by Dilruba Shahana | August 10, 2010 5:12 am
আল্লাহ্ কোথায় নেই বলতো? – দিলরুবা শাহানা
এইতো জুলাইয়ের ১৬(২০১০সালে) তারিখের খবর পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়ার মানুষ সৌদী আরবের কাবামুখী নয় আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া ও কেনিয়ার দিকে সেজদা দিয়ে নামাজ পড়ছেন ভুল নির্দেশনা পেয়ে। এখন ধর্মীয় উপদেষ্টারা সঠিক দিক ঠিক করে দিয়েছেন। জাকার্তা থেকে বার্তাসংস্থা রয়টার জানাচ্ছে যে ইন্দোনেশীয় ধর্মীয় নেতা রিদওয়ান বলেছেন “Muslims need not fear that their prayers have been wasted because they were facing the wrong way”
“Their prayers will still be heard by Allah,”
মানুষ যখন সততা ও নিষ্ঠার সাথে বিনম্র প্রার্থনায় নত হয় আল্লাহ্ শুনবেনই এই হচ্ছে সার কথা।
আমরা আমাদের দেশে বরাবরই পশ্চিমে সেজদা দিয়ে নামাজ আদায় করি। মোটামুটী ভাবা হয় যে পশ্চিমে আল্লাহ্ র ঘর সুতরাং ওইদিকেই বিনম্র প্রার্থনায় মাথা ভূমি স্পর্শ করবে। অন্যদিকে সেজদা দেওয়া গর্হীত বলেই গণ্য।
প্রথম বিদেশ যাওয়া যখন থেকে শুরু হল তখন কম বয়সের অনুসন্ধিৎসার অনিচ্ছা ও অজ্ঞতার কারনে পশ্চিমমুখী হয়ে নামাজ পড়াই সহীহ্ ভেবেছি। নিজেও ঐ সময়ে পড়েছি মাঝে মাঝে। তারপর সময় রথ চলে অবিরত। বয়সও বাড়লো আরেকটু। ইউরোপের আরেক দেশে দেখলাম জায়নামাজে কম্পাস লাগানো। চীনের মানুষেরা ঈসাহ্আল্লাইসাল্লাম(যীশু) ও মোহাম্মদ(সাঃ) জন্মের বহু আগে আবিস্কার করেছিল কম্পাস তা দেখে কাবার অবস্হান নির্ধারন করে ইউরোপের ঐদেশে মুসলমানরা সেজদা কোনদিকে দেবেন ঠিক করেন। ওইদেশ থেকে কাবাশরীফ পশ্চিমে নয় সুতরাং পশ্চিম দিকে সেজদা দেওয়া ঠিক হবেনা। আসলে পশ্চিমমুখী নয় কাবামুখী নামাজ পড়া সহীহ্। বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমমুখী সেজদা ঠিক হলেও অন্যদেশ থেকে তা ঠিক নাও হতে পারে। এরপরে মাঝে মাঝে ভীত হতাম যে ভেবে কোন এককালে অজ্ঞতাবশতঃ ভুল দিকে নামাজ পড়ার জন্য অল্লাহ্পাক কি এখনও নারাজ হয়ে আছেন।
আমার এক সমমনা বান্ধবীর সাথে ইন্দোনেশীয় মুসলমানদের বিভ্রান্তির কথা আলোচনা করছিলাম। তার কাছে জানলাম তার ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া দিকভ্রান্তির গল্প। জীবনে প্রথমবার বগুড়া নাকি পাবনায় মায়ের সঙ্গে গিয়েছিল অসুস্হ’ খালাকে দেখতে। পৌঁছানোর পরই নামাজের সময় হয়েছিল। সে ঢাকাতে যে দিকে সেজদা দিতো ঐখানেও ওইদিক আন্দাজ করে নামাজ আদায় করলো। পরে যখন জানলো ঐদিকে পশ্চিম নয় মন খারাপ হয়েছিল, ভয় হয়তো পেয়েছিল ছোট্ট মানুষটি। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ভ্রান্তি আর বে’আদাত উঁনিই বুঝবেন।
শুনা ঘটনা মনে পড়লো তাই বর্নিত হচ্ছে এখানে। ভিন্দেশ থেকে এক সুফী বুজর্গ কবিব্যক্তি মক্কাতে পৌঁছালেন। কাবা দেখে বিস্ময়ে বিভোর। ঘুমিয়ে পড়লেন একসময়ে কাবা প্রাঙ্গনে। বুজর্গ ব্যক্তির ঘুম ভাঙ্গলো একব্যক্তির ধাক্কাধাক্কি, চিল্লাচিল্লিতে।
‘এই এই উঠ, বেয়াদব বেকুফ তুমি আল্লাহ্র ঘরের দিকে পা দিয়ে শুয়ে আছো’
বুজর্গ অর্ধনিমিলিত চোখে তাকালেন তারপর বিনয়ের সাথে আরজ করলেন
‘ আল্লাহ্ কোথায় নেই বলতো?’
