প্রেস কাউন্সিল বন্ধ করে দিলে ক্ষতি কী?

by Fazlul Bari | May 2, 2017 4:10 am

ফজলুল বারী: মনটা খুব খারাপ। বাংলাদেশে আরেকজন সাংবাদিককে তথ্য প্রযুক্তি আইনে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে! সরকারের প্রেস কাউন্সিল আছে। সেখানে দলীয় সাংবাদিকদের পদায়ন আছে, কিন্তু সেই প্রেস কাউন্সিলকে অকর্মা রেখে একের পর এক সাংবাদিককে তথ্য প্রযুক্তি আইনে গ্রেফতারে যারা ক্ষেত্র তৈরি করে রেখেছেন তারাও কিন্তু এর ফাড়ায় পড়বেন একদিন! হাওরের দূর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতার একটি লাইন পড়তে গিয়ে চমকে উঠেছি! ‘আমি যদি প্রধানমন্ত্রী নাও থাকি–!’ সারাদেশ জুড়ে এতো কর্মযজ্ঞ শুরু করেও কী প্রধানমন্ত্রীর মনে হয়েছে আগামীতে তিনি আর প্রধানমন্ত্রী নাও থাকতে পারেন! আর এই হয়রানিমূলক তথ্য প্রযুক্তি আইনটি যারা করেছেন তাদের মনে কী একবারও এসেছে তারা ক্ষমতায় নাও থাকতে পারেন আগামীতে!

তথ্য প্রযুক্তি আইনটিকে সাংবাদিকদের জন্যে হয়রানিমূলক বললাম এই কারনে যে এরমাঝে তিনটি ঘটনায় স্পষ্ট সাংবাদিক নির্যাতনের হাতিয়ার করতেই এটির শব্দগুচ্ছ সাজিয়েছেন আইন প্রণেতারা! ফরিদপুরে একটি হিন্দু বাড়ি জবরদখল অথবা পানির দরে কিনেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এ নিয়ে রিপোর্ট করেছিলেন সাংবাদিক প্রবীর শিকদার। মন্ত্রী মোশাররফের বিরুদ্ধে বললে লিখলে কী পরিণতি হয় তা ফরিদপুরের লোকজন জানেন। এমন আলামত পেয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন সাংবাদিক প্রবীর শিকদার। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে নিজের চেলাচামুন্ডাকে দিয়ে মামলা করিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী সাংবাদিক প্রবীরকে গ্রেফতার করে এক পায়ে টেনেহিঁচড়ে ফরিদপুর নিয়ে যান নির্যাতক বেয়াই মন্ত্রী! ওখানকার মন্ত্রী ভক্ত পুলিশ-কোর্ট শহীদের সন্তান প্রবীরকে রিমান্ডেও নিয়ে গিয়েছিলেন! পরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তার জামিনে মুক্তির ব্যবস্থা করতে হয়। কিন্তু প্রবীর শিকদারের জীবন এখনও অনিরাপদই আছে। কারন প্রধানমন্ত্রীর মতো সৎ মানুষ নন তার বেয়াই।

বাংলাদেশের মূর্তিমান আরেক দূর্নীতির খাত শিক্ষাখাত! প্রশ্নপত্র ফাঁস থেকে শুরু করে কী দূর্নীতি সেখানে নেই? সারাজীবন ছাত্রছাত্রীদের সততার শিক্ষা দেন যে শিক্ষক, চাকরি জীবন শেষে ঘুষ না দিলে তার পেনশনের ফাইল নড়েনা! এমন দূর্নীতির এক চরিত্রকে নিয়ে রিপোর্ট করায় সাংবাদিক সিদ্দিকুর রহমান খানকে গ্রেফতার করে জেলে পোরা হয় তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার মামলায়! আমাদের প্রতিবাদের মুখে সিদ্দিককেও জামিন দিতে হয়েছে। কিন্তু মামলার খড়গটিতো তার মাথার ওপর থাকলোই! সাংবাদিককে তার কাজ ফেলে কোর্টের বারান্দায় ঘোরানোর নিয়ত যদি কেউ করে থাকেন, একই ফাঁদে তারা পড়বেনই একদিন!

