by Anamul Bhuiyan Mukul | July 31, 2015 1:22 pm
জীবন ভ্রমন ৯ : এক বড় ভাই এর কথা । এক দিন এলাকার এক মুরুব্বি তাকে বলল: “…..এই ছেলে, এই সমস্ত কর কেন ! বেহেস্থ যাবি না ! ” উত্তর : ” দোজকে যাব , মাধুরির সাথে থাকব , তবুও ….কারণ আপনারা পানের পিক , নাকের রস ফেলে বেহেস্তও নস্ট করে ফেলবেন ।” মুরুব্বি : ” কি বললি ! তোর বাপের কাছে এর বিচার দিব । ” উত্তর: ” যান আব্বা বাসায় আছে ”
হীরক রাজার দেশ । যার যা খুশি কর । সিভিক সেনস এর বালাই নেই । এক দিন বিকালে কয়েকজন স্কুল বব্ধু মিলে মতিঝিল মাজার সংলগ্ন রাস্তায় হাটছিলাম । একজন পায়জামা পাঞ্জাবি পরা মুরুব্বিকে দেখে ‘ আসলামুআলাইকুম – আঙ্কেল ‘ বলে সম্বোধন করলাম । সাথে সাথে উনি ক্ষেপে গেলেন । “এই ছেলে আঙ্কেল বললে কেন , সালামও দিতে জানোনা , আমি তোমার আঙ্কেল হই নাকি ! ”
আমরা অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম । ব্যাপার কি ! বাবার বয়সী । সম্মান করে সালাম দিলাম , হিতে বিপরীত । একটু ইতস্ত করে জিগ্গেস করতেই মুরুব্বি বললেন স্যার বলে সম্বোধন করতে হবে । সাথে আরো কিছু ছবক দিলেন । মুখ চেপে হাসি আটকে রাখলাম । পরে আবার একদিন উনার সাথে দেখা । সবাই এক সাথে স্যার বলে সালাম দিলাম । এইদিন ও উনি ক্ষেপে গেলেন । আমরা আবার হোচট খেলাম । মুরুব্বি বললেন ” ফাজলামু কর ” । মনে মনে বললাম কিছুটা । নিজ থেকেই বললেন একজন সালাম দিলেই হয় ।
আসলে সেই মুরুব্বি ঠিক বলেছিলেন । একেবারে অপরিচিতদের স্যার বলে সম্বোধন করাই শ্রেয় । এই প্রবাসে তাই দেখছি । চাকুরী জীবনে দুই দিন (রাত বাদে ) তাবলিগে গিয়েছিলাম । কারণ আমার বস তাবলিগে যেতেন । আমাকে কনভিন্স করেছিলেন । বিকালে দাওয়াত এর কাজে বের হলে একজনে সালাম দিতেন এবং বাকিরা চুপচাপ থাকতেন । তখন ওই মুরুব্বির কথা মনে পড়ে ।
একবার ফাইনাল পরীক্ষার পর গ্রীন রোডে খালার বাসায় বেড়াতে যাই । কাজিন শামীম সহ সন্ধায় কিছু একটা করার জন্য রাস্তায় আসতেই এক হুজুর টাইপ লোক ধরে বসল । নামাজ সুরা ইত্যাদি নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে হল । ভয়ে সূরা তাসাহুদ একটু ওলট পালট হয় আমাদের দুজনের । আর যাই কই । আমাদেরকে হুজুর নিয়ে যায় কলা বাগান মসজিদে । এশার নামাজ পর্যন্ত সুরা মুখস্ত করন ও নানাবিধ ছবক । এশার আজান পড়লে অজুর কথা বলে এদিক ওদিক তাকিয়ে চলে এলাম । এর পর থেকে জানতে পারি উনারা তাবলিগ হুজুর ।
নামাজের সময় নাকি শয়তান মাথা বুলাতে থাকে যাতে ঘুমের নেশাটা ভালো হয় । ইউনিভার্সিটি জীবনে প্রায়ই আছরের নামাজের সময় এক বন্ধু দাওয়াতের কাজে রুমের দরজা নক করতেন । আর ওই সময় ঘুমটা পোক্ত হত । বন্ধু জন মুচকি মুচকি হাসত আর অন্যরা দাওয়াতের কথা বলত । রুম মেটরা যুক্তি করে একটা বিগ সাইজের পোস্টার এনে রুমের মাঝে রেখে দিলাম । এইখানে সমুদ্র বিচে ওই ছবিটি কমন দৃশ্য় । বন্ধু জন এর পর থেকে একাই আসত । আর দাওয়াতের কাজে বাহির থেকে দুই একটা ডাক দিয়ে চলে যেত ।
