Holidays: Best 10 Days in Bangladesh

by Shahadat Manik | February 22, 2012 5:00 am

ছুটির অবসরে সেরা দশ দিন

আমার চাকরি জীবনের শুরুটা স্কুলের শিক্ষকতা দিয়ে। একেবারে নিজের গ্রামে নিজের স্কুলে। বাউল হবার আশায় গ্রামে পড়ে ছিলাম দীর্ঘ দিন। আবার কিছু দিন বেদে সর্দারের সাথে ভাব করে, বেদেও হতে চেয়েছিলাম। মূলত: শেষে কোন কিছু না হতে পেরে মনের দ:খেই স্থানীয় হাইস্কুলে যোগ দিয়েছিলাম। শিক্ষকতা আমার ভালো লাগে – ছোটবেলা থেকেই প্রাইভেট পড়ানোর অভ্যাস আছে পকেট মানির জন্যে এবং যে টাকাটা অভিভাবকদের কাছ থেকে কোন ভাবেই চেয়ে নেয়া যায় না – এমন পকেট মানি! সে যাই হোক, সে সব স্মৃতি অন্য কোন সময় বলা যাবে – এবারকার লেখার সাথে এ সব বিস্তারিত খুব একটা যায় না।

বাৎসরিক ছুটির সুবাদে, ২৫ বছর পর আবার যাবার সুযোগ হল আমার সেই গ্রামে, সেই স্কুলে। বর্তমান প্রধান শিক্ষক আমার সহকর্মী ছিলেন এবং আগে থেকেই সব ঠিক ঠাক ছিল, ২২শে ডিসেম্বর (২০১১) থেকে আমার কি কি চাই। নূনতম একটা ভালো ক্লাসরুম যে খানে ৫০ জন ছাত্রের সহজে যায়গা হবে। আর ব্ল্যাক বোর্ডটা যেন লেখার উপযোগী থাকে। ক্লাস হবে প্রতিদিন ১০টা থেকে ৩:৩০ পর্যন্ত। আগেও না, পরেও না। ২১শে ডিসেম্বর পৌঁছলাম গ্রামের বাড়ী। শিতের সময়, তার উপর শৈত্য প্রবাহ বইছে। সূর্যের দেখা পাওয়া বড় ভার। ২২ তারিখ সকাল ৯:৩০শে উপস্থিত হলাম স্কুলে। ভারি কুয়াসায় ঢেকে আছে চতুর্দিক – দশ হাত দুরেও খুব পরিষ্কার নয় আশপাশ। স্কুলে শিক্ষকদের সাথে কুশল বিনিময় হল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানালেন সব রেডি আছে, ১০টায় আমি শুরু করতে পারব। ক্লাস, চক, লিখার বোর্ড, বোতল যাত পানি, ছাত্র, সবই রেডি, কজন শিক্ষক এলেন দেরিতে এবং বসার ব্যবস্থা পরিবর্তন(প্রতি বেঞ্চে পাঁচ জনের পরিবর্তে তিন জন) করে ‘কর্মশালা’ শুরু হল ১১টায়।

এমন অজ-পাড়া গায়ে আইটি কর্মশালা – আমার জানা মতে এর আগে শুনিনি। মনে শক্তি, ভয় দুটোই ভর করে ছিল আমার। ভয়টা ছিল মূলত: আমার নিজেকে নিয়ে। বাচ্চাদের মনোযোগ ধারাবাহিক সাতদিন মূল বিষয়ের দিকে ধরে রাখতে পারবো তো? বিষয়টা তো পুরোপুরিই স্বাদ গন্ধহীন! আবার শক্তি ছিল এই ভেবে যে – এ প্রজন্মের বাচ্চারা টেকনোলজি প্রিয়, হয়তো আমাদের চেয়েও দ্রুত ধারণ করতে পারে এসব স্বাদ গন্ধহীন তেলেসমাতি। সে যাই হোক – পেছনে তাকাবার সময় নেই এখন আর – সামনে এগিয়ে যেতেই হবে। কর্মশালা চলবে ২২শে ডিসেম্বর ২০১১ থেকে ০২ জানুয়ারি ২০১২ পর্যন্ত।

