by Farid Ahmed | May 28, 2012 6:35 am
মূক্তির অপেক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমেদ, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে সেই মুক্তির স্বাদ ভোগ করবার অভুতপূর্ব সুযোগ করে দিয়েছিলেন। গণতন্ত্রের শিশুটি বাংলাদেশে তখন মায়ের কোলে। মায়ের কোল ছেড়ে নামতে না নামতেই সেই গণতন্ত্রের শিশুটিকে কতিপয় মেজর-ক্যাপটেন হত্যা করতে ধাবিত হন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে।যেখানে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত মুক্তিকামী জনতা ছুটেছে স্বাধীনতার জন্য, সেখানে হাযির হয়েছে বাঙালী সৈনিক কামান নিয়ে। কি নৃশংস হত্যাকান্ড!
যদি তাঁরা সেখানেই থামতো তাহলে হয়তো কেমন হতো জানিনা। তবে, যে ধারার সূচনা তারা সেদিন করেছিল তার থেকে আজও মুক্ত হয়নি বাংলাদেশ। মুক্ত হয়নি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। দেশে এখন ৩৩ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু নতুন কোন বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্বশাসন পায়নি। বরং, মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আজও নানা কারণে শৃংখলবদ্ধ। সেই শৃংখল থেকে মুক্ত করতে আমাদের আন্দোলন করতে হবে কিনা জানি না, তবে মুক্তির প্রত্যাশায় মুক্তিকামী জনতা আদালতের দ্বারে করাঘাত করছেন। নি:সন্দেহে এটি একটি শুভ উদ্যোগ। কিন্তু আদালতের উপর মানুষের আস্থা অনেক কমেছে। কারণ তারা এখনও প্রকৃত স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছে না। সেটা অনেকটা তাঁদের স্বার্থবুদ্ধির জন্যই যতটা না বহি:হস্তক্ষেপ। আদালত বিশ্ববিদ্যালয়কে গণতান্ত্রিক হতে কতটুকু সহায়ক হবে তা বোঝা যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির রাজনৈতিক অধিকার বন্ধনমুক্ত হোক-এ আমাদের সকলের কামনা।
একাবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্বশাসন অত্যন্ত জরুরী। আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে মাইনাস টু-র আশংকা করছেন তার থেকে মুক্ত হতে হলেও দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়কেই স্বায়ত্বশাসন দিতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ২০০৭ সালে এই মে মাসে জেলে নিক্ষেপিত হলে ঐ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবাদের ধ্বনি আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে দিয়েছিল ছাত্র-ছাত্রী-শিক্ষকবৃন্দ। জানি আপনার সময় নেই সেদিকে তাকাবার, জানি আমাদের মন অতীতকে দ্রুত ভুলে যায়, তথাপি আমরা ভুলিনি। সেদিন বিবিসিতে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক কবির চৌধুরী সারা বিশ্বে প্রতিবাদ ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্জে উঠেছিলেন অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন যিনি সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছেন। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি অধ্যাপক সদরুল আমিনও জেলে গেছেন। আমরা কি পারতাম না অন্যদের মত তাঁকে কোন একটি সম্মান্বিত পদে নিয়োগ দিতে? দলকাঁনা অবস্থা থেকে না উঠতে পারলে প্রশাসন ও শিক্ষাঙ্গন অস্থির হবে এবং সেই অস্থিরতা থেকে জম্ম নেবে গণতন্ত্রের হুমকি: ১৫ আগষ্ট, ২৪শে মার্চ, ১/১১, ইত্যাদি।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিরজমান অস্থিরতা দলকানা ও কোটারী আচরণ থেকে উদ্ভুত।আর এসব সম্ভব হয় স্বায়ত্বশাসন না থাকার কারনে। গণতন্ত্রে হুমকি মোকাবেলায় প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি আনতে হবে।স্বাধীনতা না থাকলেও ১/১১-র সময় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় নেমেছিল। সেদিন আপনি কারাগারে ছিলেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অবদান আপনার কাছে আজও পৌছেনি।
আমরা আপনার দিন বদলের সরকার ক্ষমতায় আসবার পর তাকিয়ে ছিলাম। আপনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়াতে বা ডিগ্রী আনতে গেছেন। আপনি ও শেখ রেহানা নিজের সন্তানদেরকে হার্ভাড ও অক্সফোর্ডে পাঠিয়েছেন। আমরা আশা করেছিলাম আপনারা সেই সব উন্নত মডেল ও উন্নত পদ্ধতি আমাদের সন্তানদের জন্য ব্যবস্থা এদেশেই করবেন। আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে হয়তো বলবেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হবে সত্যিকার বাঙালীর অক্সফোর্ড যাতে কোন বাঙালীকে সন্তানকে বিদেশ না পাঠাতে হয়। কিন্তু আজও খবর পড়লাম আপনি বিমান বাহিনীর জন্য উড়োজাহাজ কিনবেন। মীগ, কামান ও উড়োজাহাজ কি উপকারে আসবে জানিনা। ভাবতে কষ্ট হচ্ছে বলেই এই কষ্টের কথা লিখে ফেললাম। কারণ আমি উপদেষ্টা, উপাচার্য বা রাষ্ট্রদূত পূরষ্কার চাইনা। আমি জাতির জনকের স্বপ্নগুলিই আপনাকে স্বরণ করে দিতে চাই।
মুক্তির আকাংখায় বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ যে অনুষ্ঠানে আপনার মনোনীত উপাচার্যরা গিয়েছিলেন সেই পেশাজীবি পরিষদ আপনাকে গণতন্ত্র রক্ষায় বলেননি বিশ্ববিদ্যালয়কে গণতন্ত্র না দিলে রাষ্ট্রে গণতন্ত্র নিরাপদ নয়। তাঁদের নেতা যিনি গণতন্ত্রের জন্য ১/১১-র সময় সোচ্চার ছিলেন তিনি গণতন্ত্রের দাবি উপেক্ষা করে কেন ডাকসুর নির্বাচন দিচ্ছেন না বা নিজে নির্বাচিত হয়ে আসছেন না জানিনা। এসব কি অনির্বাচিত সরকারের পক্ষের অবস্থানকে শক্তিশালী করছে না?
বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নানাভাবে পরাধীনতার শিকলে অবদ্ধ। তার মাঝে অন্যতম হল: আর্থিক শৃংখল। এই শৃংখল থেকে মুক্তি পেয়েছে নতুন তিনটি বিশ্ববিদ্যালয। তবে সে মুক্তি খুবই নগন্য। প্রতিবছরই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ওয়াজ শুনতে হয়: নিজের আয় বাড়ান। আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় বাজেট এক পয়সাও বাড়েনি। আপনার এক মন্ত্রীকে বলেছিলাম আমাদের মালটি মিডিয়া প্রয়োজন। তিনি কথা দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রীকে বলবেন। আপনাকেও বলবেন। খবরের কাগজে পড়লাম ১০০০ বিদ্যালয়ে মালটিমিডিয়া গেছে। আপনি সেই মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শিশুদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এক কাপ চায়ের দাম পাঁচ টাকা। ২১ জন শিক্ষককের জন্য প্রয়োজন ১০৫ টাকা। একজন চেয়ারম্যান ৮০ টাকার বেশী একটি মিটিং-এ খরচ করতে পারবেন না বলে নির্দেশনা আছে। এই আইন পালন করতে আমরা কেঊ পারিনা। তাই আমাকেও র্দূভোগ পোহাতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজের আয় বাড়াতে গিয়ে জীববৈচিত্র ধংশের মিথ্যা অভিযোগে উপাচার্য পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। গনতন্ত্র রক্ষার ও শক্তিশালীর জন্যই শিক্ষক নিয়োগ। কিন্তু সেজন্যও উপাচার্যকে নাজেহাল হতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় যদি পর্যাপ্ত অর্থ না পায় তাহলে কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় হবে মুক্তবুদ্ধি চর্চার তীর্থস্থান? অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া কি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রয়াণ সম্ভব?
যদি সামান্য সুযোগ সুবিধার জন্য যদি শিক্ষককে লাশ হয়ে ফিরতে হয়, যে শিক্ষক বিদ্যা দিয়ে পুলিশ বানায় সেই শিক্ষক যদি পুলিশের লাঠি পেটার শিকার হয় তাহলে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে নয় কী? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দাবী জানাতে এসে এভাবে ফিরে যাওয়াকে কেঊ সহজভাবে নেয়নি। বাজারদর ও শিক্ষকের বেতন যেন আকাশ পাতাল পার্থক্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রভাষক সর্বসাকুল্যে পান ১৬ হাজার টাকা। তাকে বাড়ি ভাড়া দিতে হয় ১২ হাজার টাকা। এবার ভাবুন তিনি কি খান বা তিনি কি পরিধান করেন। একজন সৈনিকেরও আছে মিশন আর ডিএইচএস। একজন আমলার আছে খাস জমির ঠিকানা জানা। তাই বাড়ী-গাড়ীর চিন্তা করতে হয় না। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ঐ সৈনিকের সামনে কেবল বেচারা! এভাবে আর কতকাল চলবে জানি না। দেশটাতো আমাদের একলার কারোও না। বঙ্গবন্ধু যে জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দিয়ে গেছেন তা কি দেশ পরিচালনায় স্থান পাচ্ছে? আমার কাছে মনে হয়েছে উওরটা না। আরেকটি ১/১১ ঠেকাতে চাই সুষম বন্টন ব্যবস্থা। সেটা সম্পদ ও পদ উভয়ই। ছাত্রলীগ করে বলে কাঊকে নিয়োগ না দেওয়া(অভিযোগ আছে) আর পদন্নোতি থেকে বঞ্চিত করা যেমন উচিত নয় তেমনি নাগরিক অধিকার থেকে কাঊকে বঞ্চিত করা অনুচিত। উন্নয়ন বাজেটও সুষম হওয়া প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় যা পায় আর সামরিক বাজেট যা হয় তা কি সুষম? এভাবে অসম বন্টন নীতি অনুসরণ করে গণতন্ত্রর বিকাশ ও ১/১১-র মাইনাস ট্যুর পরিস্থিতি পরিহার সম্ভব কী? ১/১১ বা মাইনাস ট্যু ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতন্ত্র, স্বায়ত্বশাসন ও আরও আর্থিক সাহায্যর প্রয়োজন। তাতে জাতির মুক্তি অপ্রতিরোধ্য। আমরা মুক্ত ক্যাম্পাস চাইবো আর তার থাকবে না অর্থনৈতিক মেরুদন্ড তাহলে কি অজ্ঞানতা থেকে মুক্তি সম্ভব? সন্ত্রাস থেকে যেমন আমাদের মুক্তি কাম্য তেমনি প্রত্যাশা অর্থনৈতিক মুক্তি । আমাদের এ আশা কি অপূরণ থেকে যাবে?
Priyoaustralia.com.au
Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2012/muktir-opekhay-uni-campus/
Copyright ©2024 PriyoAustralia.com.au unless otherwise noted.