মানবাধিকারের মহাপুরুষ হে মহান শেখ মুজিবর রহমান -ফরিদ আহমেদ

by Farid Ahmed | August 12, 2009 6:25 pm

মানবাধিকারের মহাপুরুষ শেখ মুজিবর রহমান আজ বঙ্গবন্ধু সম্মানে ভূষিত ও জাতির জনকের আসনে অধিষ্ঠিত হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী।

যদি আজ রবীন্দ্রনাথ বা নজরুল থাকতেন

লিখে ফেলতেন কয়েকখানি মহাকাব্য

আপনাকে নিয়ে,

আপনার স্মরণে।

যদি আজ নেপলিয়ান, লিংকন বা ওয়াশিংটন থাকতেন

তবে তাঁরা শোকবার্তা পাঠাতেন

আপনার মহাপ্রয়াণের দিনে।

যদি আলেকজান্ডার, নেহেরু, বা গান্ধি থাকতেন

তবে এই দিনে নিজ নিজ জাতিকে

মানব প্রেমেরে প্রতীক হিসেবে

আপনার কথা বলতেন।

যদি জীবানন্দ বা মধুসুদন ফিরে আসতেন

ফুলেল শুভেচ্ছা আর কবিতা পাঠাতেন

আপনার সমাধিতে।

যদি ফিরে আসতেন সিরাজদৌলা

বাংলা রাজ মুকুট তুলে দিতে

তিনি মোটেও কুন্ঠিত হতেন না।

যখন যিশুখৃস্ট ফিরে আসবেন

কোন বাঙালীর দেখা পেলে

তিনি আপনার মহানুভাবতাকে শ্রদ্ধা জানাবেন।

বঙ্গবন্ধু আপনি ফিরে আসবেন কি?

আমরা অনেকেই আপনাকে ভুলে গেছি-

আপনি কি আবার জেগে ঊঠবেন?

সেই আগের মত বজ্জ্রকন্ঠে: এবারের সংগ্রাম…

বঙ্গবন্ধু আমরা অপেক্ষায় আছি।

এই মহান নেতার সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি আমার বাবার কাছ থেকে। তিনিই বলেছিলেন শেখ সাহেব দেশ স্বাধীন করতে চান। আর তাই দেশের মানুষ সংগ্রাম করছে। এই আন্দোলনের কথা গানের মধ্যদিয়ে সবার মুখে মুখে ফেরে। একদিন স্কুল টিফিন সময়ে বাইরে বের হয়ে দেখি আমাদের বড় ভাইরা গাইছেন: আন্দোলনে যোগ দেব সবাই। তাদের সেই গান আজও আমার স্মৃতির পটে ভেসে ওঠে। সাধুর নারকেল গাছের তলায় আমার বড়ভাইরা এই গান গাইছেন। এরপর দেখি আমার বোনেরা টেইলর্সে যাচ্ছেন। সময় মার্চ ১৯৭১। তারা ফিরে এলেন একটি লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে যার উপর বাংলাদেশের মানচিত্র খঁচিত। আমাকে দিলেন সেটি বাঁশের মাথায় উড়িয়ে দিতে। এরপর দেখলাম শহরের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই উড়ছে আমার প্রাণের পতাকা। এরপর এল সেই সকাল। রেডিও বাংলাদেশের ইথারে ভেসে এল আমাদের প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধুর কন্ঠস্বর: এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। দেশের প্রায় সকল মানুষ নিজেদেরকে স্বাধীন ঘোষণা করে ফেলেছে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আমাদেরকে নিশ্চিত করলো: আমরা পতাকা উড়িয়ে ভুল করিনি। এরপর শুরু হল যুদ্ধ। গণহারে মানুষ মারছে, পুড়িয়ে দিচ্ছে বাড়িঘর। সবাই দিশেহারা। এরপর সবাই শহর ছেড়ে গ্রামে পালাতে শুরু করলো। কিছু দিনের মধ্যে এল শান্তি কমিটি। তাঁরা চাইলেন সহযোগিতার মধ্যদিয়ে আগে জানমালের নিরাপওা নিশ্চিত করতে। এরপর এল নতুন উপসর্গ নকশাল। যখন মুক্তিযোদ্ধারা আবার ফিরে আসতে শুরু করলেন তখন দেখলাম রাজাকার! রাইফেল হাতে পাকিস্তানীদের পাহারা দিচ্ছে।