যে বিশাল বাজেট নিয়ে শুরু করেছিলাম তার ধারে কাছে না যেতে পারলেও – ক’জন বন্ধু বাংলাদেশ থেকেই সাহায্যের হাত বাড়ালেন। একজন ৬০টি ব্যাক-পেকের ব্যবস্থা করলেন (বেশ উন্নত মানের/ভিতরে পানি যাবে না এবং ডিজাইন যিনি করলেন তিনিও টাকা পয়সা নিতে চাইলেন না), একজন কর্মশালা’র ৭৫টি টিশার্ট দিলেন, একজন দিলেন ৭০সেট বই, খাতা, কাগজ, পেন্সিল, রাবার, স্কেলের টাকা, একজন দিলেন পুরো কর্মশালা’র নাস্তা ও খাবারের খরচ (৭ দিন; ৬০ জনের) এবং আর একজন দান করলেন এল সি ডি মনিটর সহ নতুন একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার। সস্তি পেলাম – বড় বড় ডোনারদের কাছ থেকে বিমুখ হবার পর। যারা নামে সর্বস্ব সমাজ সেবক – নাম, নিজের প্রচার না থাকলে গাঁটের কানাকড়িও খসায় না!

অনেকেই যুক্ত হতে চেয়েছিলেন এই ভেবে যে বিদেশ থেকে এসে কর্মশালা করছে – নিশ্চয়ই কোথাও বিদেশি ডোনেশনের নহর বইছে! বন্ধুদের কেউই তাঁদের নাম ব্যাবহার করতে চাইলেন না, অনেকটা জোর করেই তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছি ব্যাক-পেক আর টিশার্টে।

দুই ধাপের (পাঁচ দিন ও দু’দিন)এই আইটি কর্মশালা থেকে আমার প্রত্যাশার মাত্রা খুব একটা উপরে নয়। এটার একটা বিশেষ কারণও আছে। কারণটা হচ্ছে, আমি শিক্ষক থাকা অবস্থায় স্থানীয় প্রাইমারি থেকে যে বাচ্চা গুলো আসতো হাইস্কুলে – তাদের বেশির ভাগই ইংরেজি বাংলা দু’টিতেই কাচা থাকতো। এদের মধ্যে থেকে আইটি মেনটরিং করার মতো দু’একজন পাবো, এটা অনেকটা দিবা স্বপ্ন বললে বাহুল্য বলা হবে না। যারা কম্পিউটার চোখে দেখলেও, জীবনে কখনো ছুঁয়ে দেখার সুযোগ পায়নি (অন্তত আমার ক্লাসের কেউ না, দু এক জন শিক্ষক ছাড়া) অন্তত তাদের কাছ থেকে আগামী ৭ দিনে খুব বেশি আসা করাটা বোকামি পর্যায়েই পড়বে।

ক্লাস শুরু হল। মাঝে দুটো বিরতি একটি নাস্তা পানির জন্যে (১৫ মিনিট) আর অন্যটি দুপুরের খাবারের/নামাজের জন্যে (১ ঘণ্টা)। এখানে বলে রাখা ভালো যে আইটি কর্মশালা টি মূলত ‘কি ভাবে কম্পিউটার চলে’ এর উপর পাঁচ দিন (কি ভাবে কম্পিউটার চালায় – এ বিষয়গুলোর জন্যে গ্রামে গন্ঝে এখন প্রচুর ট্রেনিং সেন্টার আছে) এবং শেষ দু’দিন কি ভাবে ই-মেইল, ইন্টারনেট ব্যাবহার করে তার উপর (উপকারিতা/অপকারিতা সহ)। প্রতি দিন আধা ঘণ্টার স্লট রোহিত মানিকের, যে খানে রোহিত তার অস্ট্রেলিয়ান স্কুল জীবনের নানা দিক নিয়ে কথা বলতো। খাবারের/নামাজের বিরতির পর ২য় সেশন শুরু হয় “প্রকৃতি ও জীবন” আধা ঘণ্টার ভিডিও প্রদর্শনী দিয়ে (ফরহাদুর রেজা প্রবাল ভাই ও চ্যানেল আই এর মুকিত মজুমদার বাবু ভাইকে বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ এর জন্যে)। অনেক চেষ্টা করেও ইউনিয়ন পরিষদের সরকারী প্রজেক্টর, অতিরিক্ত ভাড়ার জন্যে নিতে পারিনি (১৫০০ টাকা প্রতিদিন; ৫০০ টাকা পর্যন্ত রাজি ছিলাম)। সরকারী কোন নীতিমালা নেই – তবুও ভাড়া ছাড়া দেয়া যাবে না (ডিসি’র মুখের আদেশ) এটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের মত। ভিন্ন মতের, উপজেলা নির্বাহী অফিসার খুবই সাপোর্টিভ ছিলেন কিন্তু তার সাথে আমার পরিচয় হয় অনেক দেরিতে।

