Democracy and Freedom in University

by Farid Ahmed | March 23, 2012 10:15 pm

বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা

-ড.ফরিদ আহমেদ, অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

সাম্প্রতিককালে একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। আর তাহলো: বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতন্ত্র নেই। কারণ, সেখানে ছাত্র সংসদ ও উপাচার্য নির্বাচন হচ্ছে না। দাবী জোরালো করতে বলা হচ্ছে: স্বৈরাচারী সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক পন্থায় উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। প্রশ্ন করা হয়েছে: যে যারা ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসন কায়েম করেছিলেন, যে আওয়ামী লীগ জাতির জনকের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা বলে, সেই আওয়ামী লীগ কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে চাচ্ছেন না? এ প্রশ্নের উওর আমি খোঁজার চেষ্টা করেছি কোন আওয়ামী নেতার সঙ্গে আলোচনা করে নয়, নিজের অভিজ্ঞতার আলোকেই খুঁজেছি। এখানে কেবল উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে লিখবো।

১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুসারেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ মহামান্য রাষ্ট্রপতিই দেন। তিনি নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মহান সংসদের ভোটে নির্বাচিত। তিনি যাদের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন আজ তাদের সততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আমার প্রশ্ন: মহামান্য রাষ্ট্রপতি কি অযোগ্যদেরকে উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছেন? ২০০৯ সালে যখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তখন কেউতো বলেননি অযোগ্য ব্যক্তিকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাহলে: তিন বছরের মাথায় এসে কেন বিতর্কিত প্যানেল নির্বাচন পদ্ধতিকে সমর্থন করা হচ্ছে?

আমরা অতীতে দেখেছি সর্বোচ্চ ভোট পেয়েও যেখানে ভিসি হওয়া যায় না, যেখানে উপাচার্য হওয়ার জন্য রেজিস্টার গ্রাজুয়েট, বর্তমান ছাত্রনেতা, ও দলবাজ শিক্ষক নেতাদের পিছনে ছুটছে হয়, যেখানে রাজনৈতিক হানাহানির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মুখে পড়ে, যেখানে ভোট বাণিজ্য পল্লী বা বস্তি এলাকার চেয়ে কম নয়, সেখানে কি যুক্তি অবশিষ্ট থাকছে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের পক্ষে? একজন গুণী অধ্যাপক ছুটবেন এখানে সেখানে কেবল উপাচার্য হওয়ার জন্য- এটা কি শোভন দেখায়?

সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচিত উপাচার্য যারা অপসারণ করেন তাঁদের মুখে অন্তত:নির্বাচিত উপাচার্য-র দাবী শোভা পায় না। ১/১১-র সময় ড. কামাল হোসেন ও তাঁদের মত বুদ্ধিজীবীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতিকে ধিক্কার দেননি? আমরা কি খুব বেশী সময় অতিক্রম করেছি? মহামান্য রাষ্ট্রপতির মনোনীত উপাচার্যরা এত অল্পতেই বিষিয়ে গেছে?

আমরা ৩৫ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে হানাহানির উপাচার্য নির্বাচন দেখেছি। সেখানে ছিল কেবল কুৎসিত রাজনীতি যা শিক্ষাঙ্গনকে গিলে খাচিছল। তখনও বলা হতো শিক্ষক নিয়োগের নামে ভোটার নিয়োগ দেওয়া হয়। কোমল মতি ছাত্রদেরকে ব্যবহার করে ক্ষমতা আহরণ করেন শিক্ষকরা। আজও ভোটার নিয়োগ হচ্ছে বলে প্রতিবাদ করা হচ্ছে। ভোটার নিয়োগ যে হয় না তা আমি বলবো না। তবে, বিগত বছরগুলিতে একটি অসম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছিল মুক্তবুদ্ধির মানুষগুলোকে নিপীড়ন করবার জন্য। তাঁরা বাছাই করে ছাত্রদেরকে বেশী নম্বর দিত আর মুক্তচিন্তার একজন ছাত্রকে কম নম্বর দিত। সেই অন্যায়কে ন্যায় বিচারের আওতায় আনতে কিছু কিছু নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে আমি জানি। আর সেইগুলো নিয়েই প্রতিবাদ। পার্থক্য যদি হতো ৯০ আর ৪০ তাহলে অভিযোগ মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু যদি সেটা ৮৯ বা ৯০ হয় তাহলে অসুবিধা কোথায় আমি জানিনা। জোট সরকারের আমলে এমন শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে যাদের আছে পোশাকি প্রথম শ্রেণী। আমার প্রতিবাদী সহকর্মীরা তাঁদের কে জানেন এবং তাদেরকে নিয়ে অনেক নেতিবাচক মন্তব্যও করেছেন। আজ তাঁদেরকে নিয়েই আন্দোলন করছেন হয়তো!

