London: Ditio Bangla

by Nazrul Islam Habibi | November 6, 2010 6:49 pm

লন্ডনঃ দ্বতিীয় বাংলা
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম হাববিী
শব্দ বাক্যের প্রাণ। বাক্য রচনার চোখ। চোখ দিয়ে আমরা যেমন দেখি, একজন লেখক বাক্য দিয়ে বিশ্ব মন্থন করেন। ভাল লেখকের এক একটি পুর্ণাঙ্গ রচনা জীবন-জগতের সঞ্জীবনী শক্তি মতো। মানুষ ভাত না পেলে মরে না, মরে অশিক্ষায় এবং কুশিক্ষায়। বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা গণতন্ত্র বা ভাতে নয়, বাংলাদেশের কষ্ট শিক্ষার অভাব। তাই বাংলাদেশের নবনির্বাচিত সরকারকে বলি, বক্তৃতার আগে ভাত দিন, ভাতের জন্য শিক্ষা চাই, তারপর বলুন ঘনমন্ত্র বা গণতন্ত্রের মহীমা।
হ্যাঁ, খাদ্য আমাদের পুষ্টি যোগালেও প্রাণের ঐশ্বর্য বিহীন অস্তি¡ত্বে তার আবেদন নিরস ও নিছক ভূরিভোজতূল্য। এই নিরসকে সরস করে বই। বই যোগায় সাহস। বইতে ভিটামিন থাকে, পাতায় পাতায় প্র“টিন থাকে। লাঞ্চিত জনপদে, বঞ্চিত সমাজে বই এবং পত্রিকা বজ্রনকীব হয়ে, আলোর দিশা বা দর্শন হয়ে ধরণীকে ধরে তুলে। তাই স্বৈরশাসকের কাছে লেখক, সাংবাদিকরা প্রিয়জন নন।
বই এর আবেদন স্থায়ী হলেও পত্রিকার চোখ আরো তীক্ষ্ম-সূচাঁলো। পত্রিকা আমাদের নিত্যকার চোখ-সদা সহচর। দৈনন্দিন জীবনের অবলম্বন। প্রতিদিন খবরের কাগজ আমাদের বলে দেয় রাষ্ট্রতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে শুরু করে, রাঁধুনীর মরিচ-লবনের পরিমাণ, এমনকি কাঁথা সেলাই এর সূচঁটির কথাও। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে, প্রকাশনার বিচারে লন্ডন এখন কলিকাতার দিশারী।

কলিকাতা নয়, লন্ডন
বাংলাদেশের পরে লন্ডন স্থান করে নিল বাংলা সাহিত্য এবং ভাষার দ্বিতীয় প্রধান পবিত্র ভূমিতে। অনেকে বলেন, কলিকাতা বাংলা সাহিত্যের দ্বিতীয় চারণভূমি। সবিনয়ে বলি, তা তাঁদের পারিপার্শ্বিক সহজলভ্যতায় সম্ভব হয়েছে।- একান্ত নিজস্বতায় নয়। ভৌগলিক অবস্থান, নাগরিক সুৃবিধার কারণে তা হয়ে ওঠে অনেকটা লঘুক্লেশে। খোলাছা করে বলি, কলিকাতায় বাংলাভাষার বীজ, পানি, সার এবং শ্রমিক আছে বিপুল পরিমাণে। জমিদার আছে, ভুমিদার আছে, শক্তিশালী কলম আছে, বিরাট জন গোষ্টির সমর্থন আছে, প্রেস আছে, সহজলভ্য কাগজ আছে, পাঠক আছেÑ কোন বিষয়ে পিছু টান নেই।
লন্ডনের চিত্র সম্পূর্ণ তার বিপরীত। এটি আমাদের দেশ নয়। আমাদের পিছু টান আছে। মা, বাবা, ভাই, বন্ধু, ছেলে-মেয়ে, মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা,কেয়াং নিয়ে ভাবতে হয়। তাদের জন্য টাকা-পয়সা পাঠাতে হয়। যে যেখানেই থাকুননা কেন, তার সে বিশালত্ব,বিরাটত্ব তাঁেক ছেপে দিয়েছে বড় বড় দায়িত্ব এবং কর্তব্য।
মনে করুন, কোন একজন কয়েকটি প্লেইনের মালিক। শুনতে বিশাল বিষয়। কিন্তু তিনি জানেন, রাত কয়টায় তিনি ঘুমাতে যান, সকাল কয়টায় তাঁকে জাগতে হয়।
আসলে তিনি ঘুমাতে পারেন না। তাঁকে ঘামতে হয়। দেশে বিদেশে তাঁর কর্তব্য অপার। তিনি ঘুমালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত কলেজ চালাবে কে? এতিমখানাটি চলবে কী ভাবে?
দ্বিতীয়ত: এদেশে শ্রমিক সহজপ্রাপ্য নয়। আমরা স্টাফরে বতেন দইি ঘন্টা প্রতি পাউন্ডের হসিাব।ে

