by Priyo Australia | April 20, 2015 6:25 am
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার অবদান নিয়ে এবার নির্মিত হচ্ছে তথ্যচিত্র ‘তাহারা’ ড্রিমকহলিক প্রোডাকশন হাউসের প্রথম প্রযোজনায় চার অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি এই তথ্যচিত্রটি নির্মান করছেন। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের সময় অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন দলিল নিয়ে একটি ডিজিটাল আর্কাইভ নির্মাণ করছেন এই চার প্রবাসী। আগামি স্বাধীনতা দিবসে সিনেমাটি অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশে একযোগে সিনেমাটি মুক্তি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্মাতারা।
নির্মাতারা হলেন- ওয়াসিম আতিক কিশোর, জহিরুল মল্লিক জুয়েল, এ কে এম ইমরান এবং নাজনীন আনোয়ার ইভা।
সাপোর্ট কমিটি ফর বাংলাদেশের জীবিত সদস্যরা
তারা জানান, শুধু বর্তমান প্রজন্মই নয়, মুক্তিযুদ্ধ সময়কার প্রজন্মের অনেক বাংলাদেশীই অস্ট্রেলিয়ানদের এই অবদানের কথা সেভাবে জানেন না। ‘তাহারা’ নির্মানের প্রেক্ষাপট এখান থেকেই শুরু। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বন্ধুপ্রতিম অস্ট্রেলিয়ানদের অবদান, কাজের ধরন এবং পরিপ্রেক্ষিতের কথা সবাইকে বিশেষ করে বাংলাদেশীদের জানানোই এটি নির্মানের মূল উদ্দেশ্য। এছাড়াও ‘তাহারা’ তথ্যচিত্রের মাধ্যমে এইসব অস্ট্রেলিয়ানদের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করারও একটি ছোট্ট প্রয়াস।
তথ্যচিত্রটি নির্মানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে নির্মাতারা জানান, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর অস্ট্রেলিয়ার অবদানমূলক একটি গবেষণা কাজের জন্য কয়েকটি অস্ট্রেলিয়ার দৈনিক পত্রিকার খবর সংগ্রহের কাজ চলছিলো। অপ্রত্যাশিতভাবেই বলা চলে, অনেক বেশি খবর ও তথ্য পাওয়া যায়। তখনই এবিষয়ে একটি আর্কাইভ করার সিদ্ধান্ত হয়।
তারা আরও জানান, একটি খবরের সূত্র ধরে চমকে যাবার মতো কিছু খবর পাওয়া গেল। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে শুধুমাত্র বাংলাদেশকে সমর্থন ও সহযোগিতা করার জন্য তিনটি এস্টেটে (ভিক্টোরিয়া, নিউ সাউথ ওয়ালেস (সিডনি) ও ক্যানবেরা) তিনটি ভিন্ন কমিটি কাজ করেছিলো “Support Committee for Bangladesh Liberation War” নামে। বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির (মোনাশ, মেলবোর্ন, সিডনি, অস্ট্রলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি) শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রবাসী বাংলাদেশীরা এই কমিটিতে কাজ করেছেন; জনগনকে সচেতন করেছেন, জনমত গঠন করেছেন, কিভাবে যুদ্ধ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য আর্থিক সাহায্য সংগ্রহ করে পাঠানো যায়, সেজন্য কাজ করেছেন। এমন একটা তথ্যই মূলত তথ্যচিত্রটি নির্মানের মূল অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে।
ডকুমেন্টারি দলের সাথে সাপোর্ট কমিটি ফর বাংলাদেশ এর সদস্যরা
‘তাহারা’য় অন্তর্ভূক্ত বিষয়গুলো হচ্ছে- ১৯৭১ এ প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ার দৈনিক পত্রিকার খবর (দি সিডনি মর্নিং হেরাল্ড, কান্বেরা টাইমস, দি এইজ, দি অস্ট্রেলিয়ান ইত্যাদি), অস্ট্রেলিয়ার সেই সময়ে প্রকাশিত কয়েকটা বইয়ের কপি (সোনার বাংলা ও অন্যান্য), যুক্ত ব্যক্তিবর্গ ও সাপোর্ট কমিটির ব্যক্তিদের সন্ধান ও তাদের নাতিদীর্ঘ প্রাসঙ্গিক সাক্ষাত্কার, যারা ১৯৭১ এর বাংলাদেশের জন্য ভূমিকা রেখেছিল (হারব ফেইথ, ডেভিড ফেইথ, জেফ লেছি, সেলি রায়, মার্ক রেপার, টিম কোলবেছ, বেরি ডায়েস্তার, জন ডানহাম, জন ওইয়েডিংহাম, চার্লস কপার, সামসুজ্জামান লোহানী, নজরুল ইসলাম উল্লেখযোগ্য), তৎকালীন অস্ট্রলিয়ান টিভি রিপোর্টের ফুটেজ ও যুদ্ধের ভিডিও এবং ১৯৭১ এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর অস্ট্রেলিয়া সরকারের বিবৃতি ও নথি।
তথ্যচিত্রটি নির্মানে সূত্র হিসাবে নির্মাতার ব্যবহার করেছেন- ১৯৭১ এ অস্ট্রেলিয়া সরকারের বিবৃতি ও নথি, ১৯৭১ ও পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত বই ও পত্র-পত্রিকার কপি, টেলিভিশন এর রিপোর্ট ও ফিচার এবং সাক্ষাৎকার ( বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার যুক্ত ব্যক্তিবর্গ)।
নির্মাতারা জানান, একাত্তরে এদেশে শিশু ও নারীসহ ভয়াবহ বেসামরিক গণহত্যা, ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় কোটি কোটি শরনার্থীর চরম দুর্ভোগ এবং সর্বোপরি একচেটিয়া চাপিয়ে দেয়া অনৈতিক যুদ্ধের মোকাবিলা করার দৃঢ়তায় বাংলাদেশের প্রতি বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষিত হয়। একদিকে পাকিস্তানের পক্ষে তথা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমেরিকা ও চীন প্রকাশ্যে অবস্থান গ্রহণ করে, অন্যদিকে মুক্তিকামী বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সুস্পষ্ট সমর্থন জানায়। এরই মাঝে তৎকালীন দুই পরাশক্তি সোভিয়েত-মার্কিন স্নায়ুযুদ্ধের প্রভাবকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র মানবিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছিল অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ নাগরিক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও স্কুল, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা।
এই মুহুর্তে তথ্যচিত্রের কাজ প্রায়ই শেষ; পোস্ট প্রোডাক্টসনের কাজ চলছে। নির্মাতারা আশা করছেন, ২৬ মার্চ তথ্যচিত্রটি মুক্তি দিতে পারবেন। পাশাপাশি মার্চ মাসে ডিজিটাল আর্কাইভটি www.mates1971.com.au[1] ওয়েবসাইতে এবং ফেসবুকে www.facebook.com/mates1971[2] দেখা যাবে।
Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2015/%e0%a6%b9%e0%a6%9a%e0%a7%8d%e0%a6%9b%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%ae%e0%a6%be-%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%be/
Copyright ©2025 PriyoAustralia.com.au unless otherwise noted.