by Tarik Zaman | June 18, 2017 9:32 am
অনেকদিন পর উপমহাদেশের দুই ক্রিকেট শক্তি ভারত এবং পাকিস্তান।CC র কোনো বড় টুর্নামেন্ট- চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল খেলছে। অপর উদীয়মান ক্রিকেট শক্তি বাংলাদেশ সেমি ফাইনালে খেলেছে- সেও কম গর্বের নয়। গেলবার এজবাস্টনে ভারত ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
বাংলাদেশ ফাইনালে যেতে পারলো না বলে সবার মতো আমারও মন খারাপ হয়েছিল, সময়ের সাথে সয়ে গেছি। এইটুকু সবাই নিশ্চয় বুঝতে পারছেন যে বাংলাদেশকে আরো অনেকদূর যেতে হবে। এক-দুই ম্যাচ ভালো খেলে লাভ নেই, ধারাবাহিক ভাবে ভালো খেলতে হবে। ভারত এবং পাকিস্তানের অনেক পুরানো এবং বর্তমান ক্রিকেটারদের নিয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন ট্রল দেখেছি- কোনটা যে আসল কোনটা যে নকল বুঝার উপায় নাই। অনেক বন্ধু বুঝে বা না বুঝে এইসব ট্রলের শিকার হয়েছেন, নিজেকে বিতর্কে জড়িয়ে ফেলেছেন। ভিরাট কোহলি দারুন ক্রিকেটার, ভারতের মতো দলের অধিনায়ক, তবে বয়স একটু কম বলে এখনো পোলাপাইন্না স্বভাব রয়ে গেছে। তার বিপরীতে ধোনি, রাহুল দ্রাবিড় বা টেন্ডুলকারকে দেখেন- কত ম্যাচুর ছিল। কিছু খেলোয়াড় একটু উন্নাসিক থাকতেই পারে, ঐটা তার ব্যক্তিত্বের একটা অংশ এবং তার পারিবারিক ব্যাকগ্রউন্ডেরও পরিচায়ক। তবে উন্নাসিকতা দেখেলে আমার হাড় জ্বলে যায়। বড় মানুষ বড় মানুষের মতো আচরণ না করলে মন খারাপ হতেই পারে।
ক্রিকেট কিন্তু অনেকটাই mind game . এইটা সেইটা বলে, দেখিয়ে প্রতিপক্ষকে ক্ষেপিয়ে তুলা এখন ক্রিকেটের অংশ হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লি উইকেট নেবার পর যে অঙ্গভঙ্গি করতো মনে আছে নিশ্চয়, অথচ ব্যক্তিগত জীবনে এমন ভদ্র মানুষ কমই পাবেন। অস্ট্রেলিয়া দলের বর্তমান কোচ ড্যারেল লিম্যান শ্রীলংকার জয়াসুরায়াকে যে ভাষায় গালি দিয়েছিলো তা কিন্তু তার ব্যক্তিগত জীবন দর্শনের পুরো উল্টো। এইরকম নির্বিরোধী, সাদা-কালো সবাইকে একই চোখে দেখা মানুষ ড্যারেল- খুবই ভালো মানুষ। আবার ভিরাট কোহলিতে ফেরত আসি। আমরা শুধু তার জিহবা বাহির করাটাই দেখলাম, কিন্তু সে যে ফুলটস বলে মুশফিকের শর্ট নেয়া দেখেই যে সামান্য বায়ে সরে এসে দাঁড়িয়ে ক্যাচটা নিলো- এই যে তার শর্ট রিডিং ক্ষমতা- এইটা নিয়ে কিন্তু কেউ কিছু বললো না। তার জিহবা দেখানো থেকে কিছুই শেখার নাই, কিন্তু শর্ট রিডিং পাওয়ার- ঐটা তো শিখতে পারি। প্রতিপক্ষের কোন আচরণ খারাপ লাগতেই পারে, কিন্তু তার ভালো অংশটুকুতো আমরা নিতে পারি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ভিরাট কোহলি যে ভাবে তার বোলারদের ব্যবহার করেছে, তা থেকে আমরা কি কিছু শিখবো? রোহিত শর্মার মতো মাথা ঠান্ডা একটা খোলোয়াড় বাংলাদেশ দলে আছে কি? ভিরাট কোহলির মতো আমাদের কয়জন ব্যাটসম্যান ঠান্ডা মাথায় এক্সট্রা কভার দিয়ে চার মারতে পারবে?
