by Siraji Masud Rana Mostak | October 17, 2017 10:38 pm
সিরাজী এম আর মোস্তাক: মাননীয় প্রধান বিচারপতি জনাব এস কে সিনহা একটি উজ্জল নক্ষত্র। বিচারবিভাগে তাঁর ভূমিকা চির ভাস্বর। তাঁর বহুল আলোচিত জীবন বৃত্তান্ত এখানে উল্লেখ করছিনা। তিনি বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশকে পরিচিত করেছেন। তিনি বাংলাদেশে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অন্যতম সংগঠক। তিনি তাতেও প্রধান বিচারকের ভূমিকা পালন করেছেন। মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয় শুধু বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রপতি নন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তেমনি আন্তর্জাতিক প্রধানমন্ত্রী নন। অথচ মাননীয় প্রধান বিচারপতি একইসাথে বাংলাদেশের এবং দেশে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারপতি। দেশে হাজার হাজার মামলা পড়ে থাকলেও তিনি ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধের বিচার গুরুত্ব সহকারে পরিচালনা করেছেন। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত আদালত তথা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দ্বারা তা করেছেন। ট্রাইব্যুনালের সামনে আন্তর্জাতিক শব্দটি থাকায় এ বিচার বিশ্বজুড়ে সমাদৃত হয়েছে। উক্ত ট্রাইব্যুনালে তিনি সুস্পষ্ট প্রমাণ করেছেন, ১৯৭১ সালে সংঘটিত জঘন্য অপরাধে পাকিস্তানের কেউ অভিযুক্ত নয়। শুধুমাত্র বাংলাদেশের মানুষই সকল অপরাধ করেছে এবং শাস্তি পেয়েছে। এভাবে মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয় শুধু বিচারবিভাগে ভূমিকা রাখেননি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উম্মোচন করেছেন।
ত্রিশ লাখ শহীদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে দালাল আইনে প্রচলিত বিচার বাতিল করেছিলেন। অথচ মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয় এতোদিনে সে বিচার সম্পন্ন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিতে, ১৯৭১ এর সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালি সবাই বীর মুক্তিযোদ্ধা। ত্রিশ লাখ শহীদও বীর মুক্তিযোদ্ধা। যেমন, ৬৭৬ খেতাবপ্রাপ্ত বীরের মধ্যে ৭জন শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ। মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয় উক্ত ত্রিশ লাখ শহীদের ভিত্তি খুঁজেননি, তাদের বংশ বা পরিবারের অস্তিত্ব সন্ধান করেননি এবং শহীদগণ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন নাকি রাজাকার ছিলেন তা বিচার করেননি। একইভাবে প্রচলিত দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা তালিকা নিয়ে তিনি মন্তব্য করেননি। দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রদত্ত ভাতা ও তাদের সন্তান-সন্ততির জন্য প্রদত্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে আপত্তি করেননি। মাত্র দুই লাখ তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা কিভাবে দেশ স্বাধীন করলো, সে বিষয়ে ভাবেননি। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আছে কিনা, তাও খেয়াল করেননি। তিনি প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধা থাক বা না থাক যুদ্ধাপরাধী আছে। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে শুধুমাত্র বাংলাদেশের কয়েক ব্যক্তিকে ঘাতক সাব্যস্ত করেছেন। ফলে বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বিদেশে গেলে যুদ্ধাপরাধী প্রজন্ম হিসেবে লান্থিত হয়। একই জায়গায় পাকিস্তানিরা সম্মান পায় অথচ বাংলাদেশিরা ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধী প্রজন্ম হিসেবে ঘৃণার শিকার হয়। বিশ্ববাসী আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তাই এমনটি হয়েছে। জনাব এস কে সিনহা এভাবেই বাংলাদেশের মানুষকে বিশ্বদরবারে পরিচিত করেছেন। এটি তাঁর অনন্য কৃতিত্ব।
মাননীয় প্রধান বিচারপতি দু’ধাপে ছুটি নিয়ে এখন অস্ট্রেলিয়ায় আছেন। তিনি বিচারের বেশিরভাগ সময় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন যে, বাংলাদেশের মানুষই ঘাতক, যুদ্ধাপরাধী, মানবতা বিরোধী অপরাধী এবং তাদের প্রজন্ম। বাঙ্গালি জাতির এ লান্থণার জন্যই মায়ানমারের সামরিক জান্তা রোহিঙ্গাদেরকে সংখ্যালঘু মুসলিম না বলে বাঙ্গালি হিসেবে নিকৃষ্ট হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। এতে মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয় নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। তিনি আত্মশুদ্ধির পথ বেছে নিয়েছেন। বিবেকের তাড়নায় অকপটে সত্য কথা বলেছেন। তিনি শুধু প্রধান বিচারপতি নন, মুক্তিযুদ্ধের মহান রেনেসাঁ। বিশ্ব ইতিহাসে ১৯৭১ এর ঘটনায় পাকিস্তানিদেরকে ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যা কিছু বর্ণনা রয়েছে, তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তা সম্পুর্ণ পরিবর্তন করেছেন।
শিক্ষানবিস আইনজীবি, ঢাকা।
mrmostak786@gmail.com.
Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2017/%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a6%bf-%e0%a6%b6%e0%a7%81%e0%a6%a7%e0%a7%81-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a7%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%9a%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%aa%e0%a6%a4/
Copyright ©2024 PriyoAustralia.com.au unless otherwise noted.