প্রথম দিনের ক্লাসের পরই আমি নড়ে চড়ে উঠলাম। পরিবর্তনের হাওয়া সব খানেই। গ্রামের বাচ্চারা আর বসে নেই। ‘কম্পিউটারের হাতে খড়ি’ যে মাঝারী আকারের বইটা দিয়ে ক্লাস শুরু করেছিলাম তার প্রতিটা অধ্যায়ের শেষে কিছু রিভিউ প্রশ্ন থাকত এবং পাঠ শেষে, আমি লক্ষ্য করলাম দু’একজন ছাড়া সবারই উত্তর দিতে পারছে। আবার সেই দু’একজনই পরবর্তীতে দেখা যায়, সমান তালে চলছে সবার সাথে। যে ক’জন শিক্ষক ছিলেন তারাই বরং কিছুটা ধীর মনে হল – বিষয় বুঝে নেয়ার ব্যাপারে। যখনই প্রশ্ন করার সুযোগ আসে ছাত্রদের থেকে, বেশির ভাগ প্রশ্নই ছিল চমৎকার। বেশ আগ্রহী আর মনযোগী মনে হল সবাইকে। অবশ্য আমার ক্লাসে ছিল, প্রতি ক্লাস, সেকশন থেকে টপ ৩ জন করে। ৪৭ জন ছাত্র/ছাত্রী এবং ৫ জন শিক্ষক। মনে হল ক্লাস ফাইভে এখন বোর্ড পরীক্ষা হওয়াতে, সবাই লেখা পড়া করেই হাই স্কুলে আসে।

পাঁচ দিনের ক্লাস শেষে এবার আরও ভালো কিছু ছাত্রকে খুঁজে নেবার পালা। যাদেরকে আমি পরবর্তী দু’দিন হাতে কলমে শেখাব – যারা নিজেরা শিখে বাকি অন্যদেরকে শেখাবে। ইন্টারভিও শুরু হল মোট ৫২ জনের। মূল লক্ষ্য কিছু মেনটর খুঁজে বের করা – যারা বাংলা, ইংরেজিতে ভালো, একই সাথে নেতৃত্ব দেয়ার গুনাগুণও আছে। ভেবেছিলাম ১ জন শিক্ষক সহ মোট ৫ জন নেব।প্রায় সবাই ইন্টারভিওতে ভাল করল। দূরহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল, কাকে রাখব কাকে বাদ দেব? শেষ পর্যন্ত ১১ জন ছাত্র কে নিতেই হল (যাদের ১০ জনই মেয়ে) এবং কোন মতে যুক্ত হল ১ জন শিক্ষক।

দু’দিনের কর্মশালা শুরু হল। সব মিলে মাত্র ৬টি কম্পিউটার সংগ্রহ করতে পারলাম। টপ ১২ সাতে আরও দু চারজন অতি উৎসাহী ছাত্র/ছাত্রী ক্লাসে থাকতে চাইলো। না করতে পারলাম না। শুরু হল ক্লাস। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তারা শিখে নিলো কিভাবে মাউস, কি বোর্ড, স্পেশাল বাটন ব্যাবহার করতে হয়! ২য় দিন ছিল আরও অবাক হবার পালা। একবার মাত্র দেখিয়েছিলাম কি ভাবে ইন্টারনেট এ যেতে হয়, কিভাবে কি করতে হয়। তার পর আর দেখাতে হয়নি আমাকে। নিজেরা নিজেরা শিখে নিলো কি ভাবে গোগল, ইমেইল, ওয়েব সাইটে যেতে হয়, ব্রাউজার খুলতে হয়, বন্দ করতে হয়।

