by Nazrul Islam Habibi | August 21, 2010 8:26 pm
ভাষা নিয়ে যত কথা
মেস্কিকোতে ‘জক’ (Zoque) নামে একটি ভাষা ছিল। পৃথিবীতে মাত্র দুজন লোক এ ভাষায় কথা বলত। মজার কথা হচ্ছে, তারা উভয়েই ছিল সত্তর বছর বয়স্ক। এবং তারা একে অপরকে পছন্দ করতো না, কথা বলা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। যার কারণে এ ভাষা আর সমাজে প্রকাশ পাবার সুযোগ পায়নি।
২০০০ সালের হিসাব মতে, উপভাষা ছাড়া পৃথিবীতে সর্বমোট সাত হাজার ভাষা আছে। যথাক্রমে মানডারিন (Mandarin), ইংরেজি, ও স্পেনিশ ভাষায় বেশী মানুষ কথা বলে । রাশিয়া বিশ্বের বড় দেশ হলেও মাত্র একশত পয়তাল্লিশ মিলিয়ন মানুষ রুশ ভাষায় কথা বলে, বাকীরা বলে ইংরেজিতে।
জার্মানরা কখনো দীর্ঘ একটি বাক্যকে একটি শব্দে ব্যবহার করে থাকে। আমাদের বাক্য সংকোচনের মত প্রায়। যেমন, ‘ফেভারিট ব্রেক টাইম সান্ডউইচ’ (Favourite break-time sandwich) এর এক কথায় প্রকাশ করতে গিয়ে তারা বলে,‘লাবিলিংস্পাউনব্রট’ (Lieblingspausenbrot)। শব্দটি উচ্চারণ করতে আপনার নি:শ্বাস বন্ধ হবার মত অবস্থা নয় কি?
রোমানিয়ান শব্দধ্বনী ফ্রান্স এবং স্পেনিশ শব্দধ্বনীর মত। এর কারণ হল, ওয়েস্টার্ণ ইউরোপে একমাত্র রোমানীয়ানরাই প্রকৃত ল্যাটিন ভাষায় কখা বলে থাকে।
উচ্চারণ ভেদে তিন রকমের তিনটি ‘জেট’( ত) সহ পোলিশদের বর্ণমালা ৩২টি।অর্থাৎ, একটি বর্ণের নাম জেট। কিন্তু লেখা হয় তিন ভাবে।
লাওস একটি দেশের নাম।এটি আমাদের এশিয়ায়। ভাষার নাম ‘লাও’। (না, বাংলাদেশের ‘সাধের লাউ’ নয় কিন্তু!) এ ভাষায় কোন এস (ঝ) নেই। সে জন্য তারা তাদের দেশ লাওসকে বলে ‘লাও’। দেশটির স্বার্থে একটি এস বর্ণ তারা সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু করবে না। কারণ, আগে ছিল না, এখন থাকবে কেন?
জাম্বিয়ায় ‘লুজি’( খুঁর) নামে একটি উপভাষা আছে। তারা উইম্যান বুঝাবার জন্য কমপক্ষে চল্লিশটির মত শব্দ ব্যবহার করে থাকে। জীবনের এক একটি স্তরের জন্য তারা নতুন নতুন শব্দ বেছে নেয়। আমাদের দেশে যেমন আছে, কিশোরী, তরুণী, যুবতী, বৃদ্ধা, বিবাহ হলে কারো স্ত্রী, কারো ঘরের বউ সেরকম আর কি!
মালেশিয়ার প্রকৃত ভূ-স্বামীকে বলা হয় ‘মালে’। এই মালে ভাষায় কোন বহু বচনের বিধান নেই। তারা একটি শব্দকে বহু বা একাধিক বুঝাবার জন্য প্রয়োজনীয় শব্দটিকে বার বার বলতে থাকেন। যেমন মালে ভাষায় মানুষ লাকী (Laki) । তাই অনেক মানুষ বুঝাবার জন্য বলা হয় লাকী-লাকী (Laki Laki).