তারাপর এল সেই মহেন্দ্রক্ষণ। আমরা স্বাধীনতা পেলাম। এরপর বঙ্গবন্ধু মুক্ত হয়ে দেশে ফিরলেন। সারা শহরে গুলি আর গুলির শব্দ। বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানালো মুক্তিযোদ্ধারা। হট্ৎা করে যেন বদলে গেল সব কিছু। জম্ম নিল জাসদের। ওরাই সেদিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জ্বিবিত ছিল। কেন বদলে গেল ওরা! দেশ যেখানে ধংসস্তুপের উপর তখন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনৈতিক পাল্লা! দেশের মানুষের এই বিভাজন, নকশালসহ বিভিন্ন সশস্ত্র সংগ্রামী শক্তিগুলি মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত শক্তি বিনষ্ট হতে শুরু হল। আর সেই সুত্রধরে পরাজিত রাজাকার ও তাদের দোসরা এল সামনে। ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ মানবাধিকারের মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হল। তখন ওই রাজাকাররা বলতো শেখ মুজিব রাজতন্ত্র কায়েম করতে চেয়েছিল তাই তাকে শেষ করে দেওয়া হয়েছে! তাকে প্রাণে হত্যা করে কি কেবল ওরা শেখ পরিবারকে শেষ করেছে? না তারা একে একে মুক্তিযুদ্ধের সকল চিন্হ শেষ করে ফেলতে উদ্যত হয়েছে।

আর সবচাইতে অবাক বিষয় একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন তাদের দলনেতা । ১৯৭৫-১৯৯৬ এ ২১ বছর কেবল বাঙালী নীরবে কেঁদেছে জাতির জনকের সেই বজ্জ্রকন্ঠকে পূঁজি করে। ১৯৯৬ সালে দেশ যেন আরেকবার স্বাধীনতা পেল। কিন্তু কতিপয় চাটুকারের ভুল সিদ্ধান্ত আবার দেশকে বিভক্ত করে ফেলল। বঙ্গবন্ধুকে আমাদের স্মৃতি থেকে মুছে ফেলার বিভৎস এক উৎসবে মেতে উঠলো রাজাকার ও তাদের দোসররা। আবার শুরু হল আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ। ১২ জানুয়ারী ২০০৭ এর সকালে সবাই ভাবলো এই বুঝি দেশের মানুষ ফিরে পেল তাদের অধিকার। কিন্তু কদিন যেতে না যেতেই শুরু হল আরেক ষড়যন্ত্র। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে দেশে আসতে না দেওয়া, তাকে গ্রেফতার করে প্রহসনের বিচার শুরু করা, বঙ্গবন্ধু নামের ফ্রিগেট ও শেখ হাসিনার কেনা মীগ বসিয়ে রেখে লাইনচ্যুত ট্রেনটিকে আবার ওই রাজাকার ও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরর দোসরা নেচে উঠলো। সেই অপচেষ্টার হোতারা এখন সক্রিয় ও বন্ধুত্ব স্থাপনে অভিনয়ে ব্যস্ত । তেমনি তারা লিপ্ত ষড়যন্ত্রেও। আর তার সাথে যুক্ত হচ্ছে সেই চাটুকারিতা । আবার যেন বাংলার আকাশে শঁকুন ঊড়তে শুরু করেছে। আর সেই শক্তিকে উৎসাহ দিতে দাদাও যুক্ত হয়েছেন! হে বঙ্গবন্ধু, তুমিতো শহীদ ও আল্লাহর রহমতের সিক্ত আমাদের প্রাণের পুরুষ। তুমি কি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলতে পরোনা: আমার প্রিয় দেশকে তুমি শান্তিতে থাকতে দাও। তুমি কি দোয়া করে যাওনি তোমার কন্যারা যাতে কোন ভুল সিদ্ধান্ত না নেয়? হে মহান পুরুষ তুমি ফিরে আস বাঙালীর চেতনায় যাতে আমরা দেশকে তোমার সোনার বাংলায় পরিণত করতে পারি। হে মানবাধিকারের মহাপুরুষ তুমি আমাদের দোয়া কর: আমরা যেন সর্বোচ্চ মানবাধিকার নিশ্চিত করতে পারি। যেন বাংলার ঘরে ঘরে হাসিমাখা মুখ তোমাকে অভিবাদন জানায়। তুমি আমাদের সেই মহাপুরুষ যাকে প্রতিটি বাঙালী হাসিমুখে হাত নেঁড়ে অভিবাদন জানাবে এই পৃথিবীতে যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা যমুনা বহমান ও সেই মাহাজীবনেও যেখানে তুমি হবে মহান আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয়ভাজনদের একজন। হে মহাপুরুষ তুমি শান্তিতে ঘুমাও। আমরা বাঙালীরা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি।

পরিচিতি: সহযোগী অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষক: ন্যায় ও সুশাসন।

Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2009/%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a7%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%b7-%e0%a6%b9%e0%a7%87/