এবার ৫২ জনকে নিয়ে গঠিত হল – খিলা বাজার হাইস্কুল কম্পিউটার ক্লাব। মূল উদ্দেশ্য ছাত্র/ছাত্রীরা যেন – স্কুল থেকে বেরিয়ে গিয়েও স্কুলে, এই ক্লাবের মাধ্যমে কন্ট্রিবিউট করতে পারে, নলেজ শেয়ার করতে পারে। মেম্বার হতে হলে, স্কুলের সাথে জড়িত থাকলেই হবে এবং কমপক্ষে একজন ক্লাবের বর্তমান মেম্বারের সুপারিশ লাগবে। মেম্বার ফি বছরে ৪০ টাকা (প্রতি তিন মাসে ১০ টাকা)। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তারা নিজেরাই স্থির করবে। যে শিক্ষক রা জড়িত থাকবেন তাঁরা শুধু গাইড হিসেবেই কাজ করবেন। তারা ইচ্ছে করলে স্কুলের অন্যদের জন্যেও একই রকম কর্মশালা’র ব্যবস্থা করতে পারে। স্কুলের ওয়েব সাইট (www.khilabazar.com[1]) এবং ফেইজবুক (http://www.facebook.com/pages/Khila-Bazar-High-School/246098448772051[2]) আপডেটের দায়িত্বও এই ক্লাবের উপরে। ক্লাবের বর্তমান এসেট হল ৪টি ডেস্কটপ কম্পিউটার, ১টি ডিজিটাল ক্যামেরা, মোবাইল ইন্টারনেট এবং অবশ্যই তাঁর সেরাদের সেরা মেধাবী অর্ধশত মেম্বার।

এবার সার্টিফিকেট বিতরনের পালা। স্কুল থেকে আয়োজন করা হল। স্কুল কমিটি, গার্ডিয়ান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের আমন্ত্রন জানালেন প্রধান শিক্ষক। রেকর্ড পরিমান উপস্হিতি – প্রায় ৬০০/৭০০ গার্ডিয়ান এলেন (প্রধান শিক্ষকের মতে এমন উপস্হিতি এই প্রথম), এদের মধ্যে মায়েদের উপস্হিতি ছিল চোখে পড়ার মত ৮০% থেকে ৯০%।

নিচে ওয়ার্কসপের লক্ষ্য ও অর্জন গ্রাফে তুলনা মুলক ভাবে দেখানো হয়েছে।

পরবর্তী ওয়ার্কসফে (২০১২-২০১৩) কনট্রিবউট করার জন্যে যোগাযোগ করতে পারেন shahadatmanik@yahoo.com এবং যে কোন ধরনের সাহায্যকে অবশ্যই স্বাগত জানাই।

My workshop was organsied by GRITT (Grass Root International Think Tank) at www.priyo.org[3]. More workshop photos at http://www.facebook.com/media/set/?set=a.283861738329055.63100.246098448772051&type=3[4]

2012/127821_holidays_top_1_394337742.pdf[5] ( B) 

Endnotes:
  1. www.khilabazar.com: http://www.khilabazar.com
  2. http://www.facebook.com/pages/Khila-Bazar-High-School/246098448772051: http://www.facebook.com/pages/Khila-Bazar-High-School/246098448772051
  3. www.priyo.org: http://www.priyo.org
  4. http://www.facebook.com/media/set/?set=a.283861738329055.63100.246098448772051&type=3: http://www.facebook.com/media/set/?set=a.283861738329055.63100.246098448772051&type=3
  5. 2012/127821_holidays_top_1_394337742.pdf: https://priyoaustralia.com.au/live/wp-content/uploads/files/2012/127821_holidays_top_1_394337742.pdf

Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2012/holidays-best-10-days-in-bangladesh/