by Suchitra Chakma Diti | July 5, 2017 2:38 am
কি করে পাটি, মশারী, হাঁড়ী পাতিল কলসি থালা বাসন কিনব? কোথায় রাঁধব? আর কোথায় খাব? কি খাব আর এই বৃষ্টিতে কোথায় থাকব?মাথা খারাপ হয়ে গেছে আমার।সমস্ত অফিস কর্মচারী ও অন্যান্য লোকজন দূরে চলে গেছে। আছি দুইটা ড্রেস আর কতকগুলি ফাইল নিয়ে কোনরকমভাবে প্রানটা বাঁচায়।এক ওয়্যারড্রব শাড়ী, থ্রি পিস, আলমারি ভর্তি কাপড় চৌপড়,গ্যাসের সিলিন্ডার, চুলা,ফার্নিচার, গাড়ী, নানান আসবাবপত্র সহ প্রায় প্রায় ৪/৫ লক্ষ টাকার মালামাল পুড়ে গেল।বোধহয় এখন আর কারোর সাহায্য ছাড়া আর বেঁচে থাকাটা বিরাট দায়।প্রায় সকলে গায়ে দেওয়া জামা কাপড় ছাড়া আর কিছু বাঁচাতে পারেনি। এখন আমার রাংগামাটি বন্ধুদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি।কারোর ৬ষ্ট শ্রেণীর বই থাকলে পাঠিয়ে দিন।পুরনো কাপড চৌপড় ,থালাবাসন, হাঁড়ী পাতিল যোগাড় করে ঘরে ঘরে তুলে লংগদুতে সাহায্য পাঠিয়ে দিন।।
হায়রে মানবতা যেখানে যাদের ছেলে মেয়েদের মানুষ করার জন্য রোজার মাসে ও বিশেষ ক্লাস করার জন্য পড়ে থাকলাম।প্রতিটি দিনে কমপক্ষে ১০/১৫ জনকে কোন না কোনভাবে কতবার উপকার করেছি।কখনও মনের মধ্যে জাতী ভেদাভেদ আর হিংসা ছিল না ।কারোর অার্থিক সমস্যা, জিপিএফ,ইংক্রিমেন্ট, কনজিউমার লোন, টাইম স্কেল সহ বিভিন্ন সমস্যা থাকলে শোনার সাথে সাথে তা সমাধান করতাম। সারাজীবন পরের জন্য খেটেছি। কারোর বিপদে আপ্রাণ সহযোগীতা করার চেষ্টা করতাম। সেই লোকেরা কি করে আমার উপর হাত তুলতে পারল?
ঘরের পোড়া দেখানো যায় কিন্তু এই মনের পোড়াটা কী দেখানো যায়?যখন পরিচিত বাংগালী বন্ধু আমাকে ফোন করত, আমার দুঃখের কথা শুনে তখন আরও বিদ্রূপ করত। জরুরী অবস্থা উঠে গেলে আমরা যখন আমাদের পোড়া ঘর বাড়ী দেখতে আসি তখন বুক জ্বলে যায়। পরিচিত বন্ধু বা যাদের সাথে মিশতাম, একসঙ্গে বসে গল্প করতাম, যাদের টাকাকড়ি ও ধার দিতাম যাদের ছেলেমেয়ে নিজের সন্তানের মত ভালবাসা স্নেহ দিয়ে মানুষ করেছি।কত ছবি আপলোড করেছি সেসবই স্মৃতি আজ শুধু চোখে ভাসছে।আর মন বলছে কার জন্য আর কাদের জন্য এসব করেছি?আজ তারাই কিনা আমার অসহায় অবস্থা দেখে আমাকে যেখানে সহযোগীতা দেওয়ার কথা সেখানে আমাকে দেখে হাসাহাসি করল?বলল, তোমাদেরকে সরকার এবার পাকা ঘর দেবে অসুবিধা কি? আমি আজই জানতে পারলাম আমার আসলে কোন বন্ধু ছিল না বা নেই।আমি এখন ভাল কথাও মন্দ শুনি।আমার সবকিছুর প্রতি আস্থা হারিয়ে গেছে এবং কি আজ হতে আর ফেইসবুক ব্যবহার করব না বলে ভাবছি ।চোখের সামনে এমন ঘটনার সন্মূখীন হয়ে আমার এখন কোন বাঙ্গালি দেখলে ভুত দেখার মত হয়ে যায়।এখন আমার সবকিছু হতে মন উঠে গেছে।
শিক্ষক সমিতির যে কোন কর্মকান্ড হতে আজ হতে আমি পদত্যাগ বা অব্যাহতি নিলাম। আমি আর সাতেও নেই,পাঁচে নেই। দয়াকরে আমাকে আর কেউ ফোন করবেন না।আজ হতে আমি মৃত বলে জানবেন সবাই।এভাবে আর বেঁচে থাকার কোন মানে হয় না। লক্ষ লক্ষ ঋনের বোঝায় বেতন নেই,তার উপর আর্থিক লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি।এ ক্ষতি আর কখনও পূরণ করা সম্ভব নয়।যে বুড়ীকে আগুনে পুড়ে মেরে ফেলেছে তাকেও আর ফিরে পাবে না তার সন্তানরা।শুধুমাত্র এক একটা ঘর তৈরীতে ৫-১৫ লক্ষ টাকা খরচ পড়েচে একেক জনের।ঘরে ঘরে দামী দামী জিনিসপত্র,টিভি, রিফ্রেজারেটর,সোলার প্যানেল,ভোল্টেজ স্ট্যাব্লাইজার, ধান,চাউল সহ কত রকমের সম্পত্তি ওরা হিংসায় ধবংস করে দিল তা আর পূনরায় গড়ে তুলতে আর ও ২৫/৩০ বছরেওও সম্ভব হয় কিনা জানি না।যেমনটা ১৯৮৯ সালে নারকীয় হত্যাকান্ড ঘটার পর পাহাড়ীরা প্রতিস্থাপিত হতে সময় লেগেছিল।আজ আমি ভিকটিম যখন নিজেই তা আর না বলে লাভ কি! আর জিম্মি হয়ে লাভ কি! আমারতো মনে হচ্ছে আমি জীবিত নই এখন মৃত।
[1]
Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2017/%e0%a6%a6%e0%a7%80%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%98%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b8/
Copyright ©2024 PriyoAustralia.com.au unless otherwise noted.