কেবল প্রথম শ্রেণী পেলেই ভাল মানুষ বা ভাল শিক্ষক হয় না। আমরা ভাল মানুষকে শিক্ষক হিসেবে চাই। যারা অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিতে দ্বিধা করছেন না, তাদেরকে কিভাবে ভাল মানুষ বলবো? আর তাঁরা যদি শিক্ষক হন তাহলে আমাদের ছাত্ররা কি শিখবে?

যদি কোন উপাচার্য অন্যায় করেন তাহলে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে জবাবদিহিতার জন্য হাযির করা যেতে পারে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি তো আমাদের দূরের মানুষ নন। তিনিতো সকল অধ্যাপককে বছরে দু’বার দাওয়াত দেন। ওনার কাছেতো যাওয়া যায়।তিনি নিশ্চয়ই ন্যায় বিচার করবেন। উপাচার্যকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি যেকোন সময় অপসারণ করতে পারেন।

একটি ব্যর্থ পদ্ধতিকে আবার ফিরিয়ে আনার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। আমি জানি বেশ কিছু অন্যায় ও ভুল ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন করেছেন। কিন্তু সেগুলো সংশোধনের পরিবর্তে যদি আবার একটি অচল পদ্ধতিকে সচল করি তাহলে অপরিমেয় ক্ষতির সম্ভাবনাই আছে। ভিন্ন মত পোষণের জন্য যদি কোন উপাচার্য কাউকে নিপীড়ন করেন তাহলে অবশ্যই তাঁর বিচার হওয়া উচিত। তাই বলে অকেজো পদ্ধতি পুন:প্রবর্তন করলে বিশ্ববিদ্যালয় ভাল চলবে তা আমি মানতে পারি না।

আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি সেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ছিল সেশন জট মুক্ত। আমি প্রশংসিত হতাম এবং গৌবরে বুক ভরে যেত। আজ সেই ইমেজ আর নেই। শিক্ষকদের ক্ষমতা লিপ্সা সেই প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজকে ধূলিসাৎ করে দিচ্ছে। এজন্য এককভাবে কাউকে দায়ী করা যেমন অযৌক্তিক, তেমনি অপ্রয়োজনীয় উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন। বেতন নেব কিন্তু ক্লাস নেব না- এ কেমন নৈতিকতা? উপাচার্য দোষ করলে ক্লাস নেবনা যুক্তি কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা সাধারণ মানুষের হাতেই ছেড়ে দিতে চাই।

যদি বর্তমান কোন উপাচার্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে জবাবদিহি করতে ব্যর্থ হন, তবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি নতুন কাউকে নিয়োগ দিতে পারেন। কিন্তু প্যানেল নির্বাচন পদ্ধতি সমাধান হতে পারে না। কারণ, প্যানেল নির্বাচন শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত রাজনীতিতে কলঙ্কিত করে। যে ধরণের অভিযোগ বর্তমান উপাচার্যদের বিরুদ্ধে আসছে তেমন অভিযোগ নির্বাচিত উপাচার্যদের বিরুদ্ধেও আছে। প্রতিবাদী ও ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই: বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতন্ত্র ভাল কিছু দিতে পারছে না। ১৫ কোটি মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণে আমাদের শিক্ষকদেরকে আরও দায়িত্বশীল ও সহনশীল হতে হবে।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আপনি জাতির সকল আশা আকাঙ্ক্ষার কেদ্রবিন্দু। আপনার হাতে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। আপনার প্রতি আমাদের আস্থা আছে। আপনিই পারবেন জাতির শিক্ষার আশা পূরণের সকল দ্বার উন্মোচন করে দিতে। আমাদের আশা আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের কার্যক্রম আরও একটু পর্যালোচনা করবেন ও সঠিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বিকশিত হতে সাহায্য করবেন। যদি কোন উপাচার্য কোন বড় অন্যায় করে থাকেন,তবে তাঁকে আপনিই সরিয়ে দেবেন। যদি কোন ভুল তাঁরা করে থাকে আপনি সংশোধন করে দেবেন। কিন্তু গণতন্ত্রের নামে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন শুভ পরিণতি বয়ে আনবে না।

2012/pdf/jR_177352539.pdf[1] ( B) 

Endnotes:
  1. 2012/pdf/jR_177352539.pdf: https://priyoaustralia.com.au/live/wp-content/uploads/files/2012/pdf/jR_177352539.pdf

Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2012/democracy-and-freedom-in-university/