by Priyo Australia | October 6, 2014 6:32 am
সারাদেশে চলছে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। সশস্ত্র যুদ্ধরত সমগ্র জাতি। এ অবস্থায় মুসলিম সমপ্রদায়ের সর্বোচ্চ উত্সব ঈদ-উল-ফিতর এসে উপস্থিত। ২০ নভেম্বর শনিবার আসে ঈদ-উল-ফিতর।
এ রকম ঈদ আর কখনো বাঙালি দেখেনি। সেদিন ঈদের রূপ ছিল ভিন্ন। রণাঙ্গন, শরণার্থী শিবির আর দেশের ভেতরে আতঙ্কের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয়েছিল সে ঈদ। ঈদের দিনেও পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত ছিল বাংলার মুক্তিযোদ্ধারা। ভুরুঙ্গমারিতে শহীদ হয়েছিলেন বীর উত্তম আশফাকুস সামাদ। এছাড়াও সারাদেশে অসংখ্য যুদ্ধ এবং শহীদ হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল।
‘ঠিক মনে পড়ছে না, তবে যদ্দুর মনে পড়ে সেবার পুজো হয়েছিল অক্টোবরের প্রথম দিকে।… পুজোর সময়ে কলকাতার অন্য এক চেহারা দেখে বিস্মিত হলাম। কলকাতায় কেমন করে পুজো হয়, তা দেখার জন্যে পার্ক সার্কাস এলাকার কয়েকটা পুজোমণ্ডপ ঘুরে দেখতে বেরিয়েছিলাম। আমীর আলি অ্যাভেনিউ যেখানটাতে পার্ক স্ট্রিটের সঙ্গে মিশেছে, সেখানে বড় একটা মণ্ডপ হয়েছিল। খুব চাকচিক্য, অগুনতি আবালবৃদ্ধবনিতা।
মনে পড়ছে না সে বছর কোন নায়িকার আদলে দুর্গার প্রতিমা তৈরি করা হয়েছিল। তবে নিশ্চিতভাবে সুচিত্রা সেন নন। কারণ, তিনি তাঁর অনেক আগে থেকেই ভাটার দিকে। হয়তো অপর্ণা সেন হবেন। বোধ হয় স্টেটম্যানেও একটা লেখায় এরকম কথা পড়েছিলাম। নয়তো দুর্গা প্রতিমার কোনো বিশেষজ্ঞ আমি নই। সে যাকগে, প্রতিমার দিকে চেয়ে দেখি, গণেশ-কার্তিক-অসুর ইত্যাদি সুরাসুরের কয়েক ফুট দূরেই একটা বড় ফটো টানানো—আদিকালের কোনো দেবতার নয়, এক জীবন্ত দেবতার, শেখ মুজিবের। বিস্মিত না-হয়ে সত্যি উপায় ছিল না। যে মুসলমানদের সংস্পর্শে এলে এককালে হিন্দুদের ধর্ম নষ্ট হতো, মুসলমানদের খাবার গন্ধ কোনোক্রমে নাকে ঢুকলে কুলীন ব্রাহ্মণও পীরালি ব্রাহ্মণে পরিণত হতেন, সেই মুসলমানদেরই একজনের ছবি দুর্গা পূজার মণ্ডপে! মুজিবের ছবি ছাড়া কলকাতার লোকেরা পুজোর আনন্দটা ঠিক যেন পুরোপুরি অনুভব করতে পারছিলেন না।
সত্যি বলতে কি, শেখ মুজিব সেবারে ধর্মীয় অনুষঙ্গের ঊর্ধ্বে উঠেছিলেন এবং ‘‘যার যা কিছু আছে তা নিয়ে সংগ্রামে’’র আহ্বান জানিয়ে তিনি শত শত বছরের সাম্প্রদায়িকতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিলেন কোটি কোটি লোককে। আমার সত্যি খুব ভালো লাগলো ভেদ ঘোচানোর এই অসাধারণ দৃষ্টান্ত দেখে। তবে এটাকে আমি ব্যতিক্রমধর্মী একটা দৃষ্টান্ত বলেই মনে করলাম। গেলাম অন্য একটা মণ্ডপে। দেখি সেখানেও শেখ মুজিবের ফটো। তারপর আর একটাতে। সেখানেও তা-ই। বুঝতে পারলাম, আজ ভাবের যে বন্যা দেখা দিয়েছে, তাতে এতকালের জাতপাতসহ বহু মূল্যবোধই ধুয়ে-মুছে একাকার হয়ে গেছে।’
(সূত্র: গবেষক গোলাম মুরশিদ-এর ‘যখন পলাতক : মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি’)
* পত্রিকায় প্রকাশিত আনোয়ার কবির স্যারের লেখার অংশ বিশেষ
Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2014/%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a7%81%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%a7%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a7%9f-%e0%a6%af%e0%a7%87%e0%a6%ae%e0%a6%a8-%e0%a6%88/
Copyright ©2024 PriyoAustralia.com.au unless otherwise noted.