বাংলাদেশের ভোট : আদর্শ ব্যবস্থা কী?

by Jubaidul Jekab | August 4, 2017 11:59 pm

বাংলাদেশের সংসদ এবং বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন পদ্ধতি বর্তমানে যেমনটা রয়েছে সেরকম করে কি নির্বাচনের উদ্দেশ্য পূরণ করছে? না করলে সম্ভাব্য কারণগুলো কি কি? নতুন পদ্ধতি কেমন হলে নির্বাচনের উদ্দেশ্য পূরণ হবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরের সাথে ভোটাররা কিভাবে ভোট দেয় সেটার কি কোন সংযোগ রয়েছে?

আমার নিজের খুব আগ্রহ এটা জানতে যে বাংলাদেশের ভোটাররা যেভাবে ভোট দেয় সেটা কিভাবে এবং কেন ভোট দেয়, এবং কারা অথবা কি কি বিষয় ভোটাররা কাকে ভোট দিবে সেটাকে প্রভাবিত করে।

আরো কিছু প্রশ্ন মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছে, বিভিন্ন অঞ্চলের ভোটাররা কাকে ভোট দিবে সেই সিদ্ধান্ত বিভিন্নভাবে নেয়, নির্বাচনী ক্যাম্পেইন এর কি কোন প্রভাব রয়েছে এতে, স্থানীয় রীতিনীতি ( ইতিহাস, শিক্ষা, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, প্রান্তিক জাতিগোষ্ঠী ইত্যাদি।) কিংবা গণমাধ্যমের ক্ষমতা এবং প্রভাবই বা কতটুকু পড়ে এই ভোট কাকে দিবে একজন ভোটার।

উপরের প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের ভোটার দেখতে পাব। এই বৈচত্রময় ভোটার তালিকা কিন্তু নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাঝে প্রতিফলিত হতে দেখি না আমরা! আমাদের প্রতিনিধিদের মাঝে বৈচিত্রময়তার প্রচন্ড অভাব! কিভাবে এই বৈচিত্রময়তা নিশ্চিত করা যায়।

যখন কোন প্রার্থী/দল শতকরা ৫১ ভাগের কম ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয় তখন আপনার কি মনে হয়?

যখন কোন পার্টি তিনশজন প্রার্থী বাছাই করল এবং সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি তে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করল। ধরে নেয়া যাক ফলাফল নিম্নরূপ হল:

১. ক দল শতকরা ৪০ ভাগ ভোট পেল।
২. খ দল শতকরা ৩৮ ভাগ ভোট পেল।
৩. গ দল শতকরা ১৫ ভাগ ভোট পেল।
৪. ঘ দল শতকরা ৬ ভাগ ভোট পেল।
৫. ঙ এবং অন্যান্য দল শতকরা ১ ভাগ ভোট পেল।

তাহলে কোন এলাকায় কে নির্বাচিত হল? কোন দল কোন এলাকা পাবে? আর নির্বাচিত প্রতিনিধি ত সরাসরি নির্বাচিত হল না। কোন একজন প্রতিনিধি এলাকার সাথে কোন সংযোগ ছাড়াই বছরের পর বছর নির্বাচিত হতে পারবেন যেহেতু তিনি পার্টি প্রধান দারা সিলেক্টেড হবেন। ল

ধরুন বর্তমান পদ্ধতিতে তিনজন প্রার্থী শতকরা ৩৩ ভাগ করে ভোট পেল। তাহলে মেজরিটি প্রতিনিধি কে হল? বর্তমান প্লুরালিটি ভোটিং দিয়ে ভোটারদের সঠিক রায় পাওয়া সম্ভব নয়। তেমনি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতেও সম্ভব নয়।

‘First past the post voting ‘ একটা পুরনো ধারণা। সেকারণেই বলছি ‘ Preferential voting’ ভোটারদের বৈচিত্রতাকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাঝে প্রতিফলিত করতে পারে। আর এই প্রিফারেন্সিয়াল ভোটের মাধ্যমে ভোটারদের মনোভাবের অনেক তথ্যই আমরা পাব যেটা বর্তমান কিংবা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সম্ভব না।

Preferential voting আসলে কি?

এই পদ্ধতিতে একজন ভোটার তার পছন্দের প্রার্থীদের ক্রমিক নম্বর অনুযায়ী ভোট দিবে। অনেকটা প্রথম পছন্দ, দ্বিতীয় পছন্দ, তৃতীয় পছন্দ এই ভাবে। এইভাবে যদি কোন প্রার্থী /দল প্রথম পছন্দ হিসেবে শতকরা ৫১ ভাগ ভোট না পায় তাহলে যে সবচেয়ে কম প্রথম পছন্দের ভোট পাবে তার ভোট বাদ যাবে। তখন এই বাদ পরা প্রার্থী /দলের দ্বিতীয় পছন্দের ভোট গুলো বিতরণ করা হবে অন্যান্য প্রার্থীকে/দলকে। এই পদ্ধতি চলতে থাকবে যতক্ষণ না কেউ একজন এবসলিউট মেজরিটি পাবে ( শতকরা ৫১ ভাগ।)। এইভাবে দুই দল ভিত্তিক সংসদ পাব। তবে ছোট দলগুলোরও জয়ের সম্ভাবনা রয়ে যায়। সে কারণে অধিক দরকষাকষি হবে বিভিন্ন দলগুলোর মাঝে। এই দরকষাকষি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে আরো ম্যাচিউরড করতে সহায়তা করবে।

আমার এই পদ্ধতি পছন্দ কেন?

বাংলাদেশে সংসদে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সেগুলোর চেক এন্ড ব্যালেন্স নাই। তাই একটা উচ্চকক্ষ দরকার। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করলে বিশেষ করে উচ্চকক্ষে ছোট দলগুলোর জয়ের সম্ভাবনা বেশী থাকবে, এবং চেক এন্ড ব্যালেন্স অনেকটা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

জুবায়দুল জেকব
মেলবোর্ন

Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2017/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ad%e0%a7%8b%e0%a6%9f-%e0%a6%86%e0%a6%a6%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%b6-%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%af/