মুখোশ পরে হামলা করলো যারা, ওরা কারা?

by Ajoy Kar | March 17, 2013 3:41 am

সাইদির ফাসির রায়কে কেন্দ্র করে সারা বাংলাদেশজুড়ে ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা, ঘরবাড়ি ভাংচর, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ সহ জীবন নাশের মত যে নাশকতামুলক ঘটনা ঘটেছি্ল সে নিয়ে এ,টি,এন বাংলানিউজের বানাণো বিশেষ প্রতিবেদনটি দেখছিলাম গতকাল রাতে (শুক্রবার, কেনবেরার সময়)।

২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ সাইদির ফাসির রায় মেনে নিতে না পেরে সাইদি’র মতানুদর্শে বিশ্বাসীরা সারা বাংলাদেশজুড়ে প্রায় সপ্তাহাব্যপি যে তান্ডব চালায় তাতে আইন রক্ষা বাহিণী’র লোক সহ নিরাপোরাধ প্রায় ১০০ জনেরও বেশি লোক মারা যায় (source: Bangladesh Political Crisis deepens, Asia Times Online, March 14, 2013), ক্ষতিগ্রস্থ হয় গাইবান্ধার বিদ্যুতকেন্দ্র সহ লক্ষকোটি টাকার সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের, জন্ম দেয় অনেক প্রশ্নের।

এ,টি,এন বাংলানিউজের স্বচিত্র প্রতিবেদনটিতে বাশখালিতে হিন্দুদের মন্দিরে আর তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপরে হামলার যে অংশবিশেষ দেখানো হয়েছিল সেখানে এক তরুন ব্যবসায়ী বলেন যে, হামলা কারীদের অনেকেই মুখে কাপর বেধে হামলা চালায়। দেখে দেখে এরা শুধু হিন্দুদের দোকানে লুটপাট করে- আশেপাশে অন্য দোকান থাকলেও সে গুলিতে তারা হামলা করে নি। এতে সঙ্গত কারনেই প্রশ্ন জাগে, এই হামলা নিছক হামলা নয়- রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে শত্রুতা উদ্ধার, নয়তোবা সুযোগ বুঝে নেহায়ত কিছু কামিয়ে নেওয়া।

আর মুখোশ পরে যারা হামলা চালাল তারাই বা কারা?- এরা কি তবে স্থানীয় লোক? -নাকি বাশখালীর বাইরে থেকে ভাড়া করে নিয়ে আসা লোকজন?- নাকি অন্য কোন দেশের লোক?

সরকারী বেসরকারী প্রচার মাধ্যমে আমরা জেনেছিলাম রোহিংগারা নাকি রামুতে হামাল চালিয়েছিল- তবে তারা মুখোশ পড়ে সেই হামলা চালিয়েছিল কিনা আমার জানা নেই। মুখোশ পড়ে হামলা চালানোর কারন হয়তো এই যে হামলা কারীকে যাতে কেউ সনাক্ত করতে না পারে। আর সনাক্ত করার প্রশ্ন আসে তখনই যখন কিনা হামলা কারী হয় স্থানীয় কেউ। তাই, সেই যুক্তিতে ধরে নেওয়া যায় বাশখালীর হামলা কারীরা স্থানীয় লোকজন- হিন্দুদের দোকান পাট লুটপাটের সময় দোকানের মালিক কিংবা কর্মচারীরা যাতে তাদের সনাক্ত করতে না পাড়ে সেই জন্যেই মুখোশের ব্যবহার।

