by Priyo Australia | June 30, 2014 11:08 pm
সাধারণত আড়াই-তিন বছরের বেশি কোনো চাকরিতে আমি থাকি না।’ কথাটি শুনে বিষমই খেতে হয়। ‘চাকরিতে যখন একটু আরামের সময় আসে, তখনই চাকরি বদলাই। নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে চাই।’ এমনই চিন্তার মানুষ সোনিয়া বশির কবির—মাইক্রোসফট বাংলাদেশের নতুন কান্ট্রি ম্যানেজার। ১৬ জুন থেকে এ দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি।
এর আগে ছিলেন বিশ্বখ্যাত কম্পিউটার নির্মাতা ডেল বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার। রাজধানীর বারিধারায় নিজ বাড়িতে কথা হয় সোনিয়ার সঙ্গে। ‘ডেল আমাকে অনেক দিন ধরেই চাকরিটা নিতে বলছিল। কিন্তু তখন বাংলাদেশে ডেলের কার্যক্রম দেখাশোনা করা হতো পাকিস্তান থেকে। আমি বলেছিলাম, পাকিস্তানের অধীনে কাজ করব না। তোমরা বাংলাদেশে অফিস খোলো, যোগ দেব।’ হয়েছেও তাই। ২০১২-তে ডেল বাংলাদেশের কার্যক্রম চালু হয় সোনিয়ার নেতৃত্বে।
বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোকে ‘উদীয়মান বাজার’ হিসেবে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। তবে বাংলাদেশে বিশ্বখ্যাত কোনো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের নারী কান্ট্রি ম্যানেজারের প্রথম উদাহরণই সোনিয়া বশির কবির। তাও আবার তথ্যপ্রযুক্তি জগতে শীর্ষে থাকা দুটি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট করপোরেশন আর ডেল কম্পিউটারের।
মাইক্রোসফট বাংলাদেশে সোনিয়ার কাজ কী হবে? সোনিয়া জানালেন, মাইক্রোসফট গত বছর নকিয়ার মোবাইল অংশ কিনে নিয়েছে। উইন্ডোজ মোবাইল আর নকিয়ার সম্মিলনে স্মার্টফোনের বাজার নিয়ে মাইক্রোসফট বেশ আশাবাদী। আর ভবিষ্যতের তথ্যপ্রযুক্তি জগতের অনেকখানিই দখল করে থাকবে ইন্টারনেটভিত্তিক ক্লাউড প্রযুক্তি। বাংলাদেশে মাইক্রোসফটের মোবাইল ও ক্লাউড এই দুটি বিষয়ের নেতৃত্ব দেবেন সোনিয়া বশির কবির। ‘নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে আমি কাজ করতে চাই। এ জন্য মোবাইল প্রযুক্তির চেয়ে ভালো কিছু কী আর হতে পারে। মাইক্রোসফটের মাধ্যমে অনেক কিছু করারই সুযোগ রয়েছে।’ বললেন সোনিয়া।
ডেলের একটা কর্মসূচির ধারণা নিয়ে কথা বলেন সোনিয়া। ‘একদিন আমাদের গৃহকর্মী তাঁর কলেজপড়ুয়া ছেলের একটা কম্পিউটার কেনার জন্য টাকা চান।’ গৃহকর্মীকে সোনিয়া পরামর্শ দিলেন বাজার থেকে সংযোজিত (ক্লোন) কোনো কম্পিউটার কিনে নিতে। কিন্তু তিনি সোনিয়ার প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার কিনতে চান। ‘সে তো অনেক দাম।’ গৃহকর্মী তখন বলেন, ‘কিস্তিতে দেবেন।’ এ থেকেই সোনিয়ার মাথায় আসে নতুন চিন্তা। আমার দেশ আমার গ্রাম নামের একটা সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতায় চালু হলো ডেল শি পাওয়ার, ডেল স্টুডেন্ট পাওয়ার আর ডেল ফ্যামিলি পাওয়ার কর্মসূচি। এর আওতায় নারী, শিক্ষার্থী ও পরিবার সহজ কিস্তিতে ডেল কম্পিউটার কিনতে পারে। এখন ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে এ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। ব্র্যান্ড কম্পিউটারও যে সাধারণ মানুষের হাত পৌঁছে দেওয়া যায়, সেটা করে দেখান সোনিয়া বশির কবির।
আর ডেলের ব্যবসা? চলতি বছরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে ডেল বাংলাদেশ।
সোনিয়া বশির কবিরের পেশাজীবন শুরু যুক্তরাষ্ট্রে। তথ্যপ্রযুক্তির আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত সিলিকন ভ্যালিতেই কর্মজীবন শুরু। ১৫ বছরের কর্মজীবন কেটেছে সান মাইক্রোসিস্টেম, ওরাকলের মতো প্রতিষ্ঠানে। অর্থ নিয়ন্ত্রক হিসেবে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের অন্দর-বাহির সবই বুঝেছেন ভালোভাবে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে সফল হলেও তাঁর পড়াশোনা প্রযুক্তি নিয়ে ছিল না। বাবা এম আর বশির চাকরি করতেন আইসিডিডিআরবিতে, মা রেহানা বশির ছিলেন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক। সোনিয়ার পড়াশোনার শুরু সানবিমস স্কুলে। এরপর গ্রিন হেরাল্ড হয়ে ভিকারুননিসা কলেজে উচ্চমাধ্যমিক। ১৯৮৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় সোনিয়া মানবিক বিভাগে ঢাকা বোর্ডে ষষ্ঠ হন।
এইচএসসির পর পড়তে যান যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড কলেজ পার্কে। ১৯৮৬ সালে দেশে আসেন। স্বামী এহতেশাম কবির সফটওয়্যার প্রকৌশলী। ১৯৮৯ সালে সান্তা ক্লারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন সোনিয়া।
১৯৯০ থেকে ২০০৫—যুক্তরাষ্ট্রে দেড় দশকের পেশাজীবন পার করে সোনিয়া বশির কবির চলে আসেন বাংলাদেশে। এর পর থেকে স্বামী, ছেলে ইহসান, মেয়ে সিয়েনাসহ পুরো পরিবার নিয়ে দেশেই রয়েছেন।
সুত্রঃ www.prothom-alo.com
Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2014/%e0%a6%b8%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%af-%e0%a6%89%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a8%e0%a6%a4-%e0%a6%95%e0%a6%ae%e0%a7%8d%e0%a6%aa%e0%a6%bf%e0%a6%89%e0%a6%9f%e0%a6%be/
Copyright ©2024 PriyoAustralia.com.au unless otherwise noted.