প্যারিসের চিঠি ৬: ওয়াসিম খান পলাশ প্যারিস থেকে

by Washim Khan Polash | September 8, 2008 4:22 am

আইফেল টাওয়ারের নাম কে না শুনেছে। বিশ্বের বিষ্ময় এই টাওয়ারটি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের বুকে মাথা উচু করে দাড়িয়ে বিষ্ময় ছড়াচ্ছে। আজ বিশ্বের প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন এই টাওয়ারটি একটিবারের জন্য স্বচক্ষে দেখা। যারা বিশ্বের শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা করেন বা খোজ রাখেন তদের ড্রয়িং রুমে সুভেণীর হিসেবে একটি আইফেল টাওয়ার সাজানো থাকবেই।

ড্রয়িং রুমে সাজানো একটি আইফেল টাওয়ার আপনার প্রতি অন্যান্যদের ধারনাই পাল্টে দিতে পারে। আইফেল টাওয়ার আজ সবার কাছে একটি প্রাষ্টিজের প্রতীক। যারা নিয়মিত বিদেশ ভ্রমন করেন , ইউরোপে কোন অফিসিয়ান ট্যুরে আসেন তারা একটিবারের জন্য হলেও আইফেল টাওয়ার দেখতে আসেন। একটি ছবি তুলতে ভুল করেননা কখনো।

আমরা অনেকেই টাওয়ারটি তৈরীর পিছনের ইতিহাসটি জানিনা। অনেকেই অনেক ভাবে এর ইতিহাস বলে করে থাকি। কেউ কেউ বলেন ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকী উপলক্ষে সর্ব সাধারনের প্রদশনীর জন্য ফরাসি সরকার টাওয়ারটি তৈরী করেন। এরকম অনেক কথাই প্রচলিত আছে।

১৮৮৬ সালের কোন এক সময় M.Gustave Eiffel পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ফ্রান্স সরকারের শিল্প ও বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে ৩০০ মিটার উচু একটি টাওয়ার নির্মানের সুপারিশ পান। ১৮৮৯ সালে বিশ্ব বানিজ্য মেলায় প্রদশনীর জন্য। M.Gustave Eiffel এর বয়স তখন ৫৫ বছর। ইতিমধ্যে তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান বেশ সুনাম অজন করেছে।

উল্লেখ্য, Gustave Eiffel ১৮৩২ সালের ১৫ই ডিসেমম্বর প্যারিসের অদূরে ডিজন শহরে জন্ম গ্রহন করেন। ১৮৫৫ সালে প্যারিসের কেন্দ্রীয় আটস এন্ড আটস ম্যানুফেকচুরস থেকে Chimie ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর ডিগ্রী লাভ করেন। এর ঠিক এক বছর পর তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন। ঐ প্রতিষ্ঠানটি ঝুকিপুর্ন মাটিতে কনস্ট্রাকশন কাজের জন্য বিশেষ স্পেশালাইজড ছিল। ওই বছরই Gustave Eiffel ফ্রান্সের প্রাদেশিক শহর BordouxGaronne এ দুইটি ব্রীজ তৈরীতে সুপারভাইজার হিসাবে কাজ করেন। তখন Gustave Eiffel এর বয়স মাত্র ২৬ বছর ।এ সময়ে Eiffel কাজে বেশ দক্ষতার পরিচয় দেন এবং নিজেকে গড়ে তুলেন।

তার শিক্ষাগত যোগ্যতা,জ্ঞান, কর্মদক্ষতা ও অভিজ্ঞতা তাকে পরবর্তীতে ৩০০ মিটার টাওয়ার তৈরীতে সহায়তা করে। ৩০০ মিটার টাওয়ারের ধারনাটা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তিনি Statu of Liberty এর ধারনাটি কল্পনায় আনেন। এই পেশায় তার ব্যক্তিগত দক্ষতা ও সফলতার জন্য তার এন্টারপ্রাইজ অল্প সময়েই প্রথম সারিতে চলে আসে।

গুজতাফ আইফেল, টাওয়ারের কাজ শুরুর আগে Méteorologie ; Astronomie ; En aérodynamisme ; Radiotélégraphie এবং পদাথ বিজ্ঞানের ভর ও ওজন নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেন। তিনি টিওয়ারটি তৈরী করতে গিয়ে সবসময় Panama Canel ব্যর্থতার স্মৃতি মাথায় রাখেন।