বাংলানিউজের স্বচিত্র প্রতিবেদনটিতে অনেকেই মতামত ব্যক্ত করেছেন যে, যদি ২০১২-তে রামু, ঊখিয়া, টেকনাফ আর পাটিয়ার সংখ্যালঘুদের উপর যে হামলা হয়েছিল তার বিচার হলে হয়তো দুস্কৃতিকারীরা এভাবে দেশজুরে তান্ডব চালিয়ে সংখ্যালঘুদের ব্যবসা আর সম্পদ লুটপাট করতে সাহস পেত না [ফেব্রুয়ারী’১২, মার্চ’১২, আর সেপ্টেম্বর’১২ – এই আট মাসে পর পর তিনবার সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হলেও, এসব হামলাকারীদের উপযুক্ত কোন শাস্তি হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এসব হামলা হয়েছিল সাইদির ফাসির রায়ের আগে]।

অনেকেই আবার মনে করেন, সংখ্যালঘুদের ভিটেমাটি টুকুনের ওপরে স্বার্থন্নেসী মহলের লোলুপ শ্যেন দৃষ্টি আছে বলেই বারে বারে এভাবে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হচ্ছে।

জামাতি নেতা সাইদি’র ফাসির রায়ের বিরুদ্ধে ডাকা মিছিল মিটিং-এ’র সু্যোগ নিয়ে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের জান-মালের উপরে যে হামলা তার ব্যখ্যা দিতে গিয়ে অনেকেই বলেছেন সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমন করে জামাত-শিবির চাইছে দেশের ভিতর এক অরাজকতা ঘটিয়ে রাজাকারদের বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহাত ঘটাতে। তবে, রামুর ঘটনা নিয়ে মশিউল আলমের আশঙ্কা’র কথা উল্লেখ করে প্রথম আলোতে লেখা আনিসুল হকের ৯ই অক্টোবর ২০১২- এর প্রতিবেদনটিতে কিছুটা ভিন্নতা আছে। আনিসুল হকের সেই প্রতিবেদনটির অংশ বিশেষ এখানে তুলে দেওয়া হলোঃ

‘আমাদের আশঙ্কা, অন্য অনেক তদন্তের মতো এই তদন্তের কোনো ফল আসবে না। কারণ, তদন্ত হওয়ার আগেই দায়িত্বশীল মুখ থেকে ‘কে দায়ী, কারা দায়ী’ তা বলে ফেলা হয়েছে। আর প্রথম আলোয় মশিউল আলম যেমনটা লিখেছেন, এখানে সব কটি রাজনৈতিক দলই একাকার হয়ে ভূমিকা পালন করেছে। তার ওপর যুক্ত হয়েছে অসহায় বৌদ্ধ পরিবারের ভিটেমাটিটুকুনের ওপরে লোলুপ শ্যেন দৃষ্টি, ‘ওটা দিতে হবে।’ মশিউল আলমের আশঙ্কা, এ ধরনের অপকর্ম আবারও ঘটতে পারে’।
[আনিসুল হকের লেখাটির লিঙ্ক এখানে দেওয়া হলঃ http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-10-09/news/296287[1] ]

ধরা ছোয়ার বাইরে পর্দার আড়ালে থেকে অনেকেই বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর আক্রমন চালিয়ে তাদেরকে মানষিক ভাবে দূর্বল বানিয়ে দেশ ছাড়া করে তাদের সম্পদ কুক্ষিগত করার দূরভি সন্ধি্তে লিপ্ত বলে জানিয়েছেন প্রথম আলোর প্রতিবেদক আবুল মোমেন। শিশূ পরাগ অপহরনের উপর তৈরি প্রতিবেদনের প্রতিবেদক আবুল মোমেন মনে করেন, যারা শিশূ পরাগকে অপহরন করেছিল তাদের লোভাতুর দৃষ্টি পরাগদের জমি-জমা, ধন-সম্পত্তির উপর। তিনি মনে করেন, সন্তান অপহরনের মধ্য দিয়ে হিন্দু পরিবারটিকে মানষিক ভাবে দূর্বল বানিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য করানোর দুরভীসন্ধি রয়েছে পরাগ অপহরনের পিছনে।

