by Zinia Zaheed | August 29, 2013 9:20 am
পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের পরির্দশক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান জোড়াখুনের প্রধান আসামি, তাদের একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমান সম্প্রতি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দ্বি দিয়েছে। ঐশী বাবা-মা হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও নিজের অংশগ্রহণে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার কথা স্বীকার করেছে। বয়স নিয়ে বিতর্ক থাকায় জবানবন্দ্বি দেবার পর ঐশীকে গাজীপুরের কোনাবাড়ি কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
আমরা এও জানতে পারি ঐশীর পরে গ্রেফতার হওয়া, ঐশীর মতই রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল ১৩ বছরের নাবালিকা গৃহপরিচারিকা সুমিকে। বুঝলাম যে, খুনের জট খোলা ও তথ্য সংগ্রহের জন্য সুমির জবানবন্দ্বি মামলার খাতিরেই দরকার ছিল। কিন্তু নাবালিকা সুমিকে তো রিমান্ড ছাড়াও জিজ্ঞাসাবাদ করা যেত, ঠিক যেমন করা হয়েছে পুলিশ দম্পতির সন্তান ঐহিকে।
প্রশ্ন হলো, শুরু থেকেই সুমিকে কেন আসামী হিসেবে ট্রিট করা হচ্ছে? বাসায় কাজ করে, এইজন্য? গরিব মানুষের মেয়ে, এই জন্য? ঐশীর বয়স নিয়ে নানা বিতর্ক বাজারে চালু আছে, কেউ বলে ১৭, কেউ বলে ১৯। এত সব কুতর্কের মাঝে তার মেডিক্যাল পরীক্ষাও হয়েছে বলে আমরা জানতে পারি। কিন্তু সুমির বয়স নিয়ে তো কোনো বিতর্ক নেই। ওকে তাহলে কেন ঐশীর মতই সব পরীক্ষা দিতে হচ্ছে?
যেখানে খুনের মোটিভ অতি স্বচ্ছ, যেখানে আসামী নিজেই নিজেকে খুনি দাবি করে স্বীকারোক্তি করছে, সেখানে সুমিকেও কেন কড়া পুলিশি প্রহরায় থাকতে হচ্ছে?
সবাই যখন মানবাধিকার, শিশুঅধিকার নিয়ে দেশ মাথায় তুলেছিল, তখনও নাবালিকা সুমির কথা তেমন উচ্চারিত হয় নাই। রিমান্ডে থাকাকালীন সুমি কেমন ছিল আমরা তা জানিনা, আমরা শুধু জানি ঐশী কেমন ছিল। আমরা জানি কিভাবে ইয়াবার জন্য ঐশী পুলিশের পায়ে পরছিল। আমরা জানি ঐশীর যাতে শিশুঅধিকারে কোনো ব্যাঘাত না হয়, সে ব্যাপারে ঐশীর পুলিশ আঙ্কেল ও আন্টিরা জিজ্ঞাসাবাদের সময় নাকি ভীষণ সতর্ক ছিলেন। কিন্তু সুমির ক্ষেত্রে কি হয়েছিল তা আমরা জানি না।
রিমান্ডে থাকাকালীন সময়ে সুমি ও ঐশীর জিজ্ঞাসাবাদের পর আমরা সবাই জানি যে, সুমি সেই রাতে ড্রইংরুমে ঘুমাচ্ছিল। ঐশী তার মুখে পানির ছিটা দিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে মৃতদেহ সরিয়ে নিতে তাকে সাহায্য করতে বলেছিল। তাছাড়া সুমি ঐশীর বাবা-মায়ের খাবারে বা পানীয়েও কোনো রকম ঔষধ মিশিয়ে দেবার সাথেও জড়িত নয়।
একে তো মাঝরাতে গভীর ঘুম ভেঙ্গেছে, তার উপর চোখের সামনে জোড়া খুন। ঐশীর আজ্ঞা পালন করে লাশ সরানো, ও বাড়ি থেকে ঐশী ও ঐহির সাথে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া শিশু সুমির সামনে কি কোনো পথ খোলা ছিল আদৌ? সে তো খুন করে পালিয়ে যায় নাই। ঐশী তাকে ও ঐহিকে সাথে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল।
বিভিন্ন তথ্যানুযায়ী একটা বিষয় অন্তত পরিষ্কার যে, সুমি কোনভাবেই খুনের সাথে জড়িত নয়। তাহলে রিমান্ডে থাকার পর অপরাধী ঐশীর সাথে সুমিকেও কেন উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে? সে কেন কিশোর অপরাধীদের সাথে ওখানে থাকবে?
তর্কের খাতিরে ধরেই নিলাম বয়স নিয়ে বিতর্কিত ঐশী পিতামাতাকে খুন করেছে, বুঝলাম তার ভবিষ্যতের জন্য তাকে শোধরানোর সুযোগ দেয়া উচিত, তাই সে সংশোধন কেন্দ্রে বসে বসে এমব্রয়ডারি শিখছে, টিভি দেখছে, ভাত-মাছ খাচ্ছে। কিন্তু সুমির সংশোধনের কি কোনো প্রয়োজন আছে? ওর কি কোনো উজ্জ্বল ভবিষ্যত নেই জন্যই ওকেও আসামীদের সাথে দিন পার করতে হবে?
সুমির পিতামাতা আদৌ আছে কি না, কিংবা ওর জন্য কেউ জামিনের আবেদন করেছে কি না আমরা কেউ জানি না। জামিনের আবেদন কেউ না করলে এবং সেই সাথে এইসব মামলা মোকদ্দমায় পরে সুমির জীবনটাও কি হুমকির মুখে পরছে না? ঐশীর পাপের বোঝা কি সুমিকেও বহন করতে হবে আজীবন? এভাবে বিনা দোষে মিডিয়ার চোখ ঝলসানো ফ্লাশে কি সুমির জীবনটাও ঝলসে যাচ্ছে না? অপরাধীদের সাথে অকারণে সুমিকে রেখে তার জীবনটাকে কি আমরা অন্ধকারে তলিয়ে দিচ্ছিনা?
শুধু দু’মুঠো খাবারের জন্যই সুবিধাবঞ্চিত শিশু সুমি বাবা-মা ভাইবোন ছেড়ে ঢাকায় ঐশীদের বাসায় কাজ নিয়েছিল। ঘটনা দৈবপাকে জড়িয়ে ছোট্ট সুমি কেন আসামির তকমা পাবে? কেন তার ভবিষ্যত অন্ধকারে তলিয়ে যাবে? কেন অন্যের দোষে সে শাস্তি ভোগ করবে?
সুবিধাবঞ্চিত নিরাপরাধ সুমির মুক্তির জন্য তাই জোর দাবি জানাই।
Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2013/%e0%a6%90%e0%a6%b6%e0%a7%80-%e0%a6%96%e0%a7%81%e0%a6%a8%e0%a6%bf-%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a7%81-%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%a6%e0%a7%8b%e0%a6%b7/
Copyright ©2024 PriyoAustralia.com.au unless otherwise noted.