মা, মাতৃত্ব এবং মাতৃভাষা

by Najmin Mortuza | May 15, 2018 10:35 am

অলিক পোষ্ট অফিসের দিকে রোজ ধেয়ে যাই। ডাক হরকরা একটা ঘুমপাড়ানী গান নিয়ে এসো, মনকে চকিত করে এমন গান। চুরি করে হলেও এনে দাও, ঠাকুমার ঝুলি থেকে গল্প, নয়ত রবীন্দ্রনাথের ডায়েরী থেকে, কাজী নজরুলের ভোর হলো দ্বোর খোলো – এনে দাও মধুর শব্দাবলী, হুলস্থুল বেজে উঠুক, আমার তন্ত্রীর তার, আর্টারিগুলো নড়ে উঠুক আরো, একবার শৈশবের মত!

টিক মার্ক দিয়ে দিন গুলো যাচ্ছে। রোজ কি যেন চাচ্ছি ভাবছি, কত যে এতোল বেতোল প্রশ্ন করি আম্মা কে রোজ! মা আমার জেলোটিনের মত নরম, শুধু বলে বুকে ফিরে আয় সোনা, ঠিক একই ভাবে আমি বলছি “ওরে আমার সোনা পাখিরা বুকে ফিরে আয়। যে যার সন্তান কে বুকে চাচ্ছি। আমি আমার মায়ের মেয়ে। আমার মেয়ে তারা! কন্যারা আমার তোমাদের ছুঁয়েই আমি কেঁপে উঠি , তোমাদের ছুঁয়েই আমি বেঁচে আছি, বেঁচে আছে আমার হায়াত বাড়ানোর বিদ্রোহ।

এখানে সময়ে সময়ে আমার কিচ্ছু ভাললাগে না, কিচ্ছু না কিচ্ছুকেই না, বমি পায় কথায় কথায়! পসবকালীন বিবমিষ, জীবনধারণজাত বমি ও আমি অনেক করেছি আগে। এখন কোন এন্টি ইমেটিক কাজ দেয় না। ফাপরের বমি পায়  বন্ধুরা অনেকেই বলছে পরিদৃশ্যমান মুষড়ে পরেছি, কারন আমার কিচ্ছুকে ভাল লাগছে না, কিচ্ছুকেই না। গুনেগুনে ৫ টা দিন রাত ঘুমহীন, কখনো টেবিল। কখনো মোবাইল কখনো লেখার খাতা, কখনো কবিতার বই নাহ! কিছুতেই ভাললাগে না!

রাত্রী কালীন মধ্যখানে শূন্যমূলক স্থানে ধোয়াচ্ছন্ন হয়ে হয়ে বমি পায়, খালি বমি পায়! অনেক কিছু বলার থাকলেও মনুষ্য স্বভাবে বলতে পারি না, প্রতি পলে বাক্যে ও চিত্রে আমার আবেগ আশ্লেষ গুলো গ্রেফতার হয়ে যায়। অস্ফুট গুন্জনে শুধু প্রতিবাদ করি। অনেকেই জানে আমি অসুস্থ, এ অসুখ কবিতার, কবির নাকি, সাধারণ পুষ্টি হীন মানুষের মত অসুখ? বিপজ্জনক পদ্ধতি তে তোমরা যারা আমাকে পযর্বেক্ষণ করছো , ভাল্লাগছে না, কিচ্ছুটাকেই না।

[1]

আমার সন্তান দুটো মা – মেয়েতে আমরা রোজ কবিতার গলায় গলায় জড়াজড়ি করতে করতে গলাজড়ি খেতাম। গলায় আদর বুলোতে বুলোতে পরস্পরের গলা জড়ি হয়, তোমরা যখন ঝুলে পরতে আমার বাহুধরে, ভ্রমে কি বিভ্রমে মা গো আমি প্রতিরাতে চিৎকার করে উঠি রায়া, রুহা। ঠিক আমারি পাশের বেডে আশি বছরের বৃদ্ধা তার পোষা সন্তান তুল্য কুকুর ছানাটার নাম ধরে কেঁদে উঠে – নেলসন, নেলসন মাই ডারলিং বেবী, মাই বেবী!

আহা! মাতৃত্ব! নাড়ির মতোন সৌরকেন্দ্রে মমতা গুমড়ে কাঁদে। যখন এখান থেকে শুনি কেউ না কেউ আঘাত করছে তোমাদের, আমি অক্ষমতার শাস্তি দেই দেয়ালের গায়ে। যারা তোমাদের কষ্ট দিচ্ছ , তারা কেবল বদল হবে, হাওয়ার যুদ্ধে বদলে যাবে। তোমরা অপেক্ষা করো জান পাখিরা তোমাদের মা ঠিক বাঁশি বাজিয়ে ফিরবে। আবার আমরা সবুজ জলপাই বনে কানামাছি খেলবো, সমুদ পাড়ে লম্বা লম্বা বালির ক্যাসল বানাবো, আবার একসাথে কবিতা আবৃত্তি করতে করতে কালো ফিতের রাস্তা ধরে এলোপাতারী হাঁটবো, আর বলবো

রায়া রুহা নাজ

কোথা যাও আজ

ডাকে ফুল পাখি

রোদ মাখামাখি

তাই ছুটে চলা ওরে আত্মভোলা।

[2]

চলতে চলতে পিঁপড়ের বাসা দেখবো, পথ থেকে কুড়িয়ে নেবো চন্দনার পাখা। ফলের দেশের ফলের ভিড়ে বাংলাদেশের ফল চেনাবো কলা পেয়ারা আম জাম বাতাবী লেবু। বাংলায় কলা পেয়ারা আম যদি বলি, জানি তোমরা গলা উচিয়ে বলবে মা আম না ম্যাঙ্গো , বানানা , পেয়ারা না গুয়াভা !

আমি স্বভাব সুলভ হাসি হেসে বলবো বাছারা আমার, আগে চাই বাংলা ভাষার গাঁথুনি তারপর ইংরেজী শেখার পত্তন। তারপর ছড়া পড়ে খাইয়ে দেবো বাটিভত্তি দুধ কলা ভাত সরাত সরাত!

Endnotes:
  1. [Image]: http://priyoaustralia.com.au/wp-content/uploads/2018/05/1495948787334.jpg
  2. [Image]: http://priyoaustralia.com.au/wp-content/uploads/2018/05/image_36_4735.jpg

Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2018/%e0%a6%ae%e0%a6%be-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a6%8f%e0%a6%ac%e0%a6%82-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a7%83%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%b7%e0%a6%be/