লোকটি বুজর্গের কথায় ভীতসন্ত্রস্ত হল। আল্লাহ্ অমুক অমুক জায়গায় আছেন আর তমুক তমুক জায়গায় নেই একথা কেউ বলতে পারবে কি? কখখনো না। আছেন সব জায়গায়, সবখানে। এবার বুজর্গ বললেন
‘পা দু’টো তা হলে ঐ দিকেই রাখতাম।’
মূর্খ হল্লাচিল্লা করনেওয়ালা অধোবদনে সরে গেল। বুজর্গ জ্ঞানী সৎ ব্যক্তিরা সবখানেই আল্লাহকে পান আর মূর্খেরা পশ্চিমে ছোটেও কি কিছু পান?
এবারের ঘটনা অভিবাসী আখ্যান। যারা অভিবাসী তারা যে যে বিষয়ে বড় কাতর থাকেন তারমাঝে দু’টো হল ধর্ম আর ভাষা।
ধর্ম শিখতে আরবী স্কুলে বাচ্চাদের পাঠানো হয়। তারা আরবী বর্ণমালা শেখে, চার কলেমা, ঈমানে মুজমাল, ঈমানে মুফাস্সল ইত্যাদি ঝরঝর মুখস্থ করে। ধর্মের মূলকথা কতদূর বুঝেছে বা ধারন করেছে তা শুনার বা জানার সময় ব্যস্ত মা-বাবার হয়না।
একবার এক ধর্মশিক্ষা কেন্দ্রে যায় ছোট্ট একটি ছেলের সাথে কথা হচ্ছিল। সেও আরবী ভাষায় সুরা শিখেছে জানলাম। তবে অবোধ্য আরবীভাষায় সুরা মুখস্ত’ ছাড়াও তাদের লেবানীজ বা সোমালীয় শিক্ষিকা গল্পচ্ছলে তাদের অন্তরে গেঁথে দিয়েছিলেন এইবোধ যে আল্লাহ্ আছেন সবখানে, জানেন সবকিছু। কোন পাপ, কোন পূণ্য তার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা যায় না।
ছোট্টছেলেটি যে গল্প আমাকে ইংরেজীতে বলেছিল তা এখানে বাংলায় তুলে ধরা হচ্ছে। ছোট্ট দু’টি শিশুকে দু’টো ডোনাট হাতে দিয়ে বলা হল যে
‘কেউ যেন দেখতে না পায় এমন জায়গায় গিয়ে লুকিয়ে খেয়ে এসো’।
একজন ডোনাট খেয়ে ফিরে এলো আরেকজন ডোনাট নিয়ে ফিরে এলো।
‘কোথায় লুকিয়ে খেতে পারলে বলতো?’
সে বললো ঘরের দরজা বন্ধ করে খেয়েছে কেউ তাকে দেখেনি।
অন্য শিশুকে জিজ্ঞেস করা হল
‘আর তুমি কেন খাও নি?’
লুকিয়ে ছিল মানুষজন কেউ তাকে দেখতেও পায়নি কিন্তু আল্লাহ্ আছেন সবসময়, সব জায়গায় তার কাছ থেকে লুকানো যায় না তাই লুকিয়ে ডোনাট খেতে পারলো না সে।
যারা শুধু পশ্চিমে বা কাবা ঘরে আল্লাহ আছেন ভাবেন তারা অন্য জায়গায় অন্যায় করলে সে বার্তা পৌঁছবেনা নিশ্চিত বা অন্য জায়গায় প্রার্থনা করলে আল্লাহ্ যদি না শুনেন ভেবে শংকিত ঐ শিশুর কাছে তাদের অনেক কিছু বোঝার, জানার ও শেখার আছে। নয় কি?
Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2010/a-dilruba-shahana-article-allah-kothay-nei-bolota/
Copyright ©2024 PriyoAustralia.com.au unless otherwise noted.