পাকিস্তানের সাথে আমাদের বৈরিতা খুব সহসা কমবে বলে মনে হয় না। এর প্রতিফলন ক্রিকেটেও পড়ছে। কিন্তু তার পরেও বলি বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নতিতে কিন্তু পাকিস্তানও সাহায্য করেছে। ১৯৮৫ সালে ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার উমর কোরেশী, কোরেশী ইলেভেন এর অধীনে পাকিস্তানের মোটামোটি পুরো দলকেই ঢাকা এনেছিল, যে দলে ওয়াসিম আকরাম থেকে শুরু করে ইদানিং ইতর ইমরান খানও ছিল। প্রদর্শনী ম্যাচেও এতো দর্শক,।CC ও ACC দেখে অবাক হয়েছিল। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৮৮ সালে ঢাকায় প্ৰথমবারের মতো উইলস এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকায় পাকিস্তান-ভারত ম্যাচটা দেখেছিলাম যে ম্যাচে আরশাদ আয়ুবের ৫/২২, অসাধারণ স্পিনে পাকিস্তান কুপোকাত হয়েছিল। শ্রীলংকাকে হারিয়ে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। পাকিস্তান দলের মোহাম্মদ আমির বা ওয়াহাব রিয়াজ যে ভাবে বাউন্সার বা পুরানো বলে সুইং করায়, তা কি শিখতে পারি না? আমাদের BPL এতো দেখি প্রচুর পাকিস্তানী খেলোয়াড় খেলে, তাতে অসুবিধা কি? তবে হ্যা, যদি কোনো খেলোয়াড়, সে পাকিস্তানী বা ভারতীয় হোক আর জার্মানি হোক, আমাদের জাতিসত্বাকে হেয় করার চেষ্টা করলে কোনো ক্ষমা নেই। কোনো আপস নেই।
১৯৮৫ সালে সিডনি মাঠে ভারত-পাকিস্তান উইলস ক্রিকেট ফাইনাল হয়েছিল। গাভাস্কার-রবি শাস্ত্রী-কপিল দেব, অন্যদিকে ইমরান খান, জাভেদ মিয়াঁদাদ, মুদাস্সের নজর, মহসিন খান….. কি না ছিল সেই ফাইনালে! তৃতীয় বা চতুর্থ ওভারেই মুদাস্সের নজরের অফ স্ট্যাপমের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে কট বিহাইন্ড। গাভাস্কারের সাথে জাভেদ মিয়াঁদাদের কথা কাটাকাটি… কিন্তু সেই ভারতের সম্ভবত ১০ উইকেটে জয়লাভ করেছিল। ঠিক মনে নাই, রবি শাস্ত্রী মনে হয় সেঞ্চুরি এবং বেশ কয়টা উইকেট নিয়েছিল। পাকিস্তানের মহসিন খান দেখতে নায়কের মতো ছিল, দারুন ব্যাট করতো, কিন্তু খুবই arrogant ছিল। একটা চার মেরে সে মনোজ প্রভাকরকে বল কুড়িয়ে আনতে বলেছিলো। যা হয় আর কি, তার সামান্য পরেই মহসিন খান আউট হয়ে যায়। এইসব ঘটনা ভারত-পাকিস্তান খেলার আবহ তৈরী করে দেয়।
ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ সে ক্রিকেট, ফুটবল বা হা-ডু-ডু যাই হোক না কেন- সেখানে রাজনীতি আসবেই কারণ আমাদের মানস প্রেক্ষাপট ঐভাবেই তৈরী হয়ে গেছে। তবে আমার কাছে খুব অবাক লাগে যখন দেখি ভারতীয় কিছু সংখ্যক মুসলিম ভারত পাকিস্তান খেলায় পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে দৌড়া দৌড়ি করে। এদের জিজ্ঞাসা করেন যে এরা পাকিস্তানে যাবে কি না- দেখবেন তখন বলবে ‘ভারত হামারা’, এ এক আজব পরাধীন মানসিকতা। ঠিক তেমনি বাংলাদেশেরও কিছু মানুষ পাকিস্তানিদের সুপেরিয়র মুসলমান ভেবে পাকিস্তানের জন্য হা-পিত্যেশ করে। এইসব কিছু মানুষের under the skin বৈশিষ্ট, যা ভাঙ্গানো খুব কঠিন। আজকে যে দলই জয়ী হোক না কেন, মনে রাখতে হবে নিজ দেশের উপর কিছু নাই।
আমরা অপেক্ষায় রইলাম বাংলাদেশ কবে বড় একটা টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলবে।
জয় বাংলা !
Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2017/%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%a4-%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%9f-%e0%a6%a6/
Copyright ©2024 PriyoAustralia.com.au unless otherwise noted.