জীবন ভ্রমন ১০ : চিড়া-মুড়ি থেকে পিয়াজু- বেগুনি, আর ডুব দিয়ে পানি খাওয়া । সখ করে সবাই ছোটকালে রোজা রাখার চেষ্টা করে । তখন বড়োরা একটু মজা করে বলতেন, ক্ষিদা পেলে দুপুরে গোসলের সময় ডুব দিয়ে পানি খেয়ে নিবি । কেউ দেখবে না ।
আমি বরাবরই হেলথ মিনিস্টার ছিলাম । রোজা রাখা আমার জন্য একটু কষ্টকর ছিল । একদিন ইফতারের সময় একজন বলে উঠল মুকুল আজ ডুব দিয়ে পানি খাইছে । ওরে শরবত না দিলেও চলবে । আরেকজন বলল তুই দেখলি কেমনে ! আমি বললাম দুজন একসাথে ডুব দিয়েছি । জেঠা (বড় চাচা ) বলল আর কিছু খাইছ । বললাম না । “ঠিক আছে ভাল ট্রেনিং হইছে , আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে” । পূর্ণ ৩০ দিনের ট্রেনিং পেতে বহু বছর সময় লেগেছে । তাও এই বিদেশের মাটিতে । চেষ্টার ত্রুটি করি নাই ।
আজকাল ইফতারীর অনেক আইটেম । শিশু কালে জেঠার সাথে বসে ইফতারি করতাম । গুড়-নারিকেল-চিড়ার শরবত , আদা , কাচা ছোলা , ভিজা মুড়ি ও নারিকেল , লেবুর শরবত , ডাবের পানি ইত্যাদি । যে দিন মুসাফির আসত সেই দিন আমাদের কাচারী ঘরে বসে ইফতারি করতাম । জেঠা ৫০ বছর আগে হজ কবেছেন । প্রায় শত বছর পর বেচেছিলেন । শিশুকালে আদব কায়দা জেঠার কাছ থেকে শিখেছি । আমরা মুসাফিরের সাথে বসে খেতে ইতস্ত করতাম । জেঠা বলতেন গরিব হলেও ওরা আজ আমাদের মেহমান । মুসাফিরের সেবা করা ভাগ্যের ব্যাপার ।
১৯৭২ সাল থেকে ঢাকার ইফতারি । ছোলা, মুড়ি, বেগুনি ,পিয়াজো । মোটামটি নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি পরিবেশে । আব্বা মাজে মধ্যে দুই একজন গরিব লোক কে ইফতারির জন্য ডাকতে বলতেন । মসজিদের সামনে যে কয়জন ভিক্ষা করতেন তাদের পাওয়া মুশকিল ছিল । একদিন এক ভিক্ষুক চাচা বললেন – কি খাওয়াবা ? আমি বললাম এই এই আছে । উনি বললেন আজ একটা বিরিয়ানির দাওয়াত আছে । অনেক দিন পর …। তোমাদের বাসায় কাল যাব । ওই সময়ে বিরানীর দাওয়াত । নিশ্চয়ই রেশন দোকানের ব্যবসা ছিল ।
এক রোজার দিনে বিকালের আড্ডা শেষে বাসায় যাচ্ছি ।এক বন্ধু বললো রোজা রাখছস । বললাম না । বন্ধু বললো আমিও না , চল আজ মসজিদে ইফতার করি । বললাম কিভাবে । দুই টাকার ছোলা কিনে আমরা মসজিদে । গিয়ে দেখি গোল গোল হয়ে কয়েকটা গ্রুপ বসে আছে । মাঝখানে বড় একটা থালায সবকিছু একসাথে মিশানো । আমরা এক গ্রুপে বসে ছোলা গুলো থালায ঠেলে দিলাম । আজানের পর সবাই কয়েক মুঠ খেয়ে নামাজে । হাইজেনিক না হলেও সংযম ও সমতার একটা সুন্দর ব্যবস্থা । তাছাড়া পথচারী দের জন্য একটা ভাল ব্যবস্তা ছিল ।
Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2015/%e0%a6%9c%e0%a7%80%e0%a6%ac%e0%a6%a8-%e0%a6%ad%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ae%e0%a6%a8-%e0%a7%af-%e0%a7%a7%e0%a7%a6/
Copyright ©2025 PriyoAustralia.com.au unless otherwise noted.