বাংলাদেশে এখন এত নিউজ পোর্টাল! সাংবাদিক আহমেদ রাজুকে গ্রেফতারের আগে রাইজিং বিডি, নতুন সময় ডটকম অনলাইন নিউজ পোর্টালের কথা আমি জানতামইনা! মানুষ হিসাবে আমার এই অজ্ঞতা-সীমাবদ্ধতার জন্যে ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু এই অতি উৎসাহী গ্রেফতার, রিমান্ড প্রক্রিয়া শুনে চমকে উঠেছি। জনবহুল বাংলাদেশে বিস্তর ফ্রিজ সহ ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী বেচে ওয়ালটন এখন বিস্তর কাঁচাটাকার মালিক! আমাদের দেশের এমন অনেক কাঁচাটাকার মালিকের আজকাল একটা মিডিয়ার দোকান অথবা নিদেনপক্ষে একটি অনলাইন থাকা না থাকাটা যেন বড় একটি প্রেস্টিজ ইস্যু। জেনেশুনে এসব জায়গায় যারা কাজ করেন, কেন কাজ করেন এ নিয়ে ভবিষ্যতে লিখবো।

কিন্তু একজন আপনার অনলাইন পোর্টালে থাকলোনা বা আপনি রাখলেননা এরপর আবার তাকে মামলা দিয়ে একজন সাংবাদিককে আপনি নিগ্রহের শিকার করবেন এমন নিয়তকে শুধু ধৃষ্ট বললে কী কম হয়ে যায়না? আপনি ফ্রিজ বেচেন ভালো কথা, আরও বেশি করে বেচুন, দেশটা আপনাদের ব্যবসার পণ্যে সয়লাব করে দিন। কিন্তু টাকার গরমে সাংবাদিক নিগ্রহের ফলাফল যে ভালো হবে এমন গ্যারান্টি আপনাদের কে দিয়েছে? আর একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা শুনেও তাকে অতিদ্রুত গ্রেফতার, তাকে রিমান্ডে নেবার অতি তৎপরতার সুফল না কুফল মিলবে তা কী পুলিশ বিভাগ জানেনা? না ওয়ালটনের উপঢৌকনে মাথা ঠিক রাখা যায়নি? যে হাকিম সাংবাদিক আহমেদ রাজুকে রিমান্ডে দিয়েছেন এই সমাজের বাসিন্দা হিসাবে তার মাথায় সামান্য কমনসেন্স কাজ করলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতোনা। না এখানেও দুয়ারে জিনিস নিয়ে চলে এসেছিল ওয়ালটন? এসব প্রশ্নে কেউ ক্ষিপ্ত হবেননা। কাজটা একটু বেশি বাজারি হয়ে যাওয়াতে বাজারের এসব প্রশ্ন কারো এড়ানোর সুযোগ নেই।

তথ্যমন্ত্রী প্রিয় হাসানুল হক ইনু ভাইকে বলি, প্রতিদিন এত বিবেকবানের মতো কথাবার্তা বলেন! কিন্তু এসব ক্ষেত্রে বিবেক খাটাতে বাধা কোথায়? এসব যখন দেশে চলছে বা চলবে প্রেস কাউন্সিলটা বন্ধ করে দিলেইতো পারেন। দেশের কিছু খরচাপাতির অন্তত সাশ্রয় হবে। শুধু সরকারি কিছু সাংবাদিকের পদায়নের জন্যে প্রেস কাউন্সিল রাখার যৌক্তিকতা কী? সাংবাদিক আহমেদ রাজুর গ্রেফতার নিয়ে সাংবাদিক নেতাদের সরগরম হতে দেখেছেন কে কে? ওয়ালটনের পণ্য নিশ্চয় আপনাদের কাছে অত মহার্ঘ নয়। দয়া করে এই নিগ্রহের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন। অথবা যদি আওয়াজ তুলতে সমস্যা থাকে সেটিই বলুন।

আমি এসব নিয়ে তরুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের সক্রিয় হবার অথবা করা পক্ষে। তরুন বয়স যার সমাজের পচাগলা সবকিছু তাকে এখনও সেভাবে স্পর্শ করতে পারেনি। এখনও অনেক পবিত্র তাদের সংকল্প। প্রিয় প্রজন্ম সাংবাদিকবৃন্দ, তোমাদের খুব ভালোবাসি। প্লিজ প্রতিবাদী হও। ভয় ধরাও শয়তানের মনে। রাজুকে মুক্ত করতে হবে সবার আগে। প্রবীর শিকদার, সিদ্দিক, রাজুদের বিরুদ্ধে হয়রানি বন্ধ করাতে হবে। দরকার হলে বন্ধ করাতে হবে ওয়ালটনের সব দোকান। কারন কাঁচাটাকার গরমে তারা সাংবাদিক নিগ্রহে মন দিয়েছে! প্রিয় প্রজন্মবৃন্দ, আইসিটির ৫৭ ধারার বিরুদ্ধে সোচ্চার হও। পরপর তিনটি ঘটনায় স্পষ্ট এই আইনটি করা হয়েছে সাংবাদিকদের টার্গেট করে। যে নিজেকে যত শক্তিশালী ভাবুক সংবাদকর্মী, সৎ মিডিয়া যে দূর্বল নয় তা শাসকদের জানিয়ে দিতে হবে। প্রতিবাদের আগুন জ্বালো প্রিয় প্রজন্ম, সুন্দর আমার।

 

Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2017/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%b8-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%89%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%b2-%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a7-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%a6/