পূণ্যা জয়তী – প্রবাসে শুদ্ধ সংগীতচর্চার কান্ডারী

by Md Yaqub Ali | June 27, 2018 2:43 pm

পূণ্যা জয়তীর বেড়ে ওঠা সুরের ছোয়াতে। সঙ্গিতের প্রথম শিক্ষা তার বাবা রবিন গুদার কাছে। মাত্র সাত বছর বয়সে প্রাতিষ্ঠানিক সঙ্গিত শিক্ষার শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গিতের শিক্ষক মাফিজুর রহমানের কাছে। অস্ট্রেলিয়ায় আসার পরও নিয়মিত সঙ্গিতের চর্চা চালিয়ে তার বাবার কাছে। এছাড়াও পশ্চিমা ধারার সঙ্গিতের প্রশিক্ষণ নেনে মার্গারেট জে সিমের কাছে। সেখানে তিনি পিয়ানো এবং কণ্ঠের তালিম নেন। পূণ্যা ক্যানবেরার সাংস্কৃতিক সংগঠন ধ্রুপদ অস্ট্রেলিয়া এবং ব্যান্ড লস্ট টেপস এর কার্যকরী সদস্য।

এই পর্যন্ত পড়ে যারা ভাবছেন আমি পূণ্যার জীবনী বলতে বসেছি তাদের ভুলটা একটু ভাঙিয়ে দিতে চাইছি। পূণ্যার বেড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়াতে। আর অস্ট্রেলিয়াতে বেড়ে ওঠা দ্বিতীয় প্রজন্মের কাছে তাই স্বাভাবিকভাবেই বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতির গুরুত্বটা অতটা না যতটা প্রবাসি প্রথম প্রজন্মের কাছে। তাই তারা বাংলাটা শিখে অনেকটা ইংরেজির আদলে এবং তাদের বাংলা উচ্চারণে সেটা প্রকটভাবেই প্রকাশ পায়। ত হয়ে যায় ট। শব্দ এবং বাক্য গঠনও হয় অন্যরকম। এর জন্য ওদেরকে অবশ্য দোষ দেয়া যায় না। কারণ এখানে স্কুল থেকে শুরু করে খেলার মাঠ সব জায়গাতেই একজনের সাথে অন্যজনের যোগাযোগটা হচ্ছে ইংরেজির মাধ্যমে। আর জীবন ও জীবিকার জন্যও ইংরেজিতে যোগাযোগটা অবশ্যম্ভাবী বিশেষকরে অস্ট্রেলিয়ান এক্সেন্টে ইংরেজি বলতে না পারাটা এখানে কাজের ক্ষেত্রে অযোগ্যতা হিসেবেই দেখা হয়।

উপরে যে কথাগুলো বললাম পূণ্যার এই গানটা শুনলে আপনার সেগুলোকে মিথ্যে মনে হবে। কারণ সুর তাল লয় ঠিক রাখার পাশাপাশি পুন্যার উচ্চারণ শুনে আমার একবারের জন্যও মনেহয় নাই যে গায়িকা অস্ট্রেলিয়াতে বেড়ে ওঠা দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধি। প্রত্যেকটা শব্দের শুদ্ধ উচ্চারণ তাই আপনাকে গানটা পুরোটা শুনতে বাধ্য করবে। আর গায়িকার অভিনয় দেখে আমার মনে হয়নি এটাই তার প্রথম মিউজিক ভিডিও।

গানের ভিডিওটি দেখে মনেই হয়নি এটা পরিচালক সাহাদাত মানিকের দ্বিতীয় কাজ মাত্র। গানের কথার সাথে মিল রেখেই পরিচালক ভিডিওতে আলো ছায়ার খেলা ফুটিয়ে তুলেছেন। ভিডিওটি নির্মাণে পরিচালক যে সকল জায়গা এবং দৃশ্যের আশ্রয় নিয়েছেন সেটা গানের কথাগুলোকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। ভিডিওটি দেখে বুঝা যায় পরিচালক অনেক সময় নিয়ে সেটা সম্পাদন করেছেন বিশেষকরে আলোক সম্পাত এবং এক দৃশ্য থেকে অন্য দৃশ্যে যাওয়াটা খুবই সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছেন। তাই ভিডিওটি দেখার সময় আপনার চোখের উপর চাপ পরবে না বরং বিভিন্ন দৃশ্যের আলো ছায়ার খেলা আপনার মনেও সেই আবেশ তৈরী করবে।

বিদেশে আসার পর দেশের কৃষ্টি সংস্কৃতিকে বাস্তবতার প্রয়োজনেই বিসর্জন দিতে হয়। এমনকি অনেককে আগে বাড়িয়ে সেগুলো নিয়ে খিস্তি খেউর করতেও দেখা যায় কিন্তু কিছু মানুষ অন্তরের অন্তঃস্থলে ধারণ করে চলেন দেশের সংস্কৃতিকে। পুন্যার বাবা মা ঠিক তেমনই দুজন মানুষ। চিলের ছোবল থেকে মা মুরগি যেমন তার বাচ্চাদের বাঁচানোর জন্য নিজের পাখনা মেলে দেন ঠিক তেমনি এই দুজন মানুষ তাদের মেয়ে পূণ্যাকেও বিদেশের সংস্কৃতির পাশাপাশি নিজেদের শেকড়ের শিক্ষাটা দিয়েছেন খুবই সঠিকভাবে। আসলে যারা একটি দেশের কৃষ্টি এবং সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করে বা ভালোবাসে তারা পৃথিবীর সব দেশের কৃষ্টি এবং সংস্কৃতিকেই শ্রদ্ধা করেন। পৃথিবীতে এমন মানুষেরা আছেন বলেই হয়তোবা মানুষে মানুষে, জাতিতে জাতিতে, সংষ্কৃতি সংস্কৃতিতে তৈরি হয় মেলবন্ধন।

Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2018/%e0%a6%aa%e0%a7%82%e0%a6%a3%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be-%e0%a6%9c%e0%a7%9f%e0%a6%a4%e0%a7%80-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a7%87-%e0%a6%b6%e0%a7%81%e0%a6%a6%e0%a7%8d/