by Farina Mahmood | September 15, 2013 9:17 pm
জোসেফ ও স্টেলা দুই মানবসম্পদ উন্নয়ন কর্মী । পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের আজাইরা মানুষজনকে কিভাবে দক্ষ মানবসম্পদে পরিনত করা যায়, তা নিয়েই তাদের গবেষণা ও কাজকর্ম । সেই সুবাদে নানা দেশে তাদের যাবার সুযোগ হয়েছে, কাজের প্রয়োজনে মিশতে হয়েছে নানা শ্রেনী পেশার মানুষের সাথে । শেষবারে তাদের প্রোজেক্ট ছিলো বাংলাদেশ । দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার এদেশটি সম্পর্কে ধারণা নিতে গিয়ে তাদের মনে হয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্র হিসেবে এদেশের প্রোসপেক্ট চমত্কার । যথারীতি হোমওয়ার্ক শেষে জোসেফ এবং স্টেলা রওনা হলো বাংলাদেশের পথে । কাজের বাইরেও তাদের কিছু প্ল্যান আছে । সুন্দরবন, বান্দরবান, রাঙামাটি ও কক্সবাজার ভ্রমন ছাড়াও তালিকায় আছে বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ, ঈশাখা’র রাজধানী সোনারগাঁ এবং নাটোরের রাজবাড়ী দেখা । যে কোনো দেশে গেলে সেদেশের লোকাল চলচ্চিত্র দেখা চাই-ই স্টেলার । তার অংশ হিসেবে তালিকায় আছে হোয়াট ইস লাভ (নিঃস্বার্থ ভালবাসা) মুভিটি । মুভির নামটা ইন্টারেস্টিং, মনে হচ্ছে বাঙালী ও ইংরেজ জাতি একযোগে ভালবাসার খোঁজে নেমেছে ! জোসেফের নেশা অন্য, কোনো দেশে গেলে সে দেশের স্পেশাল কিছু খাবার তার খেতে হবেই । ওর তালিকায় আছে ফখরুদ্দিনের বিরিয়ানী, বাকরখানি, সর্ষে ইলিশ, কলিজু ভুনা এবং লইট্টা ফিশ ফ্রাই ।
যাহোক, মোটামুটি বাংলাদেশের মেজর সব এরিয়া কভার করার পর তাদের প্রোজেক্ট রিপোর্ট লেখা শুরু হলো । আগামী সপ্তাহে জেনেভায় সেমিনার । বাংলাদেশ থেকে সোজা জেনেভায় গিয়ে অংশ নিতে হবে বিশ্বের আরো ১৮ টি দেশের প্রায় ১০০০ মানবসম্পদ উন্নয়ন কর্মীর সাথে । সেখানে প্রজেক্ট এর হাইলাইটস তুলে ধরতে হবে, সরেজমিন অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে দেখাতে হবে এদেশে কি পরিমান আজাইরা জনগোষ্ঠী আছে এবং এদেরকে কর্মদক্ষ করে তুলতে কি ধরনের স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং দরকার । মোট ১৪ টি দল বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের উপর তাদের পর্যবেক্ষণ প্রেজেন্ট করবে যার শেষে রয়েছে প্রশ্নোত্তর পর্ব ।
জোসেফ ও স্টেলা এই সেমিনারের শেষ গ্রুপ । যথাসময়ে বাংলাদেশের উপর বলতে শুরু করলো জোসেফ ।
– গুড আফটারনুন লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান । ইট ওয়াজ ইনডিড আ প্লেজার টু হ্যাভ বাংলাদেশ এস আওয়ার প্রজেক্ট প্লট । আ ফিফটি ফাইভ থাউস্যান্ড স্কয়ার মাইল প্লেইন ল্যান্ড ইন সাউথ ইস্ট এশিয়া উইথ আ পপুলেশন অফ এরাউন্ড হানড্রেড এন্ড সিক্সটি মিলিয়ন । হাউএভার, বিফোর প্রসিডিং টু এনালাইজ দি প্রোস্পেক্ট, উই হ্যাড টু স্টপ । বিকজ হোয়াট উই ফাউন্ড, ক্লিয়ারলি কনফ্লিক্টস উইথ আওয়ার হোমওয়ার্ক অন দিস কান্ট্রি (“কী দেখার কথা কী দেখছি, কী শোনার কথা কি শুনছি” এক্সপ্রেশন) !
এ পর্যন্ত বলে জোসেফ একটু থামলো । দর্শকসারিতে তেমন কোনো উত্তেজনা দেখা গেলোনা । সবগুলো গ্রুপই বোঝানোর চেষ্টা করেছে তারা যতটুকু আশা নিয়ে একটা অঞ্চলে গিয়েছে, বাস্তবে দেখা গেছে ওই অঞ্চল আসলে তার চেয়ে অনেক বেশি প্রোসপেক্টিভ … পুরা গোল্ড মাইন । আজাইরা জনতা লুঙ্গি কোঁচ মেরে হাডুডু খেলার ভঙ্গীতে রেডী হয়ে আছে, জাস্ট কাজ শিখিয়ে দিলেই হলো … এক্কেরে উল্টায়ে ফেলবে ! জোসেফের কথা তেমন কিছু ধরে নিয়েই দর্শকসারি ঝিমাচ্ছে । এমতাবস্থায় মাইকে স্টেলা বলে বসলো –
– ইয়েস ডিয়ার অডিয়ানস, টু আওয়ার গ্রেটেস্ট সারপ্রাইজ বাংলাদেশ লিটারালি হ্যাভ নো আনইউসড পপুলেশন ! এভরি সিঙ্গেল পারসন উই কেইম আক্রস, ইস বিজি ডুইং সামথিং । দিস ল্যান্ড দেয়ারফোর, লীভস নো রুম ফর ম্যানপাওয়ার ডেভেলপমেন্ট । এভরি সিঙ্গেল ওয়ান ইস আ সুপারম্যান হিয়ার !
