জন্মদিন

by Md Yaqub Ali | December 22, 2017 8:58 pm

আমার জন্মের সময়টা হেমন্তকাল আর মাসটা ছিল অগ্রহায়ণ তারিখটা ছিল ২৩। গ্রামদেশে অগ্রহায়ণ মাসেই প্রচন্ড শীত পড়ে। রবিবার রাত্রি বারোটার পর আমি এই পৃথিবীর আলো দেখি। যেহেতু অনেক বেশি শীত পড়েছিল তাই সকাল হতে না হতেই নানা মোঃ কেরামত আলী প্রামাণিক আমাকে নিয়ে পিড়িতে (বারান্দাতে) রোদ পোহাতে বসে গেলেন। সারা পাড়ার লোকজন নতুন অতিথিকে স্বাগতম জানাতে আসছিল দলে দলে আর আমি তাদেরকে দেখছিলাম অপার বিস্ময়ে। আমার স্বাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন বাবা তারিখটা মনে রেখেছিলনে এবং মাকে দিয়ে একটি বালিশের কাথায় সেটা নক্সিকাথার মত করে সেলাই করিয়ে রেখেছিলেন। কালের প্রবাহে সেই কাথাটা হারিয়ে গেছে অনেক আগেই। আব্বার আরো মনে পড়ে আমার জন্মের কিছুদিন পড়েই ইংরেজি বছরের ১৯৭৯ সাল শুরু হয়েছিল।

পরবর্তিতে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে যখন আমরা আমদের বর্তমানের আবাসস্থল কুষ্টিয়ার শহরতলীতে থিতু হলাম তখন পর্যন্ত জন্মদিন পালনের বিষয়টা এতটা জনপ্রিয় ছিল না। তবে পাশের বাড়ির খালা তার দুই ছেলেমেয়ের জন্মদিন নক্সিকাথাতে সেলাই করে সেটা ছবির ফ্রেমে বাধিয়ে ঘরে টানিয়ে রেখেছিলেন যেটা এখনও আছে। আর আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে জন্মদিন বিষয়ক বিলাসিতা তখনও ঠায় করে নিতে পারে নাই। এর মাঝে আমি মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে এক বাসায় এক ছাত্রীকে পড়ানো শুরু করলাম। তারপর তার বাসায় তার বড় ভাইয়ের জন্মদিন বেশ ঘটা করে পালন করলাম। এরপর একদিন সেই ছাত্রী ফুলগাছ নেয়ার জন্য আমাদের বাড়িতে আসলো। তারপর সে আমার আব্বা-মাকে জিজ্ঞেস করে দিনপঞ্জির পাতায় অনেক দাগ কেটে হিসাব করে আমার জন্মদিনটা নির্ণয় করে দিয়েছিল। আমি ভুলে গিয়েছি সে কোন তারিখটা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। তবে পরবর্তিতে কিভাবে কিভাবে যেন ২৩শে ডিসেম্বর তারিখটা স্থান করে নিল।

আমার কাছে একজন মানুষের জন্মদিনটা অবশ্যই অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ সেই বিশেষ দিনটাতে সে পৃথিবীর আলোর মুখ দেখেছিল। তবে সেটা নিয়ে মাতামাতি আমার একেবারেই ভালো না। তবে এই শহুরে পরিবেশে যেখানে আমরা চাইলেও শত চেষ্টার পরও যেখানে বন্ধুদের সাথে দেখা করে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারি না, সেখানে Facebook-এর কল্যানে বন্ধুদের শুভেচ্ছা পেতে ভালোই লাগে এবং নিজেকে অনেক বেশি ভাগ্যবানও মনে হয়। মনের মধ্যে একধরণের অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করে। আমি কখনই আমার জন্মদিনটা মনে রাখতে পারতাম না, কিন্তু Facebook সেটা মনে রাখে এবং বন্ধুদেরকে সময়মতো জানিয়েও দেয়। এইজন্য অবশ্যই Facebook এর স্রষ্টা ধন্যবাদের দাবীদার।
আমি বন্ধুদেরকে যখন তাদের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতাম তখন আমি সবসময়ই চেষ্টা করতাম তার সম্বন্ধে এক দু লাইন লেখার আর যারা দেশে আছে তাদেরকে মুঠোফোনে ফোন দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতাম। কিন্তু বেশ কিছুদিন হল আমি বন্ধুদের কে তাদের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো থেকে বিরত আছি, কারণ এখন বেশির ভাগ বন্ধুর সাথেই আমার আর মুখোমুখি দেখা হয় না। তাই তাদের বর্তমান মানসিক, সাংসারিক এবং আর্থিক অবস্থা সম্মন্ধে সম্যক ধারণা নেই। তাই তাদের সম্মন্ধে কি লিখবো বুঝে উঠাতে পারি না এবং সেই কারণেই শুভেচ্ছাও জানানো হয়ে উঠে না। তবে নিজের জন্মদিনে বন্ধুদের শুভেচ্ছা পাওয়ার পর মনে হচ্ছে শুভেচ্ছে জানানোটাই আসল ব্যাপার। কারণ এটা সেই মানুষটাকে সামান্য এক মুহুর্তের জন্য হলেও সুখি করে এবং তাকে মনে করিয়ে দেয় সে এই পৃথিবীতে একা না। ধন্যবাদ সবাইকে যারা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, আর যারা জানাতে পারেননি তাদেরকেও ধন্যবাদ যারা সময়ের অভাবে শুভেচ্ছে জানাতে পারেন নাই। কারণ আমি জানি শুভেচ্ছে না জানাতে পারলেও সকলেই আমাকে তাদের প্রার্থনায় রাখেন সবসময়।

ঢাকা, ডিসেম্বর ২০১৪।

Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2017/%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%a8/