প্রথম আলতে ছাপানো আবুল মোমেনের সেই লেখাটি’র কিছু অংশ বিশেষ এখানে তুলে দেওয়া হলোঃ
‘…পরাগের বাবার জমি ও সম্পত্তির ওপর যার নজর পড়েছে, সে এ পর্যায়ে হাল ছেড়ে দেবে, তেমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই……১৯৪৭-এর পরে অনেকবার বড় রকম ধাক্কা খেয়েছে এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়— ১৯৫০, ১৯৫৮, ১৯৬৪, ১৯৬৫, ১৯৭১, ১৯৭৫, ১৯৯০, ১৯৯২, ২০০১। তার ওপর আছে পরাগ অপহরণের মতো অজস্র বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সব মিলিয়ে হিন্দু মনস্তত্ত্বে অত্যন্ত সংগতভাবে এ দেশে স্থায়ীভাবে থাকা যাবে কি যাবে না, এ দ্বন্দ্ব কাজ করতে থাকে…’।
[আবুল মোমেনের প্রতিবেদনটির লিঙ্ক এখানে দেওয়া হলোঃ http://prothom-alo.com/detail/date/2012-11-22/news/307576[2])]

আবুল মোমেনের এই খবরটি পড়তে পড়তে ভাবছিলাম গরীব রাজমিস্ত্রি মোঃ জসিমের কথা। বেচারা গরীব জসিমকে ৫০ টাকায় ভাড়া করা হয়েছিল মসজিদের দেওয়াল ভাঙ্গার জন্যে। মসজিদের দেওয়াল ভাঙ্গার পাল্টা জবাবে মন্দির ভাঙ্গা হয়েছিল- লাগানো হয়েছিল হাটহাজারিতে হিন্দু-মুসলিম দাংগা- ঘটানো হয়েছিল মন্দিরে লুটপাট (সুত্রঃ Samakal, 17 February 2012) ।

পরাগ অপহরনের কাহিনী আর রাজমিস্ত্রি জসিমের জবানবন্দীতে এটাই প্রমান হয় যে লোক চক্ষুর আড়াল থেকে একদল সুযোগ সন্ধানী লোক বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটিয়ে সংখ্যালঘুদের সম্পদ দখল নেওয়ার চক্রান্তে লিপ্ত। এরা যদিওবা কোণ রাজনৈতিক দলভুক্ত থাকে- আসলে এরা সু্যোগ সন্ধাণী; এদের কোনো রাজনৈতিক আদর্শ নেই। এরা ভিতু, তাইতো আড়ালে থেকে এরা ধংশযজ্ঞ চালায়-এদের মুখোশ খুলতে হবে। জানতে হবে এরা কারা?

আমি বিশ্বাস করি, এসব মুখশধারীরা যত চতুরই হোক না কেন, তাদের রাজনৈতিক শিকড় যত গভীরই হোক না কেন, বাংলাদেশের ভবিস্যত প্রজন্ম এসব মুখশধারীদের একদিন না এক দিন ঠিকই মুখোশ খুলতে সক্ষম হবে- যে ভাবে সক্ষম হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ বিচারের দাবিতে সাইদির ফাসির রায় পেতে। তাই, স্বাধীনতাপ্রিয় প্রতিটি বাঙ্গালির মত আমিও তাকিয়ে আছি নতুন প্রজন্মের দিকে- যারা প্রতিষ্ঠা করবে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ যার নাগরিকরা বিশ্বাসে ও কাজে প্রমান করবে ‘ধর্ম আমার, দেশ আমাদের’; যেখানে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে পাবে অনাচারের সুবিচার।

Endnotes:
  1. http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-10-09/news/296287: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-10-09/news/296287
  2. http://prothom-alo.com/detail/date/2012-11-22/news/307576: http://prothom-alo.com/detail/date/2012-11-22/news/307576

Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2013/%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%96%e0%a7%8b%e0%a6%b6-%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a6%b2%e0%a7%8b-%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%be/