দর্শকসারি নড়ে চড়ে বসলো। “কস কী মুমিন” – ধরনের অস্ফুট গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে । কেউ কেউ তো মনে মনে বলেই বসলো, ব্রিটিশরে ইংরেজী শিখাও ? প্রোজেক্ট এর কাজ ফালায়ে ইচিং বিচিং খেললে তো এমন তথ্যই উদ্ধার করবা । কেউ আবার ভাবছে কিরে ! বাংলাদেশ কি তাইলে মালোয়েশিয়া সিঙ্গাপুর হয়ে গেলো ?
এই অবস্থায় মাইক নিলো জোসেফ । এনি কোশ্চেন এনিওয়ান ?
একজন মাঝবয়সী জাপানী মহিলা বাদে দর্শকসারির প্রত্যেকে হাত তুলল ! স্টেলা সেটা খেয়াল করলো এবং বললো, ও মাই গড ! অলমোস্ট এভরিবডি সীমস টু হ্যাভ সামথিং টু আস্ক !
প্রায় সবার হয়ে প্রশ্নটি করলেন এক কানাডীয় প্রফেসর । তোমরা কি খুঁজে বের করেছো যে ১৬০ মিলিয়ন মানুষের এই উন্নয়নশীল দেশে সবাই যদি কর্মব্যস্তই থাকে, তো দেশের চেহারা এমন কেনো ?
উত্তর দিতে শুরু করলো জোসেফ । নিয়মানুসারে শিশুরা আমাদের হিসাবের বাইরে । এডাল্টদের মধ্যে আমরা বলেছি সবাই কাজে ব্যাস্ত, কারো কোনো অবসর নেই । কিন্তু তারা কী কাজে ব্যাস্ত তা তো বলিনি ! দ্যা ক্রুয়েল ফান লাইস ইন দ্যা ফ্যাক্ট, যে এদেশে সবাই একটি হাত অন্যের পেছনে লাগিয়ে রাখে (ভদ্র ভাষায় লিখলাম)। মূলত অন্যের দোষ খুঁজে বের করা, ভালো কাজে ক্যারফা লাগানো, উপরে উঠতে গেলে টেনে নিচে নামানো, লেইট নাইট টক শো তে হাউকাউ …. এইসব কাজেই ২৪x৭ তাদের একটি হাত ব্লক । জোসেফ থামলো ।
দর্শকসারি প্রায় চিত্কার করে পরের প্রশ্নটি করলো – ফেয়ার এনাফ ! হোয়াট হ্যাপেনস টু দি আদার হ্যান্ড ? দ্যাট স্টিল কাউন্টস হানড্রেড এন্ড সিক্সটি মিলিয়ন !
স্টেলার উত্তর – এস আ ম্যাটার অফ সেল্ফ ডিফেন্স, দি রিমেইনিং হ্যান্ড ইস ইউসড টু কভার দেয়ার ওউন ব্যাকসাইড …. (আবারও বলি, ভদ্র ভাষায় লিখলাম)।
এবার প্রশ্ন করলো একজন মিশরীয় – কিন্তু আমরা যে দেখলাম, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম অনলাইনে অত্যন্ত শক্তিশালী । তারা তো অনেক কিছুই বদলে দেয়ার নজির রাখছে । আমার কিছু বাংলাদেশী বন্ধু আছে, ফেইসবুকে আমি তাদের কার্যক্রম দেখেছি । তাদের ব্যাপারেও কি তোমরা একই কথা বলবে ?
মাথা চুলকে জোসেফ উত্তর দিলো – মুশকিল তো এইখানেই মাই ফ্রেন্ড, তাদের দুটি হাতই যে কীবোর্ডে ব্যাস্ত … অর্থাৎ, তাদেরও হাত খালি নাই !
সেমিনার শেষে ডিনারে স্টেলা ওই জাপানী মহিলাকে খুঁজে বের করে বিনয়ের সাথে জানতে চাইলো, প্রশ্নোত্তর পর্বে কেন তিনি হাত না তুলে মিটিমিটি হাসছিলেন ? উত্তরে মহিলা হাসলো আবার । তারপর বললো, আমি একজন বাংলাদেশীকে বিয়ে করেছি কুড়ি বছর হয়, আমার হাসব্যান্ডরা ৪ ভাই ও ৩ বোন । কাজেই বাংলাদেশ আমার লাইফলং প্রোজেক্ট !
পূর্বনির্ধারিত সূচী অনুযায়ী, আগামী বছর রিভিউ এনালাইসিস করতে আবার বাংলাদেশ আসবে জোসেফ ও স্টেলা । জ্বী বন্ধু, আপনাকেই বলছি, আমি আপনি আমরা সবাই কি পারিনা হাত দুটো দেশের কাজে লাগাতে ? পারিনা জোসেফ স্টেলা আর সারা বিশ্বের ধারণা পাল্টে দিতে ? পারি বলেই তো মনে হয় … চলেন নেমে পড়ি, অমার্জিত আচার আচরণ আর কু-অভ্যাস পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে । একগুয়েমী, পক্ষপাত আর মুর্খতা সাইড লাইনে রেখে । ভালো কে ভালো আর খারাপ কে খারাপ বলতে শিখে ।
দেশটা তো আমাদেরই তাই না ? আমরাই তো বাংলাদেশ !!
Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2013/%e0%a6%86%e0%a6%ae%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%87-%e0%a6%a4%e0%a7%8b-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6/
Copyright ©2024 PriyoAustralia.com.au unless otherwise noted.