বলা বাহুল্য, আমাদের দেশে অনেক মেয়ের নাম আছে লাকি। তাদের বানান হবে লাকি (Lucy) । কারণ, তারা ভাগ্যবতী।
লন্ডনে আমার প্রতিবেশীদের একজন জাপনিজ। তারা যখন কথা বলেন তখন আর ‘কান পেতে রই ’এর অবস্থা থাকে না। তাদের ভাষা মনে হবে যেন তাল লয় হীন। মজার বিষয় হচ্ছে, একটি পরিচিত শব্দকেও তারা বানানে এবং উচ্চারণে পরিবর্তন আনে। ইংরেজিতে কুকুরের ডাক উফ উফ (Woof Woof). এই হুংকার ধ্বনীময় শব্দটিকে তারা উচ্চারণ করে, ‘ওয়ান ওয়ান’ (Wan Wan)। তাদের উচ্চারণে এন (ঘ) থাকে না বিধায়, আপনার মনে হবে কোথায় যেন বাচ্চারা কাঁদছে! পাঠদের কানে কানে বলি, ইংরেজিতে ওয়ান শব্দের অর্থ অসুস্থ, দুর্বল। হতে পারে , তারা কুকুরকে দুর্বল ভাবে।
একশত জনেরও কম সংখ্যক মানুষ কথা বলে এ রকম আফ্রিকায় কিছু ভাষা ছলি। একদিন এ ভাষার ইতিহাস এবং ঐতিহ্য ছিল। এই ভাষার আলোকবর্তিকায় প্রজ্জ্বলিত হলেছিল পৃথিবীর অনেক ভাষাও। বিভিন্ন ভাষার
বিস্তারে এবং প্রতাপে সেই ভাষার অস্তিস্থ এখন আর নেই। মিউজিয়ামে কিছু কাগজ পত্র পাওয়া যায় এই যা।
অর্ধেকের মত জার্মান ভাল ইংরেজি বলতে পারে। শতকরা মাত্র তিন ভাগ মানুষ ফ্রেন্স ভাষায় কথা বলে।
আমরা হা বুঝাবার জন্য মাথাকে উপরে নিচে ঘুরাই, না বলার জন্য ঘুরাই ডানে বামে। কিন্তু বুলগেরিয়ানরা করে তার বিপরীত। তারা না বলতে মাথাকে করে উপরে নিচে, আর হা বুঝাতে ঘুরায় ডানে বামে!
ইউরোপে বৃদ্ধাঙ্গুলকে উপরে তুলে ধরলে অর্থ হয় ধন্যবাদ, খুব ভাল, সুন্দর হয়েছে, আপনি ভাল মানুষ ইত্যাদি। আর এই কাজটি যদি আমি বাংরাদেশে করি আমার কি অবস্থা হবে তা আপনারা আমার চেয়ে ভাল জানেন। তবে সৌভাগ্যের কথা হচ্ছে, আমার পিঠের অবস্থান সম্পর্কে ওরা জানবে না!
আনন্দ এবং বিজয় বুঝাবার জন্য আমরা দুই আঙ্গুলেরপৃষ্ঠ প্রদর্শন করি। ইউরোপে দেখানো হয় আঙ্গুলের সামনের ভাগ। তাই সম্ভবতঃ গ্রাম বাংলার প্রবাদে বলে, ‘যে দেশে যে বাও (বাতাস), নৌকা মাথায় সাম্পান বাও’ (চলাও)।
আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ মারিশাসে অনেক রকমের ভাষা চোখে পড়ে। একই ব্যক্তি ঘরে কথা বলে বুজপুরীতে, একটু বাইরে কোন কাজের তদারকীতে ফ্রেন্স, অফিস-আদালতে ইংরেজি এবং বন্ধুদের সাথে ক্রওেল (Creole) ভাষায়। বলাবাহুল্য, ক্রিউই হল এমন একটি ভাষার নাম যা অনেকগুলি প্রকৃত ইউরোপিয়ান ভাষার সংমিশ্রণে সৃষ্ট। বর্তমান বিশ্বে একমাত্র ক্যারেবিয়ানরাই এই ভাষায় কথা বলে। অবশ্য, কখনো ওয়েস্ট ইন্ডিজদের বুঝাবার জন্যও শব্দটির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
বৃটেনের স্কুলে দ্বিতীয় ভাষা বাধ্যতামূলক। এরপরও টিন এজরা অন্য ভাষার প্রতি তেমন আগ্রহী নয়। সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে , বৃটেনে দ্বিতীয় ভাষার প্রতি আগ্রহীর হার মাত্র ০.৬ ভাগ। অপরদিকে ইউরোপের অন্যান্য টিন এজদের হার হল ১.৪।
যখন বিশ্বে চলছে বর্ণ সংকোচন এবং ভাষাকে সহজি করণের প্রচেষ্টা, ঠিক তখনই কম্বোডিনরা ঘোষনা দিল তাদের বর্ণমালা ৭২টি। অবশ্য ভয় পাবার কিছু নেই। কারণ, অতগুলি বর্ণমালার মালা শিক্ষক নিজেও গাথঁতে পারে না সহজে।
সিরিয়ার ‘মা লাওলা’ শহরের অধিবাসিরা এখনো এরামেটিক ভাষায় কথা বলে। শোনা যায়, এ ভাষায় যিশু একদা কথা বলতেন।
(লেখাটি রচনায় মিচেল সাইমনস এর ‘হোয়াই ইউ নিট এ পাসপোর্ট’ নামক বইটি থেকে খানিকটা সহায়তা নিয়েছি)।
১০.০৮.’১০ লন্ডন। Sagasahara@hotmail.com[1]
Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2010/bhasha-niye-joto-kotha/
Copyright ©2024 PriyoAustralia.com.au unless otherwise noted.