পত্রিকা পাঠকের প্রকারভেদ রহস্য
তৃতীয়ত: এ দেশে পাঠকের সংখ্যা কত তা আপনি হাতে গুণে নিতে পারবেন। ইংল্যান্ডে যত জন বাঙ্গালী আছেন তত জন বাংলা পত্রিকার পাঠক নেই। কেউ পুরো ইংরেজ, কেউ বা আধা ইংরেজ (বাংলিশ)। কারো ইংরেজী নিয়ে যেমন মাথা ব্যথা কম, তেমনি বাংলাতেও অভ্যস্থ নন। এক শ্রেণীর মানুষ আবার বাংলায় কথা বার্তা বলাকে হীনতা মনে করেন। রাড রয়। নাপিতের ভদ্রজনোচিত নাম ‘শীল’ লন্ডনে এসে হয়ে গেলেন ‘শেল’। শামসুদ্দনি হয়ে গছেে ‘সাম’।একজনকে চিনি যিনি নিজেকে বাংলাদেশী বলতেও রাজী নন। এক শ্রেণীর লোক ভাল বাংলা জানেন, বুঝেন এবং বলতে পারেন, কিন্তু তাঁরা বাংলা পত্রিকা পড়ার সময় পান না।

পত্রিকা পাঠকের মধ্যে কিছু মজাদার পাঠকের সন্ধান পাাবেন, যেমন- কেউ পড়েন ধার করে, কেউ পড়েন অন্যেরা যখন পড়েন তখন সুযোগ বুঝে জিরাপের মত গলা উঁচিয়ে, কেউ পড়েন নিজের ছবি, সংবাদ বা লেখাটি ছাপা হয়েছে বলে, কেউ বা অপেক্ষায় থাকেন জুমাবারের ফ্রি সংখ্যার জন্য, কেউ পড়েন শুনে শুনে। মানে তিনি পত্রিকা কিনেন না, ফোনের মাধ্যমে একান্ত কোন আপনজন থেকে জেনে নেন সপ্তাহের শিরোনামগুলি। কেউ ফোনের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনকে সম্ভাব্যগুরুত্বপূর্ণ সংবাদটি জানিতে দিতে বখিলি করেন না, তার এ মহান সেবার মতলব আছে; তিনি ব্যবসায়ি। নিউজ দেবার নামে স্মরণ করিয়ে দেন যে, ‘আমার কাছে আইসেন’। কেউ পড়েন (উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে) কোন দোকানে গিয়ে। এক শ্রেণীর লোক আছেন যারা পত্রিকা না কিনে, না পড়েও পত্রিকার খবর রাখেন- তাঁরা নেতা। খবর আসে কর্মী থেকে। পত্রকিার সম্পাদক বা পত্রিকায় কাজ করেন অথচ তিনি পত্রিকা পড়ে দেখেন না নিয়মিত। আবার অনকেে পড়ওে না পড়ার ভাব দখোন। প্রমাণ করতে চান ‘ব্যস্ত মানুষ’।
কতিপয় ষ্টাফ বা মালিক শুধুমাত্র তার লেখা বা ছবিটিই স্ত্রী-পুত্রের হাতে তুলে দিয়ে সান্ত্বনা খোঁজেন।

