বিশ্বকাপ ফুটবল কড়চা – খেলা উপভোগ করুন

by Tarik Zaman | June 19, 2018 8:47 pm

১৯৮৭ সালে জমজমাট ঢাকা ফুটবল লীগের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ খেলা: মোহামেডান-আবাহনী। আবাহনী ড্র করলেই লীগ চ্যাম্পিয়ন হবে, আর মোহামেডান জিতলেই তবে রি-ম্যাচ হবে। মোহামেডানে নাইজেরিয়ার বিশাল দেহী এমেকা (সে বিশ্বকাপ খেলেছে), সাথে আছে ইরান থেকে আসা নালজেগার, মর্তুজা, তাহিরি, বোরহানজাদে। গোলকিপার ছিল ১৯৭৮ বিশ্বকাপের ইরান দলের নাসের হিজাজী। সে আবার কোচও ছিল। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বমানের ফুটবলার এবং কোচ দেখে। দলে আরো ছিল আগের বছর আবাহনীতে খেলা খোরশেদ বাবুল- মাঝ মাঠের তুখোড় খেলোয়াড়। রণজিৎ, কায়সার হামিদ, জনি, কামাল, আবুল, সাব্বির, এমিলি- সব মিলিয়ে মোহামেডান তখন আমাদের স্বপ্নের দল। আবাহনীও কম যায় না; বিশ্বকাপ খেলা ইরাক দলের সামির শাকের, করিম মোহাম্মদ, দুল্লা রাহিম(?) কে নিয়ে এসেছে। আসলাম, প্রেম লাল, মুন্না, আশিস ভদ্র, রুপু- সব মিলিয়ে চ্যাম্পিয়ন দল। মধ্য মাঠের খেলোয়াড় কি জিনিস- বাঙালি তা প্রথমবারের মতো বুঝে সামির শাকের আর নালজেগারের খেলা দেখে। দুইজনের যন্ত্রের মতো উপর নিচ উঠা নামা আর জীবনানন্দের কবিতার মতো মসৃন বল পাসিং- এখনো চোখে লেগে আছে। এতো সব কিছুর সাথে ছিল দুই দলের সমর্থকদের বৈরিতা। ঘরে ঘরে দলের পতাকা, মিসিল, খেলা শুরুর আগেই মারামারি, ঢিল ছুড়াছুড়ি। আবার ইরান-ইরাক যুদ্দ্বও তখন তুঙ্গে। ইরানি-ইরাকী কেউ কারো সাথে হ্যান্ডশেকও করে না।

যথা সময়ে খেলা শুরু হলো। আবাহনী দুইবার এগিয়ে থেকেও লিড ধরে রাখতে পারলো না। মোহামেডান এমেকা আর মর্তুজার গোলে খেলায় ফেরত আসে। খেলা ড্র এর দিকে এগুচ্ছে- মোহামেডানের সমর্থকদের মাঝে হতাশা শুরু হলো কারণ ড্র হলেই আবাহনী চ্যাম্পিয়ন। অন্যদিকে আবাহনীর সমর্থকরা পতাকা হাতে বিজয় মিসিল করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। খেলার সম্ভবত: পাঁচ ছয় মিনিট বাকি- হটাৎ দেখা গেলো মোহামেডানের অধিনায়ক রণজিৎ ডানদিক দিয়ে বল নিয়ে বিশাল এক দৌড়- সামনে মাত্র আবাহনীর এক ডিফেন্ডার- দর্শকরা কিছু বুঝার আগেই দেখা গেলো রণজিৎ ওই ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে বক্সের কাছে দাঁড়ানো খোরশেদ বাবুলকে বল পাস্ করে। খোরশেদ বাবুল এক ঝলকে আবাহনীর গোলকিপারকে ডজ দিয়ে বল জালে ঠেলে দিয়ে আবাহনীর সমর্থকদের দিকে দৌড়ে গিয়ে টিটকারি মার্কা অঙ্গভঙ্গি করছে। মোহামেডানের গ্যালারিতে তখন বাজি আর পটকা ফোটে। লিগে পয়েন্ট সমান তাই চ্যাম্পিয়নশিপ নির্ধারণী খেলা আবার হবে। যাক সেই কথা।

খেলার পরদিন গেলাম মোহামেডান ক্লাবে। রং ছিটাছিটি আর মিষ্টি, সাথে থেকে থেকে স্লোগান। বিশ্বকাপ আবার কি? এর পর আমাদের এক বন্ধু বললো চল আবাহনী ক্লাবে গিয়ে দেখি ওরা কি করে। মতিঝিল থেকে ধানমন্ডি। ঐখানে ভিড় তবে আনন্দ নেই। ক্লাবের ভেতর গিয়ে দেখা গেলো বেশ কিছু প্লেয়ার পয়সা দিয়ে তাস অর্থাৎ জুয়া খেলতেছে। পাশে চাইনিজ রেস্তুরার খাবার আর কোকের কাঁচের বোতল। সবচাইতে বিস্ময়কর ছিল আগের দিন মোহামেডানের হয়ে জয়সূচক গোল করা খোরশেদ বাবুল ওখানে জুয়া খেলতেছে। আগের দিন এতো শত্রুতা- পরদিন একসাথে বিরোধী শিবিরে জুয়া খেলা ! আর আমরা পাড়া আর গ্যালারিতে মারামারি কাটাকাটি করি! পরে শুনলাম শুধু বন্ধুত্ব নয়, দুই দলের প্লেয়ারদের অনেকেই এর বোন ওর কাজিন বিয়ে করে সুখেই আছে- আর আমরা থাম্ব সাকিং!

সুতরাং আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, জার্মানির বাঙালি সমর্থকদের বলি- খেলা দেখেন, মনে মনে দলকে সমর্থন দেন, কিন্তু ঐসব ট্রল আর মারামারি করবেন না। দেখেন না খেলা শেষে ওরা ক্যামনে জার্সি আর আন্ডারপ্যান্ট বদল করে! দুই কোচের কোলাকুলি করা দেখলে তো মনে হয় মাত্র ঈদের জামাত শেষ হইছে।

কোনো রকম স্ট্রেস ছাড়া খেলা দেখেন- আর ভাবতে থাকেন চাকুরীর কোটা রাজনীতি ছেড়ে সোনার ছেলেরা কবে বিশ্বকাপে খেলার রাজনীতি করবে।

Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2018/%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%aa-%e0%a6%ab%e0%a7%81%e0%a6%9f%e0%a6%ac%e0%a6%b2-%e0%a6%95%e0%a7%9c%e0%a6%9a%e0%a6%be/