এরই মধ্যে আইফেল টাওয়ার তৈরীর পরীক্ষা মূলক কাজ শুরু করেন। প্রথমে টাওয়ারটি তিনটি প্লাটফমে তৈরী হয়। ১৮৮৪ সালে টাওয়ারটির ডিজাইন তৈরী করা হয়। পরবর্তীতে ইকোনমি, আটিস্টিক এবং খোলামেলা করার জন্য অরনামেন্টস, কাচের গ্লাস ও কিছু জিনিষ বাদ দেয়া হয়। ১৮৮৭ সালের ২৬ শে জানুয়ারী প্রথম টাওয়ারটির ভিত্তি- প্রস্থর স্থাপন করা হয়। এর পাচ মাস পর কাজ শুরু হয়। টাওয়ারের চারটি পিলারের কাজ প্রথম শুরু করা হয়। মসিও আইফেল সেইন নদী ঘেষে অপূর্ব ও সুবিধাজনক কোন একটি জায়গাতে টাওয়ার তৈরীর পরিকল্পনা নেন এবং বর্তমান জায়গাটি বেছে নেন। সেইন নদীর পাড় ঘেষে দুইটি পিলার এবং শোম দো মার এর দিকে দুইটি পিলার তৈরীর পরিকল্পনা করেন। মাটির নীচে পানির স্তরের ৫ মিটার নীচ থেকে প্রতিটি পিলারের ভিত আরম্ভ হয়। ১৮৮৭ সালের ৩০ শে জুন চারটি পিলারের প্রাথমিক কাজ শেষ হয়। প্রতিটি পিলারই ইস্পাত দিয়ে তৈরী।

টাওয়ারটি তৈরীতে সবচেয়ে গুরুত

্বপুন অনাবিস্কৃত টেকনিকটি ব্যবহার করা হয় চারটি পিলার এবং প্রথম তলা নির্মানে। চারটি পিলারের বেজম্যেন্ট থেকে প্রথমতলা পযন্ত টাওয়ারটির মুল স্তম্ভ। এই টাওয়ারটি নির্মানে প্রায় ৮০০০ টন ইস্পাত ব্যবহার করা হয়েছে। টাওয়ারটিতে যে অসংখ্য পাত লাগানো হয়েছে প্রতিটির দৈঘ্য ৭.৮০ মিটার। প্রথম তলায় উঠানামার জন্য সিড়িও ও লিফটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

প্রথম তলা তৈরীর পর দ্বিতীয় তলা তৈরী করা হয়। দ্বিতীয় তলাতে দর্শনাথীদের জন্য একটি রেস্তোরার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় তলায় চারিপাশ্বে প্রশস্ত জ়ায়গা রাখা হয়েছে, দর্শনার্থিদের চলাচলের জন্য। নিরাপত্তার জন্য চারিদিকে গ্রিলের বেষ্টনি দেয়া হয়েছে। তৃতীয় ও চূড়ন্ত তলায় উঠার জন্য দ্বিতীয় তলাতে এসে লিফট চেঞ্জ করতে হবে।

এরপর শেষ ও তৃতীয় তলা সম্পন্ন হয়। উল্লেখ্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় উঠা নামার জন্য লিফটের ব্যাবস্থা রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য প্রতিটি তলায় মেঝে, সিড়ি ও লিফটে এমনসব মেটাল ব্যবহার করা হয়েছে যাতে করে পিছলে পড়ার সম্ভবনা না থাকে।

১৮৮৯ সালের ১৫ই মে সকাল ১১.৫০ মিনিটে টাওয়ারটির নির্মান কাজ শেষ হয়। Gustave Eiffel এর নামানুসারে টাওয়ারটির নামকরন করা হয় আইফেল টাওয়ার। ইতিহাসের টাওয়ার।

Paris
polashsl@yahoo.fr[1] | ০১-০৯-০৮

Endnotes:
  1. polashsl@yahoo.fr: mailto:polashsl@yahoo.fr

Source URL: https://priyoaustralia.com.au/articles/2008/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%b8%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%9a%e0%a6%bf%e0%a6%a0%e0%a6%bf-%e0%a7%ac-%e0%a6%93%e0%a7%9f%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%ae-%e0%a6%96/