ইতিহাসের ঐতিহ্য
এ সবের মধ্যে এমন কতিপয় মানুষ আছেন যাঁরা ইংরেজী বাংলায় সমান পারদর্শী। এই এঁরাই লন্ডনে বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যের চাষাবাদ করছেন। হাজারো লাভ জনক ব্যবসার ভীড়ে পত্রিকাকে বেছে নিয়েছেন আমাদের দেশজ, লোকজ ও বঙ্গজ সংস্কৃতি, সাহিত্য এবং শব্দকে ভালবেসে। বিজ্ঞাপনদাতা, লেখক, পাঠক, কাগজের মূল্য, আনুসাঙ্গিক শত সমস্যার মধ্যেও ৬টি বাংলাদেশী ২৪ ঘন্টা ফ্রি টিভি চ্যানেল, রডেওি, র্অধশত দনৈকি, সাপ্তাহিক,মাসিক, সাম্মাষিক ও বার্ষিক এই লন্ডন থেকে বেরুয়- এ এক অকল্পনীয় এবং বিস্ময়কর বিষয়। প্রাণ আছে বলেই তা সম্ভব হচ্ছে এবং তা হয়ে উঠছে একমাত্র বাংলাদেশীদের স্পর্শে।
কলিকাতার সাহিত্য যত পুরাতন, তত বিপ্লবমুখি নয়। বর্হিবিশ্বে কলকাতার বই প্রচারের লোক আছেন। আছে তাঁদের একান্ত খয়ের খা, এজেন্ট, সরকারী লাইব্রেরীতে আছে ইন্ডিয়ান স্টাফ, এরাই এ সব ম্যানেজ করেন। একটি ইন্ডিয়ান লেখকের বই যত দ্রুত বৃটিশ লাইব্রেরীতে প্রবেশাধিকার পায়, বাংলাদেশীদের বেলায় তা ঘটে না। বিক্রি তো দূরের কথা, সৌজন্য কপি দিলেও নেয় না, নিলেও পড়ে থাকবে যুগ যুগ পচাঁ গুদামে। কারণ, আপনি বাংলাদেশী। আমি একটি লাইব্ররেতিে দুইবার সৌজন্য দয়িে রপর্িোট এসছেে ‘পাই ন’ি।বৃটিশ লাইব্রেরীতে বাংলাদেশী ষ্টাফ আছে হাতে গোনা। যারা আছেন তারা আপনাকে কোন প্রকার সহায়তা দেবেন না, কিংবা তিনি বই নিতে চাইলেও পারেন না, কারণ, তার ‘বস’ ভারতীয়। মজার কথা হচ্ছ,ে তারা কনিে নতিে রাজী, ফ্রি নতিে শ্রী নষ্ট ভাব।
তাই বলছিলাম, কলিকাতার বই মানে বাংলা সাহিত্যের বিপ্লব নয়। এ বিপ্লব ঘটিয়ে চলছেন বাংলাদেশীরা-এই লন্ডন প্রবাসীরা। তাই লন্ডনকে বাংলা সাহিত্য চর্চার দ্বিতীয় পাদপ্রদীপ বলে আখ্যায়িত করলে অতি-উক্তি হবে না বলে আমার বিশ্বাস।

আমি এবং ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা
লন্ডনে আসার পর থেকে ম্যাগাজিন, পত্রিকায় আমার টুটা-ফাটা লেখা প্রকাশ পেয়ে আসছে। অধুনালুপ্ত ‘আলোর পথ’ এ আমি সাহিত্য পাতা দেখতাম। ইউরো বাংলার বীজ বপনের দিন আমিও ছিলাম। সাহিত্যিকের পোশাকে মিটিং, টিটিং, সভা-সমাবেশও ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মত মাঝে-মধ্যে লাফালাফি করার সুযোগ হয়। কিছু সভার নিমন্ত্রন না পেয়েও টাই, চশমা পরে উপস্থিত হই এবং আগের কাতারে বসার সুযোগ খুঁজি। তারপর বক্তা হিসেবে গণ্য হবার জন্য হন্য হয়ে ‘করুণ’ চোখে চেয়ে থাকি উপস্থাপকের দিকে। যখন সুযোগ পাই তখন এমন সব কথা বলি যা শুনে ডান কাঁধের ফেরেস্তাও ঘুমিয়ে পড়েন। শেল বর্ষী দীর্ঘ ভাষন,-জ্বালাময়ী কথা এবং বাংলা সাহিত্যের বারটা। উপস্থাপক চিঠি দেন ‘সময় শেষ’। কিন্তু না, প্রশান্ত মহাসাগরের অশান্ত ঊর্মিমালা থামবার নয়।
১৭.০১ ‘১০, লন্ডন।

Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2010/london-ditio-bangla/