Migration (Ovibashon)

by Afzal Hossain | June 30, 2011 12:33 am

অভিবাসন

বাংলাদেশিদের পরবাসী হওয়ার পেছনে নানা কারণ জড়িয়ে আছে। কারও বেলায় শুধু একটি কারণ, আবার অনেকের বেলায় একাধিক কারণ কাজ করে। সাধারণত এসব কারণের মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক (যেমন দারিদ্র্য থেকে মুক্তি কিংবা উন্নত জীবনের গভীর প্রত্যাশা), নির্যাতন (বিশেষ করে যুদ্ধ, গণহত্যা কিংবা জাতিগত বিভেদ), রাজনৈতিক (যেমন একনায়কতন্ত্র সরকারের হাত থেকে মুক্তি, অথবা ভিন্ন মতের জন্য অযথা ধরপাকড়ের ভয়, এমনকি জেল কিংবা দৈহিক নির্যাতন), ধর্মীয় (অনেক সময় নিজেদের ধর্ম পালন করার বৈরী পরিবেশ), প্রাকৃতিক দুর্যোগ (যেমন বন্যা, ভূমিকম্প, সামুদ্রিক ঝড়-তুফান, জলোচ্ছ্বাস) এবং ব্যক্তিগত (যেমন নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে বসবাস, কখনোবা নিজস্ব অনুভূতি কিংবা ভাবপ্রবণতা)। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, সুশিক্ষার অসুস্থ পরিবেশ, চাকরির অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তা এবং আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, এমনকি চাহিদার অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা অভিবাসনের অন্যতম কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়।

বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তার বিখ্যাত উপন্যাস লাল সালুর মোল্লা মজিদের চরিত্র খুব সুন্দরভাবে চিত্রিত করেছেন। এই মজিদ চরিত্রের মাধ্যমে লেখক খুব সুন্দর এবং সাবলীল ভাষায় তুলে ধরেছেন তত্কালীন পূর্ববাংলার মুসলমান সমাজের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, নিখুঁত কলমে ফুটিয়ে তুলেছেন সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার এক নিটোল ছবি। মজিদের মুখ দিয়ে লেখক বলেছেন, জমিনে ফসল না ফললে দেশের মানুষ দেশান্তরে যায়। নিষ্ফল জমি ফেলে খোঁজে উর্বর এলাকা। এই নিরীহ মানুষদের কোনো পুঁজি নেই। পুঁজি শুধু দেহের শ্রম। তাই তারা সেই শ্রম বিক্রি করে জীবনধারণ করতে চায়। আর শিক্ষা বলতে যা আছে, তাও অচল। কালের বিবর্তনে সেই শিক্ষা বিকশিত হয়নি, ডালপালার মতো ছড়িয়ে পড়েনি খোলা আকাশের গায়ে। তাই মানুষ জমি অনুর্বর আর শিক্ষা অচল-এই দুয়ের শিকার নিরীহ মানুষেরা। এই সাধারণ যেন মানুষেরা চিরকালই নিয়তির অভিশাপে পরাজিত, জর্জরিত নানা সমস্যায়। তাদের জীবনে কোনো আশা নেই, স্বপ্ন নেই, নেই কোনো সাধ-আহ্লাদ। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব সেখানে বাকরুদ্ধ, স্থবির। কোনো রকমে কাটিয়ে দিতে চায় জীবনের বাদবাকি দিনগুলো।

অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বর্তমান রাষ্ট্রদূত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদউদ্দীন চৌধুরী যদি চাকরির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর দেশে ফিরে না যান এবং এ দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমার দেখা বিগত ২৭ বছরে রাজনৈতিক আশ্রয় না হোক, অন্য অনেক উপায়ে ক্যানবেরার বাংলাদেশ দূতাবাসের লোকজন বদলি উপেক্ষা করে কিংবা দেশে ফিরে গিয়ে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে এসে পুনরায় এ দেশে গড়ে তুলেছেন স্থায়ী নিবাস। আমি জানি, অনেক বছর আগে বাংলাদেশ দূতাবাসের তিনজন প্রাক্তন কর্মচারী বদলির আগেই রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে থেকে গেছেন এ দেশে।

দুই.

বাংলাদেশের বেকারত্বের চরম অভিশাপ এবং অপমানের হাত থেকে মুক্তি পেতে অনেক দরিদ্র-মধ্যবিত্ত-ধনী নির্বিশেষে উচ্চশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, এমনকি অশিক্ষিত যুবকরা বিভিন্ন ফন্দি-ফিকির করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান। কম শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত বাংলাদেশিরা সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এবং মালয়েশিয়া, কোরিয়া, জাপানসহ অন্যান্য এশিয়ান দেশে পাড়ি দেন। উচ্চশিক্ষিত বাংলাদেশিরা আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন এবং নিউজিল্যান্ডের মতো উন্নত দেশে প্রবাসী হন। এদের অনেকেই বিদেশে আসেন নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায়। আবার অনেকের প্রবাসে আসার পেছনে রয়েছে বাবা-মা, ভাইবোনসহ আত্মীয়স্বজনের মুখে হাসি ফোটানো। যে কোনো কারণেই হোক, এই অভিবাসীদের, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার অনেক দেশে ছড়িয়ে থাকা অর্ধশিক্ষিত এবং অশিক্ষিত বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করেই টিকে আছে বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতি। অস্বীকার করার উপায় নেই, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির পেছনে এসব প্রবাসী বাংলাদেশির অবদান অনেক।

1st Published[1]

Endnotes:
  1. 1st Published: http://www.shokalerkhabor.com/online/details_news.php?id=8484&&%20page_id=%2015

Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2011/migration-ovibashon/