিরল দৃষ্টান্তের ইতিহাস অন্যান্য ভাষাভাষীকে নিজ নিজ ভাষা রক্ষার গভীরভাবে অনুপ্রেরণা জোগাবে। একুশে কর্নারের পোস্টারের ইমেজের মাধ্যমে অন্যান্য ভাষাভাষীরা বাংলাভাষা, বাংলা ভাষা আন্দোলন, বাঙালি সংস্কৃতি, মহান একুশের প্রেক্ষাপট, পর্যায়ক্রমিক ইতিহাস এবং সর্বোপরি মাতৃভাষা ভিত্তিক স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় সম্পর্কে সম্যকভাবে অবগত হবে। কালক্রমে বাংলা ভাষা এবং বাংগালি জাতি পৃথিবীর যেকোন ভাষাভাষীর কাছেই মাতৃভাষা সংরক্ষণের দৃষ্টান্ত হিসেবে সম্মানিত অবস্থানে উত্তীর্ণ হবে। বিশ্বব্যাপী ভাষানুরাগী গবেষক, পেশাজীবীরা বাংলাভাষা এবং বাঙালি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা ও শেখায় বিশেষভাবে উৎসাহিত হবে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রবাসের বহু ভাষাভাষীভিত্তিক সমাজে বেড়ে উঠা আমাদের নতুন প্রজন্ম তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্যান্য ভাষাভাষীদের কাছে বিশেষভাবে মূল্যায়ন পাবে, এবং গর্বিত চিত্তে মাতৃভাষা বাংলা শেখা এবং চর্চায় অধিকতর মনযোগী হবে। প্রবাসে বসবাসকারী বাঙালি উত্তরসূরিদের মাতৃভাষা বাংলাভাষা শেখা, চর্চার বিষয়টি অন্যান্য ভাষাভাষীদের কাছে নিজ নিজ মাতৃভাষা শেখা ও চর্চায় অনুপ্রেরণার উদাহরন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।

বিশ্বব্যাপী লাইব্রেরীসমূহে “একুশে কর্নার” দর্শন প্রাতিস্থানিকভাবে প্রবর্তনের বিষয়টি এখন সময় এবং ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপর নির্ভরশীল। বিগত ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সিডনীর এসফিল্ড পাবলিক লাইব্রেরীতে স্থানীয় কাউন্সিলের মেয়র এবং স্টেট এমপি কর্তৃক পৃথিবীর প্রথম টুয়েন্টি ফার্স্ট (একুশে) কর্নার’ উদ্বোধনের পর থেকে “একুশে কর্নার” দর্শনটি স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সকল মহলের কাছে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। এই দর্শনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার স্থাপনাকে সামনে রেখে বাংলাদেশে ইউনেস্কোর দ্বিতীয় ক্যাটাগরি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত সংস্থা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সিটিউট, বাংলাদেশ জাতীয় কমিশন ফর ইউনেস্কো, বাংলাদেশ গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ লাইব্রেরী এসোশিয়েশনের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘মাতৃভাষা সংরক্ষণ আন্দোলন’ নামক একটি সাপোর্ট সংগঠন। এই সংগঠনের নেতৃত্বে ২৮শে ফেব্রুয়ারি’১৭ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সিটিউটে ‘লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার স্থাপনা’ নামক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় এবং বাংলাদেশ লাইব্রেরী এসোশিয়েশনের সাথে নিবন্ধিত ৩৫০০ লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অস্ট্রেলিয়া ক্যাপিটাল টেরিটোরি ল্যাজিসল্যাটিভ এসেম্বলি ১৩-৯-১৭ তারিখে প্রত্যকটি লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার প্রতিষ্ঠার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। অস্ট্রেলিয়া নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যস্থ কাম্বারল্যান্ড কাউন্সিল ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০১৯ এর মধ্যে কাউন্সিলস্থ সকল লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার স্থাপনা বাস্তবায়নের কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলেছে। একুশে কর্নার দর্শন এর কৌশল প্রণয়ন এবং ব্যাতিক্রমী অগ্রগতির জন্য ইউনেস্কোর প্রশংসা, ইউনেস্কোর কর্তৃক ০৭-৭-১৭ তারিখের স্কাইপ মিটিংএর আয়োজন এবং এমএলসি মুভমেন্ট ইন্টারন্যাশন্যালকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সিটিটিউটের সাথে পার্টনারশিপে কাজ করার বিষয়ে ইউনেস্কোর সুনির্দিষ্ট প্রত্যায়ন এই দর্শনের বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতার সুস্পষ্ট ইংগিত বহন করে। “একুশে কর্নার” এবং তৎসংশ্লিষ্ট সংকলিত কৌশলগুলি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব উত্থাপন এবং সাধারণ পরিষদের অনুমোদন লাভ আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষামাত্র। প্রত্যেকটি লাইব্রেরীতে “একুশে কর্নার” এর কার্যকরী বাস্তবায়ন বিশ্বসমাজে বাংলা ভাষা এবং বাঙালি জাতিকে ঝুঁকিপূর্ণ ভাষা রক্ষার প্রেরনা হিসেবে ঈর্ষনীয় চিরস্থায়ী আসনে অধিষ্ঠিত করে রাখবে। আদি সভ্যতা, ভাষা ও কৃষ্টি তথা প্রত্যেকটি ভাষাভাষীর স্বার্থে বৈশ্বিক “একুশে কর্নার” দর্শনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার লক্ষ্যে প্রতিটি বাঙালি একযোগে মহান একুশের চেতনায় কাজ করা প্রয়োজন।

-শেষ-

পরবর্তী লেখাঃ

একুশের চেতনার বৈশ্বিক প্রাতিষ্ঠানিকতা অর্জন

বাস্তবায়নের রূপরেখা

 

Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2018/%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%8f%e0%a6%95%e0%a7%81%e0%a6%b6%e0%a7%87-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